Home Blog Page 2

রসুন কী উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পারে?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে যে রসুন খেলে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার কমে যায়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবীর অর্ধেকটা ঠিক।

Fact Check Rating

দাবি

সোশ্যাল মিডিয়াতে ভ্রান্তিকর পোস্ট অনেক ছড়িয়ে আছে যেখানে বলা হয়েছে যে রসুন খেলে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার কমে যায়। এইরকম একটি পোস্ট এইখানে দেখা যাবে।

সত্যানুন্ধান

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার কী?

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার-কে হাইপার টেনশনও বলা হয়। এটা এমন এক অবস্থা যখন আর্টারির বা ধমনীর দেয়ালের গায়ে রক্তের বেগ ক্রমাগত খুব বেশী মাত্রায় চাপ দেয়, যা পারদের মিলিমিটারে (mmHg) মাপা হয়। স্বাভাবিক ব্লাড প্রেসার মোটামুটি ১২০/৮০ mmHg থাকে, কিন্তু হাইপারটেনশনের রিডিং ধারাবাহিকভাবে ১৩০/৮০ mmHg -এর বেশী থাকে। হার্টের অসুখ, স্ট্রোক এবং কিডনির অসুখে এটা খুব বড় ঝুঁকি বা রিস্ক ফ্যাকটর বলে মনে করা হয়। লাইফস্টাইলের পরিবর্তন ও ওষুধের মাধ্যমে এই সমস্যার সাধারণভাবে মোকাবিলা করা হয়। নিয়মিত নজর করা বা মনিটরিং ও প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবস্থা নেওয়া এক্ষেত্রে জরুরি।

উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা কী?

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে লাইফস্টাইলের পরিবর্তন আর অবশ্যই ওষুধের প্রয়োজন। লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, মদ বা অ্যালকোহলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ এবং ধূমপান ছেড়ে দেওয়া। ওষুধের মধ্যে ডায়ুরেটিক্স, বিটা-ব্লকার ও অন্যান্য ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। সারা জীবন ধরে কার্যকরভাবে এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং পরিকল্পনা মাফিক চিকিৎসার ধারাবাহিকতা প্রয়োজন।

ডায়েট কী হাই ব্লাড প্রেসার কমাতে পারে?

কিছুটা পারে। যদিও শুধুমাত্র কোন একটি বিশেষ খাবার উচ্চ রক্তচাপ সারাতে পারে না, তবে এটি উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা কমাতে ও এই অবস্থার মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে খাবারের ওপরই শুধুমাত্র নির্ভর করা উচিৎ নয় এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রকৃত উৎস কী তা জানা জরুরি।

উদাহরণ হিসেবে, যখন আলোচনা চলছিল যে রক সল্ট বা সৈন্ধব লবণ উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পারে কিনা, সেই প্রসঙ্গে ডায়েটেশিয়ান কামনা চৌহান জানান, “অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরে জলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এর থেকে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় ও তার ফলে হার্টে আরো চাপ তৈরী হয়। দিনে ৬গ্রাম করে সোডিয়াম গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের জন্য এই পরিমাণ ৩.৭৫গ্রাম। সাধারণ টেবিল নুনের থেকে সৈন্ধব লবণে অ্যাডিটিভ কম থাকে বলে একে স্বাস্থ্যকর বিকল্প বলা যেতে পারে। তবুও, সর্বাধিক পরিমাণে এর গুণ পেতে হলে এটিও পরিমিত পরিমাণেই খাওয়া উচিৎ।“

মোটের ওপর, হার্ট ভালো রাখার উপযোগী স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে কার্ডিওভাসকুলার কাজকর্ম ভালো হয় ও হাইপারটেনশনও নিয়ন্ত্রণে থাকে। উচ্চ রক্তচাপ বন্ধ করার জন্য ডায়েটারি অ্যাপ্রোচ (ড্যাশ) ডায়েট প্রায়ই উচ্চ রক্তচাপযুক্ত ব্যক্তিদেরকে পরামর্শ করা হয়।

এই ধরণের ডায়েট উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ফল খাওয়া, শাকসবজি, গোটা শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কম করা। সেইসঙ্গে, লাইফস্টাইলের পরিবর্তন এর মধ্যে রয়েছে ব্যায়াম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণও যথেষ্ট জরুরি। এছাড়াও এটা মনে রাখা দরকার ব্যক্তিবিশেষে এই জিনিসগুলোর প্রভাব পরিবর্তিত হয়, এবং একটি সামগ্রিক চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রয়োজন যার মধ্যে রয়েছে ওষুধপত্র। তাই, স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হল এসমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য বিশেষ জরুরি।

রসুনের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত উপকারিতাগুলি কী কী?

রসুন খেলে বেশ কিছু স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপকারিতা পাওয়া যায়।

নিচে এর কিছু কিছু বলা হয়েছে।

  • হার্ট-এর স্বাস্থ্যঃ রসুন ব্লাড প্রেসার ও কোলেস্টরেলের মাত্রা কমাতে পারে।
  • রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাঃ এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদানগুলির জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি হতে পারে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের প্রভাবঃ রসুনে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ রয়েছে যা ফ্রি র‍্যাডিক্যালসকে মেরে ফেলতে পারে।
  • অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারিঃ এটি শরীরে ইনফ্ল্যামেশন কমাতে পারে, যেমন আর্থাইটিস এর সমস্যায় কাজ করতে পারে।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালঃ রসুনে রয়েছে স্বাভাবিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য, যা ইনফেকশন বা সংক্রমণ রোধ করে।

রসুন, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার স্থানীয় একটি ফসল, এর হাজার হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। মিশরীয়, ভারতীয়, ব্যাবিলনীয় এবং চীনাদের মতো প্রাচীন সংস্কৃতিতে এর ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে, এটি প্রাচীনতম পরিচিত ঔষধি এবং সুগন্ধি ফসলের মধ্যে একটি বলে পরিচিত। এমনকি প্রাচীন গ্রীসে অলিম্পিক খেলোয়াড়দেরও রসুন দেওয়া হত” ।

রসুন খেলে কী উচ্চ রক্তচাপ কমে?

হয়তো। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে রসুনের সামান্য প্রভাব রয়েছে বলে কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। রসুনে অ্যালিসিন রয়েছে, এটি একটি যৌগ যার স্বাস্থ্য ভালো রাখার বিভিন্নগুণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে রক্তচাপ কমানোর সম্ভাব্য প্রভাব। কিন্তু, অল্পই কিছু প্রমাণ রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে রসুন খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে।

আমাদের অন্য একটি ফ্যাক্ট চেকের ঘটনায়, ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডাঃ প্রিয়জিৎ পানিগ্রাহি, এমবিবিএস, ডিএনবি, এবং এমএনএএমএস জানিয়েছেন যে রসুনে অ্যালিসিন এবং অ্যালাইনের মতো বায়োঅ্যাকটিভ উপাদান রয়েছে, যার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, কার্ডিওভাসকুলার রক্ষাকারী প্রভাব এবং আরও অনেক কিছু রয়েছে, যার মধ্যে অ্যান্টিক্যানসার এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, কিছু গবেষণায় খুব কম সাইড এফেক্ট থাকা রসুনের কার্যকারিতাকে সাধারণ ব্লাড প্রেসার কমানোর ওষুধের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণায় লক্ষ্য করা গেছে যে রসুনের পরিপূরক বা সাপ্লিমেন্টগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ কমাতে পারে।

এটি লক্ষণীয় যে রসুনের রক্তচাপ-কমানোর প্রভাবগুলি সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য বলে মনে হয়, তবে তা রক্তচাপ ঠিক থাকা মানুষদের থেকে, উচ্চ রক্তচাপ আছে এমন মানুষদের মধ্যে বেশি কাজ করে।

এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে রসুন আপনার খাদ্যতালিকা বা ডায়েটে একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে, তবে তা চিকিৎসার বিকল্প কিন্তু নয়। যদি আপনার উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে সঠিক পরামর্শ ও সাহায্যের জন্য স্বাস্থ্যপরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি। তারা আপনাকে, আপনার উপযোগী খাবার, ব্যায়াম এবং ওষুধের ব্যাপারে পরামর্শ দেবেন।

উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করতে হলে, আপনাকে রান্নায় যতটা পরিমাণ ব্যবহার করা হয় তার থেকে বেশ কিছুটা বেশি পরিমাণে রসুন খেতে হবে। নির্দ্দিষ্ট ওষুধের বিকল্প হিসাবে রসুনকে বিবেচনা করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা জরুরি, কারণ এই ব্যবস্থা ক্ষতিকারক হতে পারে। আপনার স্বাস্থ্য পরিকল্পনার মধ্যে রসুনের অন্তর্ভুক্তি একটি বৃহত্তর পদ্ধতির অংশ হওয়া উচিত, যার মধ্যে থাকবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা বা ডায়েট, ব্যায়াম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের মতো লাইফস্টাইল পরিবর্তন, যার মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়।

General Physician Dr Kahsyap Dakshini

জেনারেল ফিজিশিয়ান ডাঃ কাশ্যপ দক্ষিনী জানিয়েছেন, “নির্ভরযোগ্য মেডিকেল জার্নালে এমন তথ্য রয়েছে যা প্রমাণ করে যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য রসুন উপকারী। তবুও, হাই ব্লাড প্রেসার হলো একটি মেডিকেল অবস্থা যার জন্য একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা প্রয়োজন।“ব্যক্তি বিশেষে রসুন খেলে বিভিন্ন রকম সাইড এফেক্ট হতে পারে। সাধারণ সাইড এফেক্টের মধ্যে রয়েছে নিঃশ্বাস ও শরীরে দুর্গন্ধ, বুকজ্বালা এবং পেট খারাপ। কাঁচা রসুন এই সাইড এফেক্টের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। কিছু মানুষের এর থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। রসুনের সাপ্লিমেন্টগুলি রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে, বিশেষ করে যখন ওয়ারফারিনের মতো অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট ওষুধ চলাকালীন তা খাওয়া হয়। আপনি যদি রসুনের সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার পরিকল্পনা করেন, বিশেষ করে অস্ত্রোপচারের আগে বা আপনার যদি অ্যান্টিকোয়গুল্যান্ট ওষুধ চলাকালীন তা হয় তবে আপনার স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে বিষয়টি জানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রসুনের সাপ্লিমেন্টগুলি নির্দিষ্ট ওষুধের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যেমন এইচআইভি চিকিৎসায় ব্যবহৃত সাকুইনভির ওষুধের ব্যবহার চলাকালীন। এছাড়াও, অন্যান্য ভেষজ খাদ্য বা ডায়েটারি হার্ব এবং সাপ্লিমেন্টের সংযোগ হতে পারে ঠিকই, কিন্তু আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও ওষুধের পদ্ধতির সাথে এর সামঞ্জস্য তৈরীর জন্য আপনার স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

বিশেষ কিছু হাতের ব্যায়াম কী স্তন ক্যানসার প্রতিহত করতে পারে?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিওতে দাবী করা হয়েছে বিশেষ কিছু হাতের ব্যায়াম স্তন ক্যানসার প্রতিহত করতে পারে। মোটের ওপর, এই ভিডিওতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিশেষ এক প্রকার যোগব্যায়াম করলে মহিলারা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া থেকে দূরে থাকতে পারেন। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল।

Rating

দাবি

সোশ্যাল মিডিয়া এবং হেলথ ব্লগে ক্যান্সার  চিকিৎসা সংক্রান্ত অনেক দাবি করা হয়ে থাকে । বিভিন্ন পোস্টে বিভিন্ন ধরণের কথা উল্লেখ করা হয়ে থাকে । এরকম একটি পোস্ট এখানে দেখা যাবে ।

সত্যানুন্ধান

স্তন ক্যানসার কী?

স্তন ক্যানসার বা ব্রেস্ট ক্যানসার হল এক ধরনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমার যার সুত্র হল স্তনের সেল বা কোষ। যখন স্তনের অস্বাভাবিক কোষগুলি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে, এর ফলে লাম্প বা মাস অথবা মাংসপিন্ড তৈরী হয়, তখন এর সূত্রপাত হয়। এটি আশেপাশের ট্যিসু গুলিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এটা যদি দ্রুত সনাক্ত বা তারপর চিকিৎসা না করা হয় তবে শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, যাকে মেটাস্টাইজ বলে। পরীক্ষা করে দ্রুত সনাক্তকরণ এবং সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া এর চিকিৎসা সফল করতে সবচেয়ে জরুরী বিষয়।

স্তন ক্যানসার কী সেরে যায়?

ঠিক তা নয়। স্তন ক্যানসারকে সাধারণত নিরাময়যোগ্য নয় বলে মনে করা হয়, কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা গেলে তা বেঁচে থাকার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলে একে চিকিৎসা যোগ্য করে তোলে। আমেরিকার ক্যানসার সোসাইটি ওয়েবসাইট অনুযায়ী, যেসব মহিলাদের সনাক্তকরণ প্রাথমিক পর্যায়ে হয় তাদের রোগ ধরা পড়ার পর অন্ততপক্ষে ৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার বেশী মাত্রায় সম্ভাবনা থাকে, এক্ষেত্রে যাদের ক্যানসার নেই তাদের সাথে ৯০ শতাংশ মিল রয়েছে। তবে, স্তন ক্যানসার বাড়তে থাকলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও কমতে থাকে। অনেক বেশী মাত্রায় সচেতনতা, উন্নত ধরণের পরীক্ষা পদ্ধতি এবং সুনির্দিষ্ট থেরাপির ফলে এর চিকিৎসার সফলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। যে সমস্ত গবেষণা চলছে সেখানে স্তন ক্যানসারের ঘটনা বেড়ে চলার মোকাবিলায় প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণ এবং ইমিউনোথেরাপির ওপর জোর দেওয়া হয়, রোগটির মোকাবিলা করা ও বেড়ে চলার বিষয়টির দিকে নজর দেওয়া হয়।

কিছু হাতের ব্যায়াম কী স্তন ক্যানসার আটকাতে পারে?

ঠিক তা নয়। ব্যায়াম থেকে স্তন ক্যানসার আটকানো যায় এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। কিন্তু এরকম প্রমাণ আছে যেখানে দেখা গেছে নিয়মিত শরীরচর্চার সঙ্গে এধরণের রোগে কম আক্রান্ত হওয়ার মধ্যে একটি যোগ রয়েছে। প্রিমেনোপজাল বা যাদের মাসিক বন্ধ হয়নি ও পোষ্টমেনোপজাল বা যাদের মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে দুধরণের মহিলাদের ক্ষেত্রেই এর সুফল দেখা গেছে। এখানে মূল পয়েন্টগুলিকে আলাদা করে বলা হয়েছেঃ

  • ঝুঁকির সম্ভাবনা কমে যাওয়াঃ প্রমাণ পাওয়া গেছে যেসমস্ত মহিলারা নিয়মিত শরীর চর্চা করেন না তাদের থেকে যারা নিয়মিত শরীর চর্চা করেন সেইসব মহিলাদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১০-২০% কম।
  • সংগঠনে থাকার গুরুত্বঃ সারা জীবন ধরে বা মেনোপজের পর যারা বিনোদনমূলক কাজকর্ম এবং মাঝারী থেকে ভারী মাত্রায় শরীরচর্চার সঙ্গে যুক্ত থাকেন তারা উপকৃত হন।
  • সম্ভাব্য কিছু প্রক্রিয়াঃ সঠিক প্রক্রিয়াটি নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে, কিন্তু গবেষকরা মনে করছেন স্তন ক্যানসারের ঝুঁকির বেশ কিছু কারণ যেমন ওজন নিয়ন্ত্রণ, হরমোনের ভারসাম্য, ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ রোধে শরীরচর্চার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
  • সীমাবদ্ধতাঃ এটা মনে রাখা দরকার যে ব্যায়াম হচ্ছে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি রোধের অন্যতম একটি উপায় মাত্র। জেনেটিক্স, পরিবারের ইতিহাস এবং অন্যান্য জীবনধারা পালনেরও এতে ভূমিকা রয়েছে।

যদিও প্রতিদিনের শরীরচর্চা স্তন ক্যানসার রোধে বিশেষ ভূমিকা থাকলেও, ইনস্টাগ্রাম ভিডিও-তে যেমন দেখানো হয়েছে এরকম বিশেষ হাতের ব্যায়াম এক্ষেত্রে কতটা কার্যকরী তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যিনি এটি দাবী করেছেন তিনি খুব জোরালো ভাবে বিশ্বাসযোগ্য কোন প্রমাণ ছাড়াই একথা বলেছেন।

যোগব্যায়াম কী চিকিৎসার সময়, আগে এবং পরে স্তন ক্যানসারকে সারাতে বা বিলম্বিত করতে পারে?

না ঠিক তা নয়। যোগব্যায়াম স্তন ক্যানসার সারাতে পারেনা তবে এর কিছু লক্ষণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, চিকিৎসার সময় জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে, চিকিৎসার আগে শারীরিক প্রস্তুতিতে সাহায্য করতে এবং চিকিৎসার পরে সুস্থ থাকতে সাহায্য করতে পারে। যদিও এই রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধের জন্য প্রমাণগুলি যথেষ্ট নয়, কিন্তু যোগব্যায়াম সহ একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ সামগ্রিক সুস্থতায় কার্যকরী হতে পারে।

যাদের স্তন ক্যানসার আছে তাদের ক্ষেত্রে যোগব্যায়াম কীভাবে উপকার করতে পারে?

যোগব্যায়াম করলে চিকিৎসার সময় এবং পরে দুক্ষেত্রেই স্তন ক্যানসারে আক্রান্তরা বিভিন্নভাবে উপকার পেয়ে থাকেন। এ থেকে তারা শারীরিক, মানসিক ও ইমোশনাল সাহায্য পানঃ

১। শারীরিকভাবে ভালো থাকাঃ যোগব্যায়াম নমনীয়তা, শক্তি ও ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। হালকা যোগব্যায়াম মাসল বা পেশীর শক্তভাব যা স্তন ক্যানসারের চিকিৎসার সাধারণ সাইড এফেক্ট বলে চিহ্নিত তা দূর করে সচল রাখতে সাহায্য করে।

২। স্ট্রেস কমানোঃ যোগব্যায়ামে মন দিয়ে শ্বাস নেওয়া এবং ধ্যান করা মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং ডিপ্রেশনের সমস্যা যা প্রায়শই স্তন ক্যানসারের সনাক্তকরণের সাথে যুক্ত হয় তা কমাতে সাহায্য করে।

৩। ঘুম ভালো হওয়াঃ যাদের স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা চলছে বা চিকিৎসার পরে ভালো ঘুম না হওয়ার সমস্যায় যোগব্যায়াম ভালো কাজ দেয় কারণ এতে পেশিগুলি শিথিল হয়ে পড়ে।

স্তন ক্যানসার থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে?

স্তন ক্যানসার থেকে সুরক্ষিত থাকতেঃ

১। পরীক্ষাঃ নিয়মিত ম্যামোগ্রাম ও সেলফ-এক্সাম বা নিজে পরীক্ষা করুন।

২। লাইফস্টাইলঃ ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে সঠিক ওজন বজায় রাখুন।

৩। ডায়েটঃ ফল ও সবজি সমৃদ্ধ সুষম খাবার খান।

৪। শরীরচর্চাঃ সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট কোন শরীরচর্চার সঙ্গে যুক্ত থাকুন।

৫। অ্যালকোহলঃ মদ খাওয়ার পরিমাণ সীমিত রাখুন।

৬। ধূমপান করবেন নাঃ ধূমপান ছেড়ে দিন।

৭। স্তনপানঃ ব্রেস্টফিডিং বা স্তন্যপান করান।

৮। পরিবেশগত সচেতনতাঃ টক্সিনের সংস্পর্শে কম থাকার চেষ্টা করুন। ৯। চেক-আপঃ নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।

মোরাজী দেশাই ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ যোগার সিনিয়র কনসালটেন্ট, হিমানী শোখান্দ বলেছেন, “নিয়মিত যোগব্যায়াম ও শরীরচর্চা সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং স্তন ক্যানসারের ঝুঁকির কারণগুলি কমাতেও সাহায্য করতে পারে। কিন্তু, কোন নির্দিষ্ট যোগব্যায়াম বা শরীরচর্চা নিশ্চিতভাবে স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে না। যোগব্যায়াম সহ, সুষম খাদ্য এবং নিয়মিত পরীক্ষা প্রভৃতির মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মেনে চলাই স্তন ক্যানসার প্রতিরোধের চাবিকাঠি।

Yoga Practitioner

আয়ুষ মন্ত্রকের শংসাপত্র প্রাপ্ত কর্পোরেট যোগ প্রশিক্ষক, ডাঃ আয়ুষ চন্দ্র বলেছেন, “হালকা যোগাভ্যাস খুব কার্যকরী হতে পারে এবং এতে বেশ কিছু ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়, তা হল এতে ক্লান্তি দূর হয় এবং জীবনের সামগ্রিক মানের উন্নতি হয়।“

মোবাইল ফোনের ব্যবহার কী দৃষ্টিশক্তির উপর প্রভাব ফেলে?

সারমর্ম

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিওতে দাবী করা হয়েছে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে চোখের ক্ষতি হয়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবীর অর্ধেকটা ঠিক

Fact Check Rating

দাবি

মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে চোখের ক্ষতি হয়। সোশ্যাল মিডিয়াতে এই ধরণের ভ্রান্তিকর পোস্ট আরো অনেক ছড়িয়ে আছে | এই দাবি নিয়ে একটি পোস্ট এখানে দেখা যাবে |

সত্যানুন্ধান

সেল ফোন থেকে কী চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা হয়?

সেরকমটাই মনে হয়। যে সমস্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে সেল ফোন থেকে চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা তৈরী হচ্ছে। যদিও বাচ্চাদের মোবাইল ফোনের অত্যধিক ব্যবহার সীমিত করা ভাল, তবে ভিডিওটিতে শিশুর নির্দিষ্ট রোগ নির্ণয় এবং চোখে প্যাচ দেওয়ার যে বিষয়টির কথা বলা হয়েছে তার কারণ কি তার জন্য পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায় না। এছাড়া, মোবাইল ফোনে বেশি করে স্ক্রীন টাইম কাটালে যে সরাসরি পেরিফেরল ভিশনের পরিবর্তন হয়, তা ঠিক করার জন্য যে বিশেষ ব্যান্ডেজ লাগে তার কোন প্রমাণ কিন্তু এই দাবীর স্বপক্ষে পাওয়া যায় না।

Dr Aditya Sethi, Ophthalmologist

বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য হরিয়ানার গুরগাঁও-এ অরুণোদয় ডেসেরেট আই হসপিটালের (এডিইএইচ) অপথ্যালমোলজিষ্ট বা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ আদিত্য শেঠির সাথে যোগাযোগ করেছি। তিনি জানান, “মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহারের বৃদ্ধি এবং শিশুদের মধ্যে খুব বেশি মাত্রায় ইসোট্রপিয়ার বেড়ে যাওয়ার মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক রয়েছে। অনেকসময় ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে চোখের স্ট্রেন, ক্লান্তি এবং ফোকাসের পরিবর্তনের কারণ হতে পারে, যা চোখের অ্যালাইনমেন্টকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া, ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখানো ব্যান্ডেজটির কারণ কী, এর পেছনে অতিরিক্ত বিষয়গুলি কী কী তা না জানলে পুরোপুরি বোঝা সম্ভব নয়। এই ধরণের বিষয়বস্তুকে নজরে রাখতে হলে সতর্কতার দিকটি ভেবে দেখতে হবে এবং এর জন্য বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দরকার। আমার মনে হয়, চোখের ফিউশন ভাঙতে ও অ্যালাইনমেন্ট ঠিক করতে ব্যান্ডেজটি কোন চিকিৎসা পরিকল্পনার একটি অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তবুও, এটি সঠিকভাবে বোঝার জন্য যোগ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞের সামগ্রিক মূল্যায়ন প্রয়োজন। যে চিকিৎসা এখানে দেখানো হয়েছে এই ভিডিওটি এককভাবে তার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করতে অক্ষম। এটি এখনও চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রমাণিত পদ্ধতি নয় এবং এখনো এর সাফল্যের হার নথিভুক্ত করা নেই। এটি ফিউশন ভেঙে ফেলা বা বিশ্রাম দেওয়ার ব্যবহারিক পদ্ধতি হতে পারে। এধরনের সমস্যায় ওষুধের ব্যবহার ও অস্ত্রোপচারের মত চিকিৎসার কথা বলা হয়ে থাকে। তবুও বলব, এধরনের চিকিৎসার সাহায্য নেওয়ার আগে একজন যোগ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞকে দিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করানো ও সঠিক রোগ নির্ণয়ের বিশেষ প্রয়োজন। শিশুটির প্রয়োজন অনুসারে পেশাদারী পরামর্শের মাধ্যমে সমস্যার অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে বের করা এবং পাশাপাশি যথাযথ ও কার্যকরী চিকিৎসার পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।“

এছাড়াও, বিষয়টি আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য আমরা ডেয়লি ওয়াটান নিউজের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং ওদের কাছ থেকে কোন জবাব পেলেই আমরা বিষয়টি জানাবো।

কীভাবে সেলফোন চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা তৈরী করতে পারে?

বর্তমানে যে সমস্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে বলা হয়েছে দীর্ঘ সময়ের জন্য মোবাইল ফোনের ব্যবহার দৃষ্টিশক্তির ওপর বিভিন্ন ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে ডিজিটাল আই স্ট্রেন বা কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম হতে পারে। এটা হয় যখন আপনি কম্পিউটার, ফোন বা ট্যাবলেটের মতো স্ক্রিনের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকেন, তখন আপনার চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং অস্বস্তি বোধ হয়। এতে চোখের স্ট্রেন, মাথাব্যথা, ঝাপসা দৃষ্টি এবং শুষ্ক চোখ বা ড্রাই আইজের মতো সমস্যা তৈরী হতে পারে। অনেক সময় ধরে একই জায়গায় বসে থাকা এবং বিরতি না নেওয়া এটিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। মাঝে মাঝে বসে থাকার অবস্থান পরিবর্তন করা, বিরতি নেওয়া এবং চোখ কে বিশ্রাম দিলে এর থেকে উপকার মিলতে পারে।

এছাড়া, মোবাইল ফোন থেকে নীল আলো বেরোয়, যা ঘুমানো ও জেগে ওঠার যে চক্র বা সাইকেল তার ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং এর থেকে আই স্ট্রেন হতে পারে এবং খুব বেশি সংস্পর্শে থাকলে তা থেকে রেটিনার ক্ষতিও হতে পারে।

আমরা এক গবেষণায় আরো দেখেছি যে বাড়তি স্ক্রীন টাইম, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে, এবং মায়োপিয়া (দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হওয়া) বেড়ে যাওয়ার মধ্যে একটি যোগসূত্রের কথা বলা হয়েছে। অন্য আর একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করার সময় মানুষ চোখের পাতা ফেলে কম। এর ফলেও চোখ শুকনো বা ড্রাই আইজ বা চোখ জ্বালা বা চুলকানোর মত সমস্যা হতে পারে। এই জিনিসগুলো ছাড়াও, বেশ কিছু প্রমাণে দেখা গেছে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় চোখের সঙ্গে দূরত্ব ঠিক থাকলে বা কোণ ঠিক না থাকলে, কাঁধে বা ঘাড়ে চাপ পড়তে পারে তা থেকে অস্বস্তি বাড়তে পারে।   

মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে হওয়া চোখের সমস্যা কী আমরা প্রতিহত করতে পারি?

সেইরকমটাই মনে হয়। অত্যধিক মাত্রায় মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ফলে তৈরী হওয়া চোখের দৃষ্টির সমস্যা কিছু অভ্যাসের মাধ্যমে প্রতিহত করা সম্ভব। মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়া ও দীর্ঘক্ষণ স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে থাকা বা অতিরিক্ত স্ক্রীন টাইম কমিয়ে আনা এই অভ্যাসগুলির মধ্যে পড়ে। ২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়, অর্থাৎ ২০ মিনিট অন্তর স্ক্রীন থেকে ২০ ফুট দূরের কিছু জিনিসের দিকে ২০ সেকেন্ড ধরে তাকানোর অভ্যাস, চোখ ভালো রাখতে উল্লেখযোগ্যভাবে উপকার করতে পারে। এছাড়াও, বেশি সময় ধরে স্ক্রীন ব্যবহারের থেকে চোখের দৃষ্টির ক্ষতি ঠিক করতে চরম পন্থাগুলি নেওয়া যেমন ব্যান্ডেজ ব্যবহারের পরিবর্তে চোখের যত্নের জন্য সুঅভ্যাস গড়ে তোলা জরুরী।

চোখ ছাড়াও, সেল ফোন ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি ৪০% বাড়িয়ে দেয় এমন দাবিও আমরা খারিজ করেছি।

সত্যানুন্ধান: পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকায় কী কখনো ক্যানসার হয় না?

সারমর্ম

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিওতে দাবী করা হয়েছে যে পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকায় কোন মানুষের কখনো ক্যানসার হয়নি। এর পেছনে যে কারণ বলা হয়েছে তা হল এখানকার মানুষ অ্যাপ্রিকটের বীজ খান। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল

Rating

দাবি

কটি ভিডিওতে দাবী করা হয়েছে যে পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকায় কোন মানুষের কখনো ক্যানসার হয়নি। সেরকম একটি পোস্ট দেখা যাবে এখানে

সত্যানুন্ধান

পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকার মানুষদের কী কখনো ক্যানসার হয় না?

ঠিক তা নয়। পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকায় কখনো কারুর ক্যানসার হয়নি এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকার মানুষদের দীর্ঘ জীবন ও ভালো স্বাস্থ্য নিয়ে বহু দশক ধরে দাবী করা হচ্ছে। কিন্তু, তাদের যে ক্যানসার হয় না বা তাদের জীবন সুস্বাস্থ্যে ভরা এমন কোন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। যদিও কিছু গবেষণায় হুনজার জনগণের স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ুর বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে, কিন্তু তাদের কখনো ক্যানসার হয়না একথার চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া যায় না। অন্যান্য বিষয়গুলি যেমন তুলনামূলকভাবে ছোট জনসংখ্যা এবং চিকিৎসা পরিষেবার সাহায্য বিশেষ না পাওয়ার জন্য, এই অঞ্চলে ক্যানসার হওয়ার খবর বা রোগ নির্ধারন না হওয়াও এই ধারণার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

হুনজার মানুষদের স্বাস্থ্য বিভিন্ন বইয়ের বিষয়বস্তু হিসেবে উঠে এসেছে এবং দীর্ঘায়ু বৃদ্ধির জন্য তাদের খাদ্যাভ্যাস বিজ্ঞাপনের অংশ হিসেবে সামনে এসেছে। যদিও, এই উপত্যকায় ক্যানসার হয় না বলে গবেষণায় এরকম কিছু পাওয়া যায়নি।

এই দাবীর বিপরীতে বলা যায়, এই প্রকাশিত প্রামাণ্য তথ্যে দেখানো হয়েছে হুনজা উপত্যকায় নিশ্চিত ভাবে মানুষের দেহে ক্যানসার ধরা পড়েছে। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক অধ্যাপক ড. উইলিয়াম জার্ভিসের ১৯৮৬ তে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে ‘ক্যানসার মুক্ত সমাজ’ এর ধারণাকে ভুল বলা হয়েছে এবং কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল হুনজায় ক্যানসার রোগ যে রয়েছে তা নিশ্চিত করেছে।

ক্যানসারের বৃদ্ধি কী থেকে হতে পারে?

ক্যানসার একটি জটিল রোগ যা ভৌগলিক অবস্থান নির্বিশেষে যে কোন ব্যক্তির হতে পারে। তবে এটা ঠিক যে কিছু জনসংখ্যার মধ্যে ক্যানসারের প্রকোপ কম দেখা যায়, কিন্তু এই বিষয়টিকে শুধুমাত্র হুনজা উপত্যকায় বসবাসের জন্য দায়ী করলে তা অতি সরলীকরণ হয়ে যাবে। যে কোনো জনসংখ্যার ক্যান্সারের হার সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য, বড় নমুনার আকার, দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠীর সাথে তুলনা করে যথাযথ বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা প্রয়োজন।

বিভিন্ন রকমের কারণ ক্যানসার হওয়ার জন্য দায়ী, তার মধ্যে রয়েছে জিনগত প্রবণতা, বিশেষ রকমের লাইফস্টাইল (যেমন ধূমপান, ডায়েট এবং শারীরিক কাজকর্ম), কার্সিনোজেনের সংস্পর্শ এবং স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রাথমিক সনাক্তকরণের সুবিধা না থাকা। ক্যানসারের ব্যাপকতা নিয়ে গবেষণা করার সময় এই বহুমুখী দিকগুলি দেখে নেওয়া ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যাপ্রিকট বীজ খেলে কী ক্যানসারকে আটকানো যায়?

ঠিক তা নয়। অ্যাপ্রিকট বীজ খেলে যে ক্যানসার আটকানো যায় তার স্বপক্ষে কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। অ্যাপ্রিকট বীজে অ্যামিগডালিন নামক একটি যৌগের উপাদানের কারণে এটি নজরে এসেছে, যা ভিটামিন বি১৭ নামেও পরিচিত। এই যৌগটি খাওয়ার সময় তা থেকে সায়নাইড নির্গত হয়। বিকল্প চিকিৎসার কিছু প্রবক্তা দাবি করেছেন যে অ্যামিগডালিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন এপ্রিকট বীজ ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে বা ক্যানসারের চিকিৎসায় কাজে লাগতে পারে।

যদিও, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এই দাবীর সমর্থন করে না। অ্যামিগডালিন থেকে বেরোনো সায়ানাইড মানব কোষের জন্য বিষাক্ত হতে পারে এবং এর থেকে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুতর ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এমনকি, ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) একটি সতর্কতা জারি করেছে এর সম্ভাব্য বিষাক্ততার কারণে অ্যাপ্রিকট বীজ বা অ্যামিগডালিন যুক্ত পণ্য খাওয়ার বিরুদ্ধে।

অ্যাপ্রিকট বীজ খাওয়া আসলে ক্ষতিকারক হতে পারে কারণ এতে অ্যামিগডালিন নামক একটি যৌগ থাকে, যা সায়ানাইড বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে। অ্যামিগডালিনের একটি বিশুদ্ধ রূপ লায়েট্রিল, আগে ক্যানসার রোধকারী  চিকিৎসা হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল কিন্তু প্রাণীদের নিয়ে গবেষণায় এটি খুব সামান্য ক্যানসার রোধকারী হিসাবে কাজ করে এরকম দেখা গেছে এবং মানুষের ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলিতে তা কোন কাজে আসেনি। কানসারের চিকিৎসায় অ্যামিগডালিন বা লায়েট্রিলের ব্যবহারের জন্য প্রমাণগুলি যথেষ্ট না এবং তা ধারাবাহিকও নয়। অধিকন্তু, কাঁচা অ্যাপ্রিকটের বীজ খাওয়ার ফলে সায়ানাইড বিষক্রিয়া হতে পারে, এই জন্য বেশ কয়েকটি দেশে এগুলি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ক্যানসার সারানোর দাবি করে এমন অসংখ্য অসঙ্গত তত্ত্ব রয়েছে। আমরা এর আগে রাইফ মেশিনগুলি সম্পূর্ণরূপে ক্যানসার সারিয়ে তুলতে পারে এমন ধারণা খারিজ করে দিয়েছি। তবে, এটা মনে রাখা জরুরী যে ক্যানসার একটি জটিল রোগ। কার্যকরী চিকিৎসার জন্য সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে ক্লিনিকাল ট্রায়াল সহ যথাযথ বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রয়োজন।

রসুন কী চুলের বৃদ্ধি দ্রুত করতে সাহায্য করে?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে রসুনের কোয়া প্রতিদিন স্কাল্পের নির্দিষ্ট এলাকায় লাগালে চুল গজিয়ে ওঠে। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবীর অর্ধেকটা ঠিক

Fact Check Rating

দাবি

সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে বলা হয়েছে রসুনের কোয়া প্রতিদিন স্কাল্পের নির্দিষ্ট এলাকায় লাগালে যাদুকরীভাবে এক সপ্তাহের মধ্যে চুল গজিয়ে ওঠে। এই ধরণের পোস্ট আরো অনেক ছড়িয়ে আছে | এইমত একটি পোস্ট এখানে দেখা যাবে|

সত্যানুন্ধান

চুল পাতলা হয়ে যাওয়া/পড়ে যাওয়ার কারণগুলি কী কী?

অস্বাস্থ্যকর চুলের পরিচর্যা যেমন, খুব বেশি পরিমাণে চুলের সৌন্দর্য্যচর্চা, রুক্ষ জিনিসের সংস্পর্শে আসা এবং গোড়া শক্ত করে চুল বাঁধার কারণে চুল পাতলা হয়ে যেতে পারে। প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব যেমন আয়রন, ফলিক অ্যাসিডের অভাব এবং সেই সঙ্গে মানসিক চাপ চুলের স্বাস্থ্যের ওপরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়াও, চুল পাতলা হয়ে আসার আরো কিছু কারণ আছে যেমন, জিনগত, হরমোনের পরিবর্তন, ওজন কমে যাওয়া, অটোইমিউন রোগ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা, ত্বকের সমস্যা, সংক্রমণ বা ভিটামিন ডি-র অভাব।

রসুন কী চুলের সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে পারে?

হ্যাঁ। ২০২২ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে রসুনের ইমিউন-মডুলেটিং বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা যা একটি অটোইমিউন অবস্থা, এতে চুলের ক্ষতি হয়, এর চিকিৎসায় কার্যকরী হতে পারে। রসুন ও পেঁয়াজ, দুটিই অ্যাসপারাগাস গোত্রের সবজি, দুয়ের মধ্যেই ডায়ালাইল ডিসালফাইড থাকে, এই বৈশিষ্ট্যর জন্য এর ঔষধিগুণ থাকতে পারে। চুল আবার গজানোর জন্য বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি থাকলেও রসুনের অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, ইমিউনোমডিউলেটরি এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য এটিকে চমৎকার একটি সম্ভাব্য বিকল্প করে তোলে।

২০২১ সালের একটি গবেষণায় বলা হয় বহুদিন ধরে এর বিভিন্ন রকম বৈশিষ্ট্যের জন্য রসুনের ব্যবহার হয়ে আসছে এবং বর্তমানে একে খুসকি নিয়ন্ত্রণের একটি সম্ভাব্য উপায় বলে মনে করা হয়। এর অন্যতম মূল উপাদান হল অ্যালিসিন, যা সালফারে ভরপুর এবং চুল পড়ে যাওয়ার চিকিৎসায় তা বিশেষ কার্যকরী। এটির জন্য চুল পরে যাওয়ার সমস্যা সমাধানে রসুনকে একটি প্রতিশ্রুতিপূর্ণ উপাদান বলে মনে করা হয়।

স্কাল্পে বা মাথার ত্বকে সরাসরি রসুন লাগানোর কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে?

স্কাল্পে বা মাথার ত্বকের টাক পড়ে যাওয়া অংশে রসুনের কোয়া লাগানোর দাবি নিয়ে ২০২০ সালে একটি গবেষণা করা হয়েছিল। রিপোর্টে চর্মরোগের অবস্থায় রসুনের প্রয়োগে বেশ কিছু খারাপ ফল উঠে আসে। কেউ কেউ অ্যালার্জি বা জ্বালা যন্ত্রণা চুলকানির সমস্যাযুক্ত ডার্মাটাইটিস, ছত্রাক, অ্যানজিওডিমা, পেমফিগাস, অ্যানাফিল্যাক্সিস এবং ফটোঅ্যালার্জির মত সমস্যা অনুভব করতে পারেন। রসুনের অ্যালার্জেনিক উপাদান, যেমন ডায়ালিল ডিসালফাইড, অ্যালিল প্রোপিল সালফাইড এবং অ্যালিসিন, এধরনের প্রতিক্রিয়াগুলির জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। বিশেষ জায়গায় রসুন ব্যবহার করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি জ্বালা যন্ত্রণা চুলকানির সমস্যাযুক্ত ডার্মাটাইটিস এবং কেমিকেল বার্ণের কারণ হতে পারে, বিশেষ করে যখন অক্লুসিভ ড্রেসিংয়ের মাধ্যমে লাগানো হয়। রসুনের অ্যালার্জি থাকতে পারে এমন ব্যক্তিদের জন্য রসুনের অ্যালার্জেনের প্যাচ টেস্ট করার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। যদিও রসুনের কিছু বিশেষ উপকারিতা রয়েছে, তবে ওষুধের উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহার করার সময় সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও সচেতন হওয়া এবং সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য।

Dermatologist Dr. Kannagath

একজন বিশিষ্ট ডার্মাটোলজিষ্ট, ডাঃ জ্যোতি কান্নানগাথের বক্তব্য অনুসারে, যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের ঐ বিশেষ অঞ্চলে লাল রঙের ফুসকুড়ি, হাইভ বা আমবাত, চুলকানি, ইনফ্ল্যামেশন, বা ফুলে যাওয়া ইত্যাদির মধ্যে কোন একটি বা একাধিক লক্ষণ দেখা যেতে পারে।

এছাড়াও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়ে ঘরোয়া প্রতিকারের উপায়গুলি ব্যবহার করার সময়ে মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় সতর্কতা গ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ার সহজলভ্যতার জন্যও এই ধরণের ঘরোয়া উপায়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নেওয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে, চুলের বৃদ্ধির দ্রুত ঘরোয়া উপায় ইত্যাদির মত প্রতিকারের দাবী নিয়ে এই ঘরোয়া উপায়গুলি আরো ছড়িয়ে পড়ছে।

নিজে থেকে চিকিৎসা করার সমস্যা নিয়ে ডাঃ কান্নানগাথ বলেছেন, “নিজে থেকে এসব চিকিৎসা করা কখনো কখনো ঝামেলার এবং সেই সঙ্গে সঠিক ভাবে প্রয়োগের উপায় না জেনে এগুলির প্রয়োগ করার ফলে সংক্রমণ হতে পারে। এ ধরণের জিনিসের ক্রমাগত প্রয়োগে ফলিকিউলাইটিস হতে পারে, এটি হল ত্বকে ছোট ফোঁড়ার মত কিছু তৈরি হওয়া, এই জাতীয় বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।“

আপনি কী জিরা, আদা আর লেবু ব্যবহার করে ওজন কমাতে পারেন?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে যে দিনে দুবেলা খাওয়ার পর জিরা ও আদা দিয়ে জল ফুটিয়ে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ওজন কমানো যায়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখেছি এবং জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল

সত্যানুন্ধান

শরীরচর্চা এবং ডায়েট ছাড়া স্বাভাবিক উপায়ে কি ওজন কমানো সম্ভব?

না। শরীরচর্চা এবং ডায়েট ছাড়া কোনভাবেই ওজন কমানো সম্ভব নয়। চর্বি ঝরানো একটি বহু প্রক্রিয়ার ফল। যদি কেউ চর্বি ঝরাতে চান, তাহলে তার অবশ্যই এটা জানা প্রয়োজন কীভাবে ওজন বেড়েছেঃ ইনফ্ল্যামেশন, লিকি গাট বা অন্ত্রে ছিদ্র, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, টক্সিন, কম মেটাবলিজম বা বিপাক, স্টেরয়েডের মতো ওষুধ খাওয়া ইত্যাদি। মোটা হয়ে যাওয়ার সঠিক কারণটা ধরা পড়লে, খাবারের তালিকা বা ডায়েট ও লাইফস্টাইলের পরিবর্তনের মাধ্যমে চর্বি ঝরানোর চেষ্টা করতে হয়।

এছাড়া, স্বাভাবিক উপায়ে শরীরচর্চার মাধ্যমে এবং কম ক্যালোরিযুক্ত সুষম খাবার খেয়ে চর্বি ঝরানো সম্ভব। যারা ওজন কমাতে ইচ্ছুক তাদেরকে শরীরচর্চা ও ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ফ্যাট বার্ণ বা চর্বি ঝরানোর চেষ্টা করলে উপকার হতে পারে। সব শেষে বলা যায়, স্বাভাবিকভাবে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে ফ্যাট বার্ণ করে ওজন কমানো যায় না। এটা একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া, এতে বেশ কিছুটা পরিশ্রম ও সময় লাগে।

হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন লাইফ কোচ ভুমিকা মুখার্জি তার মতামত শেয়ার করে বলেছেন, “পেটের চর্বি হল ভিসেরাল ফ্যাট যা লিভার এবং পেটের অন্যান্য অঙ্গগুলির চারপাশে থাকে, লিভারে রক্ত ​​​​বহনকারী পোর্টাল শিরার কাছাকাছি থাকে। এই চর্বি শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে কিন্তু পেটের চর্বি কমাতে সঠিক উপায় গ্রহণ করা সম্ভব। পেটের চর্বি কমাতে একজন ব্যক্তিকে সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা রুটিন মেনে চলতে হবে এর মধ্যে রয়েছে-

১। যথেষ্ট পরিমাণে ঘুমানোঃ ঘুমের অভাব শরীরে ঘ্রেলিনের মাত্রা বাড়ায় এবং লেপটিনের মাত্রা কমিয়ে দেয়, যা আপনার ক্ষিদে বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে মেটাবলিক এবং এন্ডোক্রাইন পরিবর্তন এবং গ্লুকোজ টলারেন্স কম হয়। এবং এর ফলে একজন মানষের শরীরে নানারকম স্বাস্থ্যসমস্যা তৈরি হতে পারে, পেটে চর্বি জমা তার মধ্যে একটি।

২। যথেষ্ট পরিমাণে জল খাওয়াঃ ওজন কমানো এবং জল খাওয়ার মধ্যে একটা ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে জল শরীরে জমে থাকা চর্বিকে খুব ভালোভাবে বিপাক বা মেটাবলাইজ করতে পারে।

৩। নিয়মিত শরীরচর্চাঃ শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিনের শরীরচর্চা বিশেষ সাহায্য করে। পেটের জন্য বিশেষ কিছু ব্যায়াম পেটের চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে।

৪। ক্যালোরির দিকে নজর রাখাঃ পেটের চর্বি কমাতে সঠিক খাবার খাওয়া হচ্ছে মূল বিষয়। আপনার চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী পরিকল্পিত সুষম খাবার খাওয়া আদর্শ হওয়া উচিত।

তাই আপনার শরীরের যত্ন না নিয়ে চর্বি কমানোর চেষ্টা করা উচিতও নয় এবং সম্ভবও নয়।“

ডায়েট ও শরীরচর্চার পরিবর্তন ছাড়াই কী জিরা, আদা ও লেবুর মিশ্রণ আপনার ওজন কমিয়ে দিতে পারে?

না ঠিক সেরকম নয়। কিছু প্রমাণ রয়েছে যেখানে দেখা গেছে জিরা, আদা ও লেবুর মিশ্রণ ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রে ওজন কমানোয় সাহায্য করেছে কিন্তু ডায়েটের পরিবর্তন ও শরীরচর্চা ছাড়া এই মিশ্রণটি ওজন কমিয়ে দেবে এর কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। জিরা, আদা ও লেবু হল এমন কিছু উপাদান যার সঙ্গে ওজন কমানোর একটি সম্পর্ক থাকতে পারে কিন্তু এটা মনে রাখা দরকার শুধুমাত্র এককভাবে এগুলির মাধ্যমে ওজন কমানো যায় না।

প্রত্যেকটি উপাদান আলাদাভাবে দেখা যাকঃ

১। জিরাঃ জিরা একটি এমন মশলা যা প্রায়শই ব্যবহৃত হয় এবং ওজন কমানোয় এর কিছু উপকারিতা রয়েছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে জিরা হজমে সাহায্য করে, বিপাকের হার বাড়ায় ও শরীরের চর্বি কমায়। যদিও, এর প্রভাব খুবই কম। সামগ্রিক স্বাস্থ্যকর ডায়েট ও জীবনশৈলী বা লাইফস্টাইলের সঙ্গে একে পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

২। আদাঃ এর বেশ কিছু স্বাস্থ্যকর উপকারিতা রয়েছে, যেমন এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারি বা প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এটি হজমেও সাহায্য করে। এটি হয়ত অল্প পরিমাণে বিপাকের মাত্রা বাড়ায় ও খিদে কমায়, ফলে তা থেকে ওজন নিয়ন্ত্রনের একটা সম্ভাবনা আছে বলে ধরা যেতে পারে২০১৭ সালে করা একটি মেটা-বিশ্লেষণ-এ বলা হয়েছে “আদার ব্যবহারে শরীরের ওজন (বিডব্লু), কোমর-থেকে-নিতম্বের অনুপাত (ডব্লুএইচআর), এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ উল্লেখযোগ্যভাবে কম হয়েছে।“ যদিও, অন্যান্য জীবনধারা পরিবর্তন না করে জিরার মতোই, শুধুমাত্র আদা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে না।

৩। লেবুঃ একে বিশেষত ডিটক্সিফিকেশন এবং ওজন কমানোর সাহায্যকারী হিসেবে মনে করা হয় কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে এবং ইউরিন তৈরীতে এর সম্ভাব্য প্রভাব আছে। লেবু জল খেলে শরীর সতেজ হয় এবং এই কম ক্যালোরিযুক্ত পানীয়টি হাইড্রেশনে সাহায্য করে এবং ফলে সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখায় সাহায্য করতে পারে। যদিও, অন্যান্য জীবনধারা পরিবর্তন না করে শুধুমাত্র লেবু ওজন কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে না।

কিন্তু, এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে এই মশলা বা উপাদানগুলি ওজন কমানোর জন্য কোন ম্যজিক বুলেট নয়। এগুলি আপনাকে তখনই সাহায্য করতে পারে যদি আপনি স্বাস্থ্যকর খাবার খান ও সঠিক লাইফস্টাইল মেনে চলেন, কিন্তু এগুলি নিজেরা এককভাবে কাজ করতে পারে না।

ডায়েটে, সঠিকভাবে কাজ করা ও সুস্থভাবে থাকার জন্য আমাদের শরীরের সমস্ত রকম পুষ্টি প্রয়োজন। যখন আমরা ওজন কমানোর চেষ্টা করব তখন আমাদের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে এবং আমাদের জীবনশৈলী বা লাইফস্টাইলে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে।

জিরা, আদা এবং লেবু আপনাকে তৃপ্তি দেয় কারণ জিরাতে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে, আদার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল এবং লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং ফাইবার, এইসব পুষ্টিগুণের জন্য আমাদের শরীর আরাম বোধ করে এবং ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এর প্রভাব দেখা যায় তবে শুধুমাত্র এগুলিই যথেষ্ট নয়, আমাদের শরীরের অন্যান্য পুষ্টিরও প্রয়োজন যেমন ৪৫-৬০% কার্বোহাইড্রেট, ১৫-২০% প্রোটিন এবং মোট বেসাল মেটাবলিক রেট (বিএমআর) এর ২০-২৫% ফ্যাট এবং সেইসঙ্গে অতিরিক্ত ক্যালোরি বার্ন করা ও স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার জন্য ব্যায়ামও প্রয়োজন। তাই স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন কমানোর জন্য সবরকম পুষ্টিসমৃদ্ধ ডায়েট ও ব্যায়াম দুয়েরই সমন্বয় ভীষণভাবে প্রয়োজন।”

যখন ওজন কমানোর কথা আসে, তখন একটি সামগ্রিক পদ্ধতির উপর নজর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ যার মধ্যে একটি সুষম খাদ্যতালিকা মেনে খাওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা কার্যকলাপ, পরিমান নিয়ন্ত্রণ এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার অভ্যাস অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই উপাদানগুলি পুষ্টিকর ডায়েটের অংশ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, তবে ওজন কমানোর জন্য শুধুমাত্র এগুলোর ওপর নির্ভর করলে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যায় না। আপনার নির্দিষ্ট চাহিদা এবং লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে ওজন কমানোর কৌশল সম্পর্কে ব্যক্তিগত পরামর্শের জন্য একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার বা রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের কাছে পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী।

লঙ্কা কি ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে যে কাঁচা লঙ্কা প্রতিদিন খেলে তা ফুসফুসের ক্যানসার থেকে দূরে রাখে। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল।

ফুসফুসের ক্যানসার কী?

ফুসফুসের ক্যানসার হল দ্বিতীয় সর্বাধিক পরিমানে হওয়া ক্যানসার এবং বিশ্বব্যাপী পুরুষ ও মহিলা দুয়েরই মৃত্যুর প্রধান কারণ। এটি অনেক দেশে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমানে স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করেছে এবং এর প্রকোপ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফুসফুসের ক্যানসারের প্রাথমিক কারণ হল ধূমপান, কারণ তামাকের ধোঁয়ায় ৬০ টিরও বেশি পরিচিত কার্সিনোজেন থাকে। পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন (পিএইচএএস), যেমন বেনজো(এ) পাইরিন (বি(এ)পি), তামাকের ধোঁয়ায় পাওয়া কার্সিনোজেনগুলির মধ্যে উল্লাখযোগ্য এবং ফুসফুসের  ক্যানসারের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কোন কোন বিষয়গুলি ফুসফুসের ক্যানসারের কারণ হতে পারে?

১। ধূমপানঃ তামাক ধূমপান ফুসফুসের ক্যানসারের প্রধান কারণ। ধূমপান ছেড়ে দেওয়া বা কখনো শুরু না করা ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।

২। পরোক্ষ ধূমপানঃ ধূমপায়ীদের থেকে নির্গত পরোক্ষ ধোঁয়ার সংস্পর্শ এড়ানো, ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৩। রেডনের সংস্পর্শঃ রেডন একটি প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় গ্যাস যা ঘরে প্রবেশ করতে পারে। রেডনের মাত্রা পরীক্ষা করা এবং সংস্পর্শ কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে।

৪। অ্যাসবেস্টস সংস্পর্শ: অ্যাসবেস্টসের সংস্পর্শ কমিয়ে আনা, এগুলি সাধারণত কিছু কাজের জায়গায় বা পুরানো বাড়িতে পাওয়া যায়, ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৫। অন্যান্য কিছু পদার্থ যা ক্যানসারের কারণ তাদের সংস্পর্শঃ বিশেষ কিছু পদার্থের সংস্পর্শ কম করা বা এড়িয়ে চলা এধরনের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে যেগুলি কার্সিনোজেনিক হিসাবে পরিচিত যেমন তেজস্ক্রিয় আকরিক, আর্সেনিক বা ডিজেল ধোঁয়া

৬। বায়ু দূষণঃ আশেপাশের বায়ু দূষণের সংস্পর্শ কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া, যেমন খুব বেশি পরিমাণে দূষিত এলাকাগুলি এড়ানো বা উপযুক্ত বায়ু শোধনের ব্যবস্থা ব্যবহার করা উপকারী হতে পারে।

৭। ফুসফুসের ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস: যদিও পারিবারিক ইতিহাস পরিবর্তন করা যায় না, তবুও ফুসফুসের ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস যাদের রয়েছে তারা এখনও তাদের সামগ্রিক ঝুঁকি কমাতে তাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকা অন্যান্য ঝুঁকির কারণগুলিকে সংশোধন করার দিকে নজর দিতে পারেন।

নিয়মিত কাঁচা লঙ্কা খাওয়া কী ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে?

এর একটা খুব সামান্য সম্ভাবনা রয়েছে। কাঁচা লঙ্কার মধ্যে পাওয়া ক্যাপসাইসিন নামক একটি যৌগ ফুসফুসের ক্যানসারের কোষে ক্যানসার প্রতিরোধকারী প্রভাব ফেলে। এটি কোষের বৃদ্ধি রোধ করে এবং ক্যানসার কোষের পথ বন্ধ করার কাজ করে, যা ক্যানসার বেড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী। ক্যাপসাইসিন যে পদ্ধতির মাধ্যমে ক্যানসারকে বাধা দেয় তা হল মাইটোকন্ড্রিয়ার ওপর লক্ষ্য স্থির করে এবং মাইটোকন্ড্রিয়াল রেসপিরেশনকে বাধা দেয়। এটি কোষের ভেতরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানোর চেষ্টা করে, এর ফলে ফুসফুসের ক্যানসারের কোষের ক্ষয় হয়। এর থেকে বোঝা যায় যে ক্যাপসাইসিন হয়ত ফুসফুসের ক্যানসারের চিকিৎসায় মাইটোকন্ড্রিয়া-লক্ষ্য করে যা চিকিৎসা রয়েছে সেখানে বিশেষ কাজে আসতে পারে

কিন্তু ক্যাপসাইসিন, কাঁচা লঙ্কার প্রধান সক্রিয় উপাদান, এটির সুরক্ষা এবং ক্যানসারের ক্ষেত্রে এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে বিতর্ক রয়েছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ক্যাপসাইসিন একইসঙ্গে একটি কার্সিনোজেন এবং ক্যানসার রোধকারী এজেন্ট হিসাবে কাজ করতে পারে, কিন্তু পরস্পরবিরোধী মহামারী সংক্রান্ত তথ্য এবং গবেষণার ফলাফলে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রয়েছে। ক্যাপসাইসিন নিউরনগুলিকে সংবেদনশীল করার ক্ষমতার জন্য পরিচিত, যা ব্যথা কমানোর ক্রিমগুলিতে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু, বহুদিন ধরে ক্যাপসাইসিন প্রয়োগ করলে টিউমার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইঁদুরের ত্বকের কার্সিনোজেনেসিস বাড়তে দেখা গেছে। এর থেকে বোঝা যায় যে সূর্যের আলোর মতো টিউমার প্রোমোটারগুলির পাশাপাশি ক্যাপসাইসিন-যুক্ত স্থানীয় বা টপিকাল অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা ভীষণভাবে জরুরী।

বিলাসপুরের অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টারের চিফ রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট ডাঃ সার্থক মোহারির -এর মতে, “ফুসফুসের ক্যানসারের প্রতিরোধের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রতিকারের উপায় হল ধূমপান বন্ধ করা যা ফুসফুসের ক্যানসারের একটি পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকির কারণ। অন্য কোনো ‘প্রাকৃতিক প্রতিকার’ ফুসফুসের ম্যালিগন্যান্সি বা ক্যানসারে কোনরকম প্রতিরোধমূলক ভূমিকা নেয় না।”

 

উচ্চতা বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর খাবার কী তাকে প্রভাবিত করতে পারে?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে বলা হয়েছে গুড় আর পেঁয়াজ মিশিয়ে খেলে দেহের উচ্চতা বৃদ্ধি পায় এমনকি স্বাভাবিক বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেলেও। আমরা এই দাবীর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এটি ভুল, কারণ একবার কারোর উচ্চতা বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেলে এবং উচ্চতা বাড়ার বয়স পেরিয়ে গেলে আর কোন রকম উপায়েই বা কোন কিছু মিশ্রিত খাবার খেলেও তা বাড়তে পারে না।

সত্যানুন্ধান

একজন ব্যক্তির উচ্চতা বৃদ্ধিতে কোন কোন বিষয় দায়ী থাকে?

একজন ব্যক্তির উচ্চতা বৃদ্ধি জিনগত, পুষ্টি ও পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণে নির্ধারিত হয়। জেনেটিক্স একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ একজন ব্যক্তি তার সম্ভাব্য উচ্চতা মূলত তার মা-বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়ে থাকেন। সঠিক পুষ্টি, বিশেষ করে ছোটবেলায় এবং বয়ঃসন্ধির সময়ে, অপরিহার্য পুষ্টির অভাব বৃদ্ধিকে বাধা দিতে পারে বলে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হরমোন, যেমন গ্রোথ হরমোন এবং থাইরয়েড হরমোনও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উপরন্তু, পর্যাপ্ত ঘুম, শারীরিক কাজকর্ম এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পরিবেশের মতো পরিবেশগত কারণগুলি বেড়ে ওঠার বছরগুলিতে সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।

কোন বয়সে কোন ব্যক্তির উচ্চতা বাড়া বন্ধ হয়?

সাধারণত কৈশোর বা টিন এজের শেষের দিকে বা কুড়ির গোড়ার দিকে এসে কোন ব্যক্তির উচ্চতায় বেড়ে যাওয়া বন্ধ হয়। সাধারণত ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে। হাড়ের যে গ্রোথ প্লেট আছে তা বন্ধ হয়ে গেলেই প্রধানত উচ্চতায় বাড়া বন্ধ হয়।

দেহের উচ্চতা বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেলেও কী কোন খাবার তা বাড়াতে সাহায্য করে?

না, কোন ব্যক্তির হাড়ের মধ্যে থাকা গ্রোথ প্লেট বন্ধ হয়ে গেলে উচ্চতা বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়, তা হয় প্রধানত বয়ঃসন্ধির সময়ে বা যৌবনের একেবারে শুরুর সময়ে, বিশেষ কোন ডায়েট ও পুষ্টির ব্যবহারেও এর বেশি বয়সে উচ্চতা বৃদ্ধি সম্ভব নয়। পুষ্টি প্রাথমিকভাবে বেড়ে ওঠার বছরগুলিতে উচ্চতা বৃদ্ধিকে সাহায্য করে যখন শরীর সক্রিয়ভাবে বেড়ে ওঠে। যখন একবার গ্রোথ প্লেট বন্ধ হয়ে যায়, তখন কোনরকম কোন খাবার ও পুষ্টি মানুষের উচ্চতা বাড়াতে কোন কাজে আসে না।

পেঁয়াজ ও গুড় কী উচ্চতা বাড়াতে পারে?

না, কোন মানুষের উচ্চতা পেঁয়াজ ও গুড় বাড়াতে পারে বলে তার স্বপক্ষে কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। উচ্চতা প্রাথমিকভাবে জেনেটিক্স এবং হাড়ের গ্রোথ প্লেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার দ্বারা নির্ধারিত হয়, যা সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালের শেষের দিকে ঘটে। যদিও প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণে ভরা সুষম খাবার খাওয়া সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য জরুরী, কিন্তু এই ধরণের কিছু নির্দিষ্ট খাবার, যোগব্যায়াম বা শরীরচর্চা উচ্চতার বৃদ্ধিতে আপনার জেনেটিক প্রবণতাকে পরিবর্তন করার বা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে তা পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না।

আহমেদাবাদ গুজরাট আমেদাবাদের ইজিকিউর ডায়াবেটিস কেয়ারের সিনিয়র ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান ডিটি হরিতা অধ্যভারায়ু বলেছেন, আপনার উচ্চতা সাধারণত জেনেটিক্স মানে জিনগত বা আপনার পিতামাতার উচ্চতা দ্বারা নির্ধারিত হয়। শৈশব এবং বয়ঃসন্ধিকালে সঠিক পুষ্টি আপনাকে আপনার উচ্চতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু একবার স্কেলিটন বা কঙ্কালের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেলে, কোনো চিকিৎসা বা পুষ্টি আপনার উচ্চতা বাড়াতে সাহায্য করবে না।

হলুদ এবং আদা কি ওজন কমাতে পারে?

সারমর্ম

একটি ফেসবুক পোষ্টের ভিডিও-তে দেখানো হয়েছে ১২ দিন ধরে হলুদ ও আদা মেশানো পানীয় খেলে জিমে না গিয়েও ওজন কমানো যেতে পারে। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল।

Rating

সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে, যেখানে স্বাস্থ্য ও ভালো থাকা প্রায়শই মনোযোগের কেন্দ্রে চলে আসে, সেখানে বেশি পরিমাণে ওজন কমানোর ও ডায়েটের পরামর্শ আসতে থাকা খুবই স্বাভাবিক। এর মধ্যে দুটো উপাদানকে প্রায়শই ওজন কমানোর সম্ভাব্য উপায় বলে পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে তা হল হলুদ ও আদা। প্রথাগত ওষুধপত্রে এ দুটির প্রতিষ্ঠিত ভূমিকা এবং ক্রমবর্ধমান গবেষণায় দেখা গেছে, হলুদ এবং আদাকে ওজন নিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক প্রতিকারের উপায় হিসাবে মনে করা হয়। তথ্যের আদানপ্রদানের এই যুগে, এই দাবিগুলির পিছনে প্রমাণ খুঁজে বের করা এবং ওজন কমানোর জন্য এই  উপাদানগুলি কীভাবে একটি বৃহত্তর পদ্ধতির সাথে কাজ করতে পারে তার সন্ধান করা অত্যন্ত জরুরী।

সত্যানুন্ধান

শরীরের মেদ কমানোর কার্যকরী উপায়গুলি কী কী?

অ্যালকোহল, প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি এবং বেশি পরিমাণে চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার সাথে সাথে ফাইবার এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি সুষম খাবারের তালিকা মেনে খাবার খেলে চর্বি কমানো সম্ভব। ব্যায়াম, শারীরিক কসরত এবং সাঁতারের মতো শারীরিক কাজকর্মে নিযুক্ত থাকলে চর্বি কমানোর জন্য তা কার্যকর হতে পারে। ভিসেরাল ফ্যাট, বিশেষত, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ সহ শারীরিক সমস্যা তৈরী করে। সুতরাং, অতিরিক্ত চর্বি ঝরানো এবং স্বাস্থ্যকর বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ডিসঅর্ডার বা পিসিওএস এর মত শারীরিক সমস্যার কারণে ওজন বাড়তে পারে, ওজন কমানোর জন্য এই ধরণের সমস্যার চিকিৎসা প্রয়োজন।

অমৃতা সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন আয়ুর্বেদের (অ্যাকারা) রিসার্চ ডিরেক্টর, ডাঃ পি রামমনোহর বলেছেন, আয়ুর্বেদ অনুসারে ওবেসিটি অর্থাৎ মোটা হওয়া বা চর্বি কমানো খুব সমস্যাজনক একটি বিষয়। আয়ুর্বেদের গ্রন্থে এমনকি বলা হয়েছে, এই অবস্থা প্রায় না সারার মতোই – না হি স্থূলস্য ভেষজম। মোটা থেকে রোগা হওয়ার জন্য ম্যাজিকের মত কোন সমাধান নেই। পরিবর্তে, এর চিকিৎসায় প্রাথমিকভাবে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, একটি উপযুক্ত লাইফস্টাইল বা জীবনধারা মেনে চলা এবং একটি নির্দিষ্ট ডায়েট মেনে খাবার খাওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়। এই সমস্যায় ওষুধ, তা অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক যাই হোক না কেন, একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে মাত্র। চিকিৎসার কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় যখন রোগীরা স্থূলতার মত সমস্যা মোকাবিলায় একটি ব্যাপক, নিজস্ব পদ্ধতি মেনে চলে।

হলুদ আর আদা ওজন কমাতে পারে এর কী কোন প্রমাণ আছে?

ওজন নিয়ন্ত্রণে হলুদ ও আদার কিছু সম্ভাব্য উপকারিতা রয়েছে। হলুদে আছে কারকিউমিন, যাতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য এবং তা ফ্যাট টিস্যু নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। আদা মেটাবলিজম বা বিপাক প্রক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে এবং এটি পূর্ণতার অনুভূতি হয়।

তবে, এই দুটি উপাদান দিয়ে ওজন কমানোর বিষয়টি অল্প পরিমাণে হতে পারে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের বৃহত্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একে ধরা যেতে পারে। সুষম খাবার খাওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং লাইফস্টাইলের বিষয়গুলি যথাযথ ভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণের উপায় হতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকার মধ্যে হলুদ ও আদা থাকতেই পারে, কিন্তু এগুলি কোনভাবেই ওজন কমানোর নিশ্চিত সমাধান নয়

অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইলের সঙ্গে ১২ দিন ধরে হলুদ ও আদার মিশ্রণ খাওয়া কোন রকম ভাবে ওজন কমাতে পারে না, বরং সুষম খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত শরীর চর্চা করলে কার্যকরীভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

গুজরাট, আমেদাবাদের সিনিয়র ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান ডিটি হরিতা অধ্যভারায়ু বলেছেন, “হলুদ এবং আদা ওজন কমানোর জন্য একটি অলৌকিক চমৎকার ভেষজ হিসাবে মনে করা হয় তবে সত্যি কথা বলতে কি ওজন কমানোর কোনও শর্টকাট উপায় নেই। হলুদে যে ধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য আছে তা হল কারকিউমিন যা ইনফ্ল্যামেশন কমাতে সাহায্য করে, মেটাবলিজম বা বিপাক বাড়ায় এবং ফ্রি র‌্যাডিক্যালস থেকে রক্ষা করে। এটা ঠিক যে হলুদ ফ্যাট টিস্যু বৃদ্ধিকে কমায় কিন্তু ওজন কমানো একটি সামগ্রিক স্বাস্থ্য পদ্ধতি। এর জন্য কোন একটি বিশেষ খাবারের উপাদান নেই। কেউ একজন তার প্রত্যেক খাবারে অবশ্যই হলুদ রাখতে পারেন। কিন্তু যদি আপনি ওজন কম করতে চান তার সঙ্গে ক্যালোরি কম রাখার বিষয়টিও মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্যকর ভাবে ওজন কমাতে হলে সঠিক খাবার ও শরীরচর্চা দুটোই চালিয়ে যেতে হবে। আদা অক্সিডেটিভ স্ট্রেসকে বাধা দেয়, এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এটি কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করে। ধমনীতে ক্ষতিকারক চর্বি জমা কমাতে সাহায্য করে। আদা খেলে ক্যালোরি বার্ণের পরিমাণ বাড়ে এবং খিদে কমাতে পারে, এবং এটি অতিরিক্ত ওজনের প্রাপ্তবয়স্কদের ওজন কমানোয় কাজ করতে পারে। কিন্তু এটি শুধুমাত্র আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং  ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে পারে। কিন্তু শুধুমাত্র আদা খেয়েই ওজন কমানো যায় বলে যে ধারণা আছে তা ঠিক নয়।“

কোকা-কোলা মিশ্রিত পানীয় কী পেকে যাওয়া চুল কালো করতে পারে?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে কোকা-কোলা, সয়া সস এবং চারকোল বা কয়লার মিশ্রণ লাগালে পেকে যাওয়া চুল কালো হয়ে যায়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী ভুল

rating

দাবি

কোল্ড ড্রিঙ্কস বা কোকা কোলা ব্যবহার করে পাকা চুল কালো করার এক অভিনব উপায় সোশ্যাল মিডিয়া তে খুব ভাইরাল হয়েছে । সেরকম একটা পোস্ট দেখা যাবে এখানে।

সত্যানুন্ধান

আমাদের চুল পাকে বা সাদা হয়ে যায় কেন?

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে চুল পেকে যাওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। হার্ভার্ড হেলথ জানিয়েছে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলের ফলিকলগুলির রঙ তৈরীর পরিমাণ কমে যায়, তাই যখন চুল তার স্বাভাবিক পড়ে যাওয়া এবং আবার গজিয়ে ওঠার পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যায়, মানুষের ৩৫ বছর বয়সে এই পর্যায়ে চুল সাদা হয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। এই প্রক্রিয়ায় জিনঘটিত কারণের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

এছাড়া, বিভিন্ন রকম শারীরিক অবস্থার কারণের জন্যও সময়ের আগে চুল পেকে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, যা অকালপক্কতা নামে বিশেষ পরিচিত। এই কারণগুলির মধ্যে রয়েছে ভিটামিনের অভাব, থাইরয়েডের রোগ, ভিটিলিগো এবং অ্যালোপেশিয়া। অনেকে মনে করেন স্ট্রেস বা মানসিক চাপের জন্যও চুল পেকে যেতে পারে। যদিও, এই ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে খুব কমই বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়। গবেষণায় এমনও বলা হয়েছে যে মানসিক চাপের কারণে ইঁদুরেরও লোম সাদা হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এই অবস্থা মানুষের মধ্যে কতটা প্রভাব ফেলে তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

পাকা চুল কী আবার কালো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়?

না। অনেক রকম পণ্যের নানারকম বিজ্ঞাপনী দাবী সত্ত্বেও বলা যায় যে পেকে যাওয়া চুল আর কখনই আগের মত কালো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় না। প্রসাধনী চুলের রঙ লাগানোকে বাদ দিলে বলা যায় একবার চুলের ফলিকল রঙ তৈরী করে দেওয়ার পর তা আর পরিবর্তন করা যায় না। হার্ভার্ড ব্লগ জানিয়েছে যদি একটি মাত্র চুলের গুছির রঙ বাদামী (অথবা লাল বা কালো বা সোনালী) হয়, তাহলে আর কখনোই তার রঙ বদলানো যায় না (যদি না আপনি চুলে রঙ করেন )।

পার্সিয়ানলিলি – ত্বক/চুল/অ্যাস্থেটিক্স/আয়ুর্বেদ ক্লিনিকের ডার্মাটোলজিষ্ট এবং মেডিকেল ডিরেক্টর, ডাঃ স্বাতী ওয়াতওয়ানি বলেছেন, “আপনার বয়স ৪০ এর শেষে এবং ৫০ এর গোড়ায় পৌঁছায় তখন চুলে পাক ধরতে শুরু করে। সময়ের আগে চুল পেকে যাওয়া ২০ বছর বয়স থেকেই শুরু হতে পারে। তাই অকালপক্কতার কারণ খুঁজে তার চিকিৎসা করলে পেকে যাওয়ার প্রক্রিয়াটির গতি কমানো যেতে পারে। কিন্তু একে একেবারে উলটো করে ফেলা বা পাকা চুল কালো করে দেওয়া সম্ভব নয়।“

কোকা-কোলা মিশ্রিত পানীয় কী ৪ মিনিটের মধ্যেই পেকে যাওয়া চুল কালো করতে পারে?

না। কোকা-কোলা, সয়া সস, মধু বা কয়লা পাকা চুল আবার কালো অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারে না। চুল সাদা হয়ে যাওয়ার অর্থ হল ত্বকে মেলানিন, তৈরী হওয়া কমে যাওয়া, আর এভাবেই স্বাভাবিক ভাবে বয়স বেড়ে ওঠে। এই ধরনের সাধারন খাবার-দাবার ও গৃহস্থালীর সামগ্রীগুলির স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া কে উলটো দিকে ঘুরিয়ে দেবার কোন ক্ষমতা নেই। এছাড়া, ৪ মিনিটের মধ্যে ম্যাজিকের মত পাকা চুল কালো করে দেওয়া অসম্ভব।

ডাঃ রত্নাকর শুক্লা, এমবিবিএস, এমডি, ডার্মাজেনিক্সের কনসালটেন্ট বলেছেন, “কোকা-কোলা এবং এরকম অন্যান্য পানীয়তে ফসফোরিক অ্যাসিড থাকে যার পিএইচ এর মাত্রা খুব কম, যা চুলের কিউটিকলকে শক্ত করে ও চকচকে রাখে। কিন্তু এর ফলেই অকালপক্কতা তৈরী হয়। এরিএটেড ড্রিঙ্কসের মধ্যে সোডা থাকে, এতে অনেক পরিমাণে চিনি ও রঙ থাকে যা আপনার চুলের ক্ষতি করে। এরকমভাবে, চুলের জন্য কয়লার কিছু উপকারিতা রয়েছে, এটি এক্সফলিয়েট করে, সেইসঙ্গে ডিটক্সিফাই করে, জমা তেল, ময়লা তুলে দেয়।

কসালটেন্ট ডার্মাটোলজিষ্ট ও কসমেটোলজিষ্ট ডাঃ রীনা মাজিথা, আরো জানিয়েছেন, “চুল সাদা হয়ে যাওয়া মূলত স্বাভাবিক বয়স বেড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া এবং বেশ কিছু জিনঘটিত বিষয় এতে কাজ করে। চুলের ফলিকলের পিগমেন্ট তৈরী করার কোষগুলি ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দিলে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। পিগমেন্ট তৈরী কমে আসার জন্যই চুল দেখতে ধূসর বা সাদা হতে শুরু করে।

এছাড়া, মধু হচ্ছে স্বাভাবিক ময়েশ্চারাইজার এবং ত্বক ও স্কাল্প এবং সেইসঙ্গে চুলে এটি আর্দ্রতা যোগায়। এর প্রাকৃতিক হিউমেক্ট্যান্ট গুণ আর্দ্রতাকে আটকে রাখতে এবং ট্রান্সপিডার্মাল জলের ক্ষতি রোধ করতে কাজ করে। মধুর অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারি বৈশিষ্ট্যের জন্য তা খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। মধু চুলের ক্ষতি রোধ করে, চুলকে শক্ত করে এবং চুলের ডগা ভেঙে যাওয়া থেকে রক্ষা করে ফলে চুল লম্বায় বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। তবে এতে চটচটে ভাব হতে পারে এবং কোন কোন মানুষের এতে অ্যালার্জি থাকতে পারে।

সব শেষে বলা যায়, চারকোল ব্লিচ ব্যবহারে হাইড্রোজেন পারক্সাইডের মতো রাসায়নিক জড়িত থাকে, যা ত্বকের উপর প্রদাহ বা জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে এবং চুলের ক্ষতি করতে পারে, বিশেষ করে যখন এটি খুব বেশি মাত্রায় ব্যবহার করা হয় বা সতর্কতা অবলম্বন করা না হয়।”

সঠিক জ্ঞান বা নির্দেশ ছাড়া আপনার চুলে এইরকম  জিনিস ব্যবহার করার চেষ্টা করলে তা ক্ষতিকারক হতে পারে। চুলের অপ্রচলিত চিকিৎসা সম্পর্কে সতর্ক হওয়া জরুরী, কারণ তা নিরাপদ নাও হতে পারে এবং এতে উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে।

মানুষ বেশ কিছু ঘরোয়া উপায়ে বিশ্বাস করে যেমন নাকে তেল দিলে চুল পেকে যেতে পারে, টমেটো এবং কফি ব্যবহার করলে সাদা চুল কালো হয়ে যেতে পারে, পেঁয়াজের রস লাগালে চুল সাদা থেকে কালো হয়ে যেতে পারে ইত্যাদি এবং এরকম আরও অনেককিছু। তাই আপনি যদি চুল পেকে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হন বা এই সমস্যাটির সমাধান করতে চান তবে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বা একজন যোগ্যতাসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করুন যিনি আপনার সাদা চুলের জন্য সঠিক পরামর্শ বা রঙ করার জন্য উপযুক্ত নির্দেশ এবং সুপারিশ করতে পারেন।