Last Updated on March 11, 2024 by Urmimala Sengupta
সারমর্ম
একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে যে রসুন খেলে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার কমে যায়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবীর অর্ধেকটা ঠিক।
দাবি
সোশ্যাল মিডিয়াতে ভ্রান্তিকর পোস্ট অনেক ছড়িয়ে আছে যেখানে বলা হয়েছে যে রসুন খেলে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার কমে যায়। এইরকম একটি পোস্ট এইখানে দেখা যাবে।
সত্যানুন্ধান
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার কী?
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার-কে হাইপার টেনশনও বলা হয়। এটা এমন এক অবস্থা যখন আর্টারির বা ধমনীর দেয়ালের গায়ে রক্তের বেগ ক্রমাগত খুব বেশী মাত্রায় চাপ দেয়, যা পারদের মিলিমিটারে (mmHg) মাপা হয়। স্বাভাবিক ব্লাড প্রেসার মোটামুটি ১২০/৮০ mmHg থাকে, কিন্তু হাইপারটেনশনের রিডিং ধারাবাহিকভাবে ১৩০/৮০ mmHg -এর বেশী থাকে। হার্টের অসুখ, স্ট্রোক এবং কিডনির অসুখে এটা খুব বড় ঝুঁকি বা রিস্ক ফ্যাকটর বলে মনে করা হয়। লাইফস্টাইলের পরিবর্তন ও ওষুধের মাধ্যমে এই সমস্যার সাধারণভাবে মোকাবিলা করা হয়। নিয়মিত নজর করা বা মনিটরিং ও প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবস্থা নেওয়া এক্ষেত্রে জরুরি।
উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা কী?
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে লাইফস্টাইলের পরিবর্তন আর অবশ্যই ওষুধের প্রয়োজন। লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, মদ বা অ্যালকোহলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ এবং ধূমপান ছেড়ে দেওয়া। ওষুধের মধ্যে ডায়ুরেটিক্স, বিটা-ব্লকার ও অন্যান্য ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। সারা জীবন ধরে কার্যকরভাবে এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং পরিকল্পনা মাফিক চিকিৎসার ধারাবাহিকতা প্রয়োজন।
ডায়েট কী হাই ব্লাড প্রেসার কমাতে পারে?
কিছুটা পারে। যদিও শুধুমাত্র কোন একটি বিশেষ খাবার উচ্চ রক্তচাপ সারাতে পারে না, তবে এটি উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা কমাতে ও এই অবস্থার মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে খাবারের ওপরই শুধুমাত্র নির্ভর করা উচিৎ নয় এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রকৃত উৎস কী তা জানা জরুরি।
উদাহরণ হিসেবে, যখন আলোচনা চলছিল যে রক সল্ট বা সৈন্ধব লবণ উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পারে কিনা, সেই প্রসঙ্গে ডায়েটেশিয়ান কামনা চৌহান জানান, “অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরে জলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এর থেকে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় ও তার ফলে হার্টে আরো চাপ তৈরী হয়। দিনে ৬গ্রাম করে সোডিয়াম গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের জন্য এই পরিমাণ ৩.৭৫গ্রাম। সাধারণ টেবিল নুনের থেকে সৈন্ধব লবণে অ্যাডিটিভ কম থাকে বলে একে স্বাস্থ্যকর বিকল্প বলা যেতে পারে। তবুও, সর্বাধিক পরিমাণে এর গুণ পেতে হলে এটিও পরিমিত পরিমাণেই খাওয়া উচিৎ।“
মোটের ওপর, হার্ট ভালো রাখার উপযোগী স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে কার্ডিওভাসকুলার কাজকর্ম ভালো হয় ও হাইপারটেনশনও নিয়ন্ত্রণে থাকে। উচ্চ রক্তচাপ বন্ধ করার জন্য ডায়েটারি অ্যাপ্রোচ (ড্যাশ) ডায়েট প্রায়ই উচ্চ রক্তচাপযুক্ত ব্যক্তিদেরকে পরামর্শ করা হয়।
এই ধরণের ডায়েট উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ফল খাওয়া, শাকসবজি, গোটা শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কম করা। সেইসঙ্গে, লাইফস্টাইলের পরিবর্তন এর মধ্যে রয়েছে ব্যায়াম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণও যথেষ্ট জরুরি। এছাড়াও এটা মনে রাখা দরকার ব্যক্তিবিশেষে এই জিনিসগুলোর প্রভাব পরিবর্তিত হয়, এবং একটি সামগ্রিক চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রয়োজন যার মধ্যে রয়েছে ওষুধপত্র। তাই, স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হল এসমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য বিশেষ জরুরি।
রসুনের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত উপকারিতাগুলি কী কী?
রসুন খেলে বেশ কিছু স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপকারিতা পাওয়া যায়।
নিচে এর কিছু কিছু বলা হয়েছে।
- হার্ট-এর স্বাস্থ্যঃ রসুন ব্লাড প্রেসার ও কোলেস্টরেলের মাত্রা কমাতে পারে।
- রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাঃ এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদানগুলির জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি হতে পারে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের প্রভাবঃ রসুনে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ রয়েছে যা ফ্রি র্যাডিক্যালসকে মেরে ফেলতে পারে।
- অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারিঃ এটি শরীরে ইনফ্ল্যামেশন কমাতে পারে, যেমন আর্থাইটিস এর সমস্যায় কাজ করতে পারে।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালঃ রসুনে রয়েছে স্বাভাবিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য, যা ইনফেকশন বা সংক্রমণ রোধ করে।
রসুন, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার স্থানীয় একটি ফসল, এর হাজার হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। মিশরীয়, ভারতীয়, ব্যাবিলনীয় এবং চীনাদের মতো প্রাচীন সংস্কৃতিতে এর ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে, এটি প্রাচীনতম পরিচিত ঔষধি এবং সুগন্ধি ফসলের মধ্যে একটি বলে পরিচিত। এমনকি প্রাচীন গ্রীসে অলিম্পিক খেলোয়াড়দেরও রসুন দেওয়া হত” ।
রসুন খেলে কী উচ্চ রক্তচাপ কমে?
হয়তো। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে রসুনের সামান্য প্রভাব রয়েছে বলে কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। রসুনে অ্যালিসিন রয়েছে, এটি একটি যৌগ যার স্বাস্থ্য ভালো রাখার বিভিন্নগুণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে রক্তচাপ কমানোর সম্ভাব্য প্রভাব। কিন্তু, অল্পই কিছু প্রমাণ রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে রসুন খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে।
আমাদের অন্য একটি ফ্যাক্ট চেকের ঘটনায়, ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডাঃ প্রিয়জিৎ পানিগ্রাহি, এমবিবিএস, ডিএনবি, এবং এমএনএএমএস জানিয়েছেন যে রসুনে অ্যালিসিন এবং অ্যালাইনের মতো বায়োঅ্যাকটিভ উপাদান রয়েছে, যার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, কার্ডিওভাসকুলার রক্ষাকারী প্রভাব এবং আরও অনেক কিছু রয়েছে, যার মধ্যে অ্যান্টিক্যানসার এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, কিছু গবেষণায় খুব কম সাইড এফেক্ট থাকা রসুনের কার্যকারিতাকে সাধারণ ব্লাড প্রেসার কমানোর ওষুধের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণায় লক্ষ্য করা গেছে যে রসুনের পরিপূরক বা সাপ্লিমেন্টগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ কমাতে পারে।
এটি লক্ষণীয় যে রসুনের রক্তচাপ-কমানোর প্রভাবগুলি সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য বলে মনে হয়, তবে তা রক্তচাপ ঠিক থাকা মানুষদের থেকে, উচ্চ রক্তচাপ আছে এমন মানুষদের মধ্যে বেশি কাজ করে।
এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে রসুন আপনার খাদ্যতালিকা বা ডায়েটে একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে, তবে তা চিকিৎসার বিকল্প কিন্তু নয়। যদি আপনার উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে সঠিক পরামর্শ ও সাহায্যের জন্য স্বাস্থ্যপরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি। তারা আপনাকে, আপনার উপযোগী খাবার, ব্যায়াম এবং ওষুধের ব্যাপারে পরামর্শ দেবেন।
উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করতে হলে, আপনাকে রান্নায় যতটা পরিমাণ ব্যবহার করা হয় তার থেকে বেশ কিছুটা বেশি পরিমাণে রসুন খেতে হবে। নির্দ্দিষ্ট ওষুধের বিকল্প হিসাবে রসুনকে বিবেচনা করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা জরুরি, কারণ এই ব্যবস্থা ক্ষতিকারক হতে পারে। আপনার স্বাস্থ্য পরিকল্পনার মধ্যে রসুনের অন্তর্ভুক্তি একটি বৃহত্তর পদ্ধতির অংশ হওয়া উচিত, যার মধ্যে থাকবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা বা ডায়েট, ব্যায়াম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের মতো লাইফস্টাইল পরিবর্তন, যার মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
জেনারেল ফিজিশিয়ান ডাঃ কাশ্যপ দক্ষিনী জানিয়েছেন, “নির্ভরযোগ্য মেডিকেল জার্নালে এমন তথ্য রয়েছে যা প্রমাণ করে যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য রসুন উপকারী। তবুও, হাই ব্লাড প্রেসার হলো একটি মেডিকেল অবস্থা যার জন্য একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা প্রয়োজন।“ব্যক্তি বিশেষে রসুন খেলে বিভিন্ন রকম সাইড এফেক্ট হতে পারে। সাধারণ সাইড এফেক্টের মধ্যে রয়েছে নিঃশ্বাস ও শরীরে দুর্গন্ধ, বুকজ্বালা এবং পেট খারাপ। কাঁচা রসুন এই সাইড এফেক্টের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। কিছু মানুষের এর থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। রসুনের সাপ্লিমেন্টগুলি রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে, বিশেষ করে যখন ওয়ারফারিনের মতো অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট ওষুধ চলাকালীন তা খাওয়া হয়। আপনি যদি রসুনের সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার পরিকল্পনা করেন, বিশেষ করে অস্ত্রোপচারের আগে বা আপনার যদি অ্যান্টিকোয়গুল্যান্ট ওষুধ চলাকালীন তা হয় তবে আপনার স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে বিষয়টি জানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রসুনের সাপ্লিমেন্টগুলি নির্দিষ্ট ওষুধের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যেমন এইচআইভি চিকিৎসায় ব্যবহৃত সাকুইনভির ওষুধের ব্যবহার চলাকালীন। এছাড়াও, অন্যান্য ভেষজ খাদ্য বা ডায়েটারি হার্ব এবং সাপ্লিমেন্টের সংযোগ হতে পারে ঠিকই, কিন্তু আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও ওষুধের পদ্ধতির সাথে এর সামঞ্জস্য তৈরীর জন্য আপনার স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
Disclaimer: Medical Science is an ever evolving field. We strive to keep this page updated. In case you notice any discrepancy in the content, please inform us at [email protected]. You can futher read our Correction Policy here. Never disregard professional medical advice or delay seeking medical treatment because of something you have read on or accessed through this website or it's social media channels. Read our Full Disclaimer Here for further information.