Home Blog Page 3

ভেষজ পাউডার কী দাঁতের গর্ত দূর করতে পারে?

সারমর্ম

একটি পোষ্ট চারিদিকে প্রচারিত হচ্ছে যেখানে দাবী করা হয়েছে ডিমের খোলার গুঁড়ো, বেকিং সোডা, নিম পাতার গুঁড়ো, দারুচিনির গুঁড়ো, লবঙ্গ গুঁড়ো এবং নারকোল তেলের মিশ্রণ একটি ভেষজ উপায় যা দিয়ে দাঁতের মধ্যে তৈরী হওয়া গর্ত সেরে যায়। কিন্তু আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল।

Rating

দাবি

বাড়িতেই ভেষজ পাউডার বানিয়ে দাঁত মাজলে ক্যাভিটি ও ব্যথা-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন – এই দাবি নিয়ে একটি পোস্ট এখানে দেখা যাবে । সোশ্যাল মিডিয়াতে এই ধরণের ভ্রান্তিকর পোস্ট আরো অনেক ছড়িয়ে আছে । প্রতিটি পোস্টে বিভিন্ন আলাদা আলাদা ভেষজ উপাদান ব্যবহারের কথা বললেও মূল দাবিটি এক – দন্ত চিকিৎসককে ছাড়াই দাঁতের ক্ষয় ঠিক করা যাবে ।

সত্যানুন্ধান

দাঁতের গর্ত কী এবং এটা কীভাবে হয়?

যখন মুখের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া অ্যাসিড তৈরী করে দাঁতের এনামেলকে ক্ষয় বা ডিমানারেলাইজড করে দেয় তখন দাঁতের গর্ত তৈরী হয়, যাকে কেরিস বা দাঁতের ক্ষয় বলে। এখান থেকে ছোট গর্ত বা গহ্বর তৈরী হয়। সাধারণত প্রায়শই মিষ্টি জিনিস বা স্টার্চ জাতীয় খাবার থেকে বা মুখের ভেতরের স্বাস্থ্যবিধি না মানার ফলে এইধরনের অ্যাসিডের ক্ষয় হয়। এর প্রথম লক্ষণ হল দাঁতে সাদা দাগ তৈরী হওয়া, এতেই বোঝা যায় এনামেল থেকে মিনারেল ক্ষয়ে যাচ্ছে। সৌভাগ্যবশত, এই পর্যায় মুখের লালারসের মধ্যে থাকা মিনারেল, টুথপেষ্টের ফ্লোরাইড বা দাঁতের বিশেষজ্ঞের সাহায্যে এনামেল নিজে থেকে পরিস্থিতি ঠিক করে নিতে পারে।

কিন্তু, যদি এই ক্ষয় চলতেই থাকে, এতে অনেক পরিমাণ মিনারেল নষ্ট হয়ে যায়, এতে এনামেল দূর্বল হয়ে পড়ে এবং ফলস্বরূপ দাঁতের মধ্যে স্থায়ীভাবে গর্ত হয়ে যায়। একে সারিয়ে তোলার জন্য এবং আর যাতে গর্ত না হয় তার জন্য ডেন্টিস্টরা দাঁতের মধ্যে ফিলিং করে দেন। দাঁত কে ঠিক রাখতে এবং গর্ত যাতে না হয় তার জন্য এই প্রক্রিয়াটি বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ভেষজ পাউডার ব্যবহার করে দাঁতের গর্ত কী দূর করা সম্ভব?

না, এরকম হয় না। মুখের ভেতরের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রাকৃতিক প্রতিকারের জনপ্রিয়তা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ অনেক মানুষ প্রচলিত দাঁতের চিকিতসার বিকল্প খুঁজছেন। এমন একটি উপায় যা ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়েছে তা হল ডিমের খোসা, বেকিং সোডা এবং নারকেল তেলের মিশ্রণ, যার ব্যবহারে দাঁতের গর্ত ভরাট হয়ে যায় বলে দাবি করা হয়।

তবে, দাঁতের গর্তের চিকিৎসার জন্য ভেষজ পাউডার ব্যবহারের কার্যকারিতার স্বপক্ষে পর্যাপ্ত কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

ডিমের খোলা বা এগশেল পাউডার (ইএসপি) একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসাবে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে যা দাঁতের গর্তের চিকিৎসায় উপকারী বলে বিশ্বাস করা হয়। এটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ফসফেট, জৈব পদার্থ এবং ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট রয়েছে, কিন্তু স্ট্রন্টিয়াম, ফ্লোরাইড, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক এবং কপার আয়ন কম থাকে। ইএসপি হাড় এবং দাঁতের মেটাবলিজমের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং উঁচু-মানের হাইড্রোক্সাপাটাইট গঠন করতে পারে বলে দেখা গেছে। তবে, এটা মনে রাখা দরকার যে ইএসপি শুধু এনামেল গর্তকে আটকাতে পারেল্যাবরেটরি টেস্টে ইএসপি তার কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে, যদিও বাস্তব জগতে এর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। এছাড়াও, দাঁতের ভেতরের স্তরে এই গর্ত গভীর হলে এই উপায় কোন কাজ করে না। এরকম ক্ষেত্রে, আরো বেশি ক্ষত হওয়া থেকে দূরে থাকতে হলে পেশাদারী দাঁতের চিকিৎসার সাহায্য নেওয়া জরুরী।

নারকোল তেল মুখের স্বাস্থ্যবিধি ও দাঁতের গর্ত প্রতিরোধের সঙ্গে যুক্ত নয়। যদিও এধরনের গর্তগুলিকে সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলার সমাধান না হলেও, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে মুখে অয়েল-পুলিং বা নারকেল তেল সুইশিং করানো ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং প্লাক জমা কম করে মৌখিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে। নারকোল তেলের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য মুখে ব্যাকটেরিয়া কমিয়ে দিতে সাহায্য করে এবং ক্রমাগত ব্যবহারে নতুন করে ক্যাভিটি তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা রোধ করে। বেকিং সোডা সাধারণত দাঁতের দাগ দূর করতে এবং নতুন করে দাগ ধরতে ও প্লাক জমা রোধ করতে ঘরোয়া উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর ক্ষারীয় বা অ্যালকালাইন বৈশিষ্ট্য মুখে অ্যাসিডের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে, যা হয়ত ক্যাভিটি তৈরী হওয়াও রোধ করতে সাহায্য করে। তবে, এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, এটির ঘষে ফেলা প্রকৃতির কারণে, বেকিং সোডার অত্যধিক বা অনুপযুক্ত ব্যবহার দাঁতের ক্ষতি করতে পারে। আপনার মুখের ভেতরের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নিয়মিত বেকিং সোডার ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এটি লক্ষণীয় যে দাঁতের গর্তের প্রতিকারের জন্য প্রাকৃতিক উপায়গুলি জনপ্রিয়, তবে তাদের কার্যকারিতার স্বপক্ষে বিশেষ কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। দাঁতের গর্তের প্রতিরোধে এবং মুখের ভেতরের স্বাস্থ্য ভালো রাখার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হল দাঁতের যত্ন এবং পেশাদার নির্দেশিকা মেনে চলা। আমরা যখন ডেন্টাল সার্জেন ও সার্টিফায়েড ইমপ্লান্টোলজিষ্ট, ডাঃ গগনদীপ সোধি (বিডিএস) কে ঘরোয়া উপায়ে তৈরী মিশ্রণ ডিমের খোলার পাউডার, বেকিং সোডা ও নারকোল তেল দাঁতের গর্ত সারিয়ে তুলতে পারে কিনা তা নিয়ে জানতে চেয়েছিলাম তখন তিনি বলেন যে, এই ভেষজ মিশ্রণটি  ডেন্টাল কেরিসের জন্য কোন স্বীকৃত বা বৈধ চিকিৎসা নয়। দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া সাধারণত যাকে বলা হয় দাঁতের গর্ত বা দাঁতের পোকা, এমনই একটি অবস্থা যা সারাতে পেশাদারী দাঁতের বিশেষজ্ঞর সাহায্য প্রয়োজন হয়, এতে ফিলিং বা অন্য কোন চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয় যাতে সঠিকভাবে দাঁতের গঠনকে পুনরায় ঠিক করা যায়। সঠিক ভাবে দাঁতের যত্ন ও দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে অবশ্যই একজন ডেন্টিস্টের সাহায্য নেওয়া জরুরী।

কীভাবে দাঁতে গর্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়?

দাঁতের গর্ত হওয়া রোধ করতে হলে ফ্লোরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করা এবং প্রতিদিন ফ্লসিং করে খুব ভালোভাবে মুখের ভেতরের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, সেইসঙ্গে সঠিক খাবার খাওয়া যেখানে শর্করা বা চিনি কম থাকে এবং অ্যাসিডিক খাবারের পরিমাণ কম থাকে তার দিকে নজর দেওয়া জরুরী। নিয়মিত ডেন্টাল চেক-আপও দাঁতের গর্তের প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং পেশাদার পরিষ্কার পদ্ধতি পালনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গর্ত আটকাতে দাঁতের চেবানোর জায়গাগুলিতে ডেন্টাল সিল্যান্ট ব্যবহার করা যেতে পারে, আবার  অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মাউথওয়াশ ব্যবহার করে গর্ত বেড়ে ওঠাকে রোধ করা যেতে পারে। যদি ক্যাভিটি সনাক্ত করা যায় তবে পেশাদারী দাঁতের বিশেষজ্ঞরা এর চিকিৎসার জন্য ফিলিং বা ক্রাউনের সাহায্য নিয়ে থাকেন। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চলা যেমন, তামাক বর্জন বা ব্রুক্সিজমের জন্য নাইটগার্ড ব্যবহার করা ক্যাভিটি ম্যনেজমেন্টের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। বাড়িতে সঠিক যত্নের সঙ্গে নিয়মিত দাঁতের চেকআপ-এর সাহায্যে আপনি দীর্ঘকাল ধরে মুখের ভেতরের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারবেন এবং অনেক গুরুতর সমস্যার মোকাবিলা করতে পারবেন।

নাটমেগ (জায়ফল) কী কালো দাগ দূর করতে পারে?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে নাটমেগ বা জায়ফল কালো দাগ দূর করতে পারে ও ত্বককে কমবয়সী করে তোলে। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল।

Rating

দাবি

এক যাদুকরী ফেস প্যাক হিসেবে জায়ফলকে প্রচার করা হয় বহু সোশ্যাল এড়িয়ে পোস্ট এবং রূপচর্চার ব্লগ এ । সেরকম একটি পোস্ট দেখা যাবে এখানে

সত্যানুন্ধান

ডার্ক স্পট এবং হাইপার পিগমেন্টেশন হওয়ার কারণ কি?

ডার্ক স্পট বা কালো দাগ এবং হাইপারপিগমেন্টেশন মেলানিনের প্রচুর মাত্রায় তৈরী হওয়ার কারণে হয়। আমাদের ত্বক, চুল এবং চোখের রঙ তৈরী হয় এই পিগমেন্টটির জন্য। মেলানিন মেলানোসাইট নামক বিশেষ কোষ থেকে তৈরী হয়। যখন এই কোষগুলি অত্যধিক সক্রিয় হয় বা বিভিন্ন কারণের জন্য উদ্দীপিত হয়ে ওঠে, তখন তারা আরও বেশি মেলানিন তৈরি করে, যার ফলে ত্বকে কালো দাগ এবং প্যাচ দেখা দেয়।

কালো দাগ এবং হাইপারপিগমেন্টেশনের বৃদ্ধিতে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:

নাটমেগ বা জায়ফল দিয়ে বানানো মিশ্রণ লাগালে কী কালো দাগ দূর হয়?

ঠিক তা নয়। কালো দাগের কোন স্থায়ী সমাধান নেই, তবে, বেশ কয়েকটি চিকিৎসার উপায় আছে যার থেকে একে হালকা করে তোলা যায় বা নতুন করে কালো দাগ তৈরী হওয়াকে আটকানো যায়। নাটমেগ মুখে কালো দাগ সারাতে পারে চিকিৎসার ক্ষেত্রে এখনও এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তবে নাটমেগের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিওক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যের জন্য ত্বকের সমস্যায় এর থেকে কিছু উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু তা কালো দাগ সারাতে পারে কিনা এর স্বপক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ খুব সামান্যই আছে। মাইস্ট্রিসিন নামে নাটমেগে একধরনের যৌগ আছে যা মেলানিন তৈরী হওয়া আটকাতে পারে। ত্বকের ওপর নাটমেগের প্রভাবের বিষয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে হাইপারপিগনেন্টেশন কমানোয় এর ভূমিকা থাকতে পারে।

তবে, কালো দাগ সারিয়ে ফেলতে নাটমেগের কার্যকারিতার স্বপক্ষে আরো গবেষণার প্রয়োজন। এছাড়া, এটা মনে রাখা দরকার ত্বকে নাটমেগ থেকে জ্বালা যন্ত্রণা হতে পারে। তাই মুখে ব্যবহার করার আগে প্যাচ টেস্ট করে নেওয়া জরুরী। যদি আপনি এরকম কিছু অনুভব করেন, তবে এর ব্যবহার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করুন। মনে রাখবেন, সব ঘরোয়া উপায় কিন্তু ত্বকের সমস্যার সমাধান করতে পারেনা। ডার্মাটোলজিষ্ট বা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পরামর্শের পর চিকিৎসার প্রমাণিত পদ্ধতিগুলি দিয়েই কালো দাগের চিকিৎসা করানো উচিত। পেশাদারী স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কারোর পরামর্শ ছাড়া শুধুমাত্র নাটমেগ দিয়েই কালো দাগের চিকিৎসা করানো একদম ঠিক নয়।

হাইপারপিগমেন্টেশন এবং কালো দাগ কীভাবে দূর করা যায়?

হাইপারপিগমেন্টেশন প্রতিরোধে প্রতিদিন ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন ব্যবহার করা, দীর্ঘক্ষণ সূর্যের আলোর সংস্পর্শ এড়ানো এবং উপযুক্ত পোশাক ও মাথায় টুপি পরে ত্বককে রক্ষা করা যায়। পুরোন কালো দাগের, চিকিৎসার জন্য হাইড্রোকুইনোন, রেটিনয়েডস, ভিটামিন সি, বা আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড, কেমিকেল পিল, লেজার থেরাপি বা মাইক্রোডার্মাব্রেশনের মতো উপাদান রয়েছে এমন টপিকাল ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনার ক্ষেত্রে হাইপারপিগমেন্টেশনের কারণ কী এবং আপনার জন্য সঠিক চিকিৎসা সমাধান কোনটি তা জানতে অবশ্যই একজন ডার্মাটোলজিষ্টের সাহায্য নেওয়া উচিৎ।

থিপ মিডিয়া এর আগে এধরণের ফ্যাক্ট চেক করে দেখেছে যেখানে দাবী করা হয়েছে আলু ঘষলে  কালো দাগ ও হাইপারপিগমেন্টেশন চলে যায়, টমেটো এবং বেকিং সোডা দিয়ে ত্বক ফর্সা করা যায়, ইত্যাদি।

হেডফোন পরে থাকলে কী কানে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে ১ ঘন্টা ধরে হেডফোন পরে থাকলে কানের ভেতরে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বহুগুণ বেড়ে যায়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অর্ধ-সত্য

Fact Check Rating

দাবি

হেডফোন পড়লে কানে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির সম্ভবনা বেড়ে যাবে – এই সংক্রান্ত পোস্ট দেখা যাবে এখানে

সত্যানুন্ধান

১ ঘন্টা ধরে কানে হেডফোন পরে থাকলে কি কানে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে?

১ ঘন্টা ধরে কানে হেডফোন পরে থাকলে কানে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে, এরকম তথ্যের কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। কানে হেডফোন পরে থাকলে তা থেকে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি হয় কিনা তা খুঁজে বের করতে বিশেষ কোন বিশ্বাসযোগ্য গবেষনার কথা জানা যায় না।

কানের ভেতরে ও চারপাশে ব্যাকটেরিয়া স্বাভাবিক ভাবেই থাকে এবং বিভিন্ন কারণে তাদের বংশবৃদ্ধি বাড়ে বা কমে, যেমন আবহাওয়া, স্বাস্থ্যবিধি পালন এবং বিশেষ কোন কারণ। তাই এককভাবে হেডফোন কানে ব্যাকটেরিয়ার এত পরিমাণ বৃদ্ধির কারণ হতে পারেনা।

এ বিষয়ে একটি গবেষণায় হেডফোন ব্যবহারের সাথে কানের সংক্রমণের কোনো সংযোগ পাওয়া যায়নি

কিন্তু, এটা ঠিক যে হেডফোন পরে থাকলে ময়েশ্চার বা জলীয় ভাব ও তাপ কানের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যায়, সেটি ব্যাকটেরিয়া বেড়ে ওঠার একটা আদর্শ পরিবেশ তৈরী করে। এটা বিশেষ ভাবে সত্যি হয়ে যায় যদি হেডফোন নিয়মিত পরিষ্কার না করা হয়।

অনলাইন জার্নাল হেলথ ও অ্যালায়েড সায়েন্সে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা গেছে ঘন ঘন ও ক্রমাগত ইয়ারফোনের ব্যবহারে কানে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি হতে পারে এবং ইয়ারফোন শেয়ার করলে তা অনেকসময় একগুচ্ছ ব্যাকটেরিয়ার বা কমেনসালের জন্য ভেক্টর হতে পারে।

এছাড়াও, যারা কানের ভেতরে ইয়ার-ফোন পরে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে সুইমার্স ইয়ার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, এটি হল বাইরের ইয়ার ক্যানালের সংক্রমণ যা ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গি অর্থাৎ ছত্রাক থেকে হয়, এটা হয় তখন যখন ইয়ার ক্যানালে দীর্ঘ সময় ধরে জল থাকে।

এছাড়াও, ইয়ারফোনের সস্তা মান বা সঠিক উপায়ে ব্যবহার না করা হলে ঘর্ষণ তৈরী হতে পারে, তা থেকে ত্বক ছিঁড়ে যেতে পারে যা সংক্রমণের প্রবেশপথ তৈরি করতে পারে।

ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডাঃ প্রিয়জিৎ পানিগ্রাহী (এমবিবিএস, ডিএনবি), নিশ্চিত করে বলেছেন, “একটি পরিস্কার ইয়ারবাড ব্যবহার করলে হেডফোন বা ইয়ারফোন কখনোই কানে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটাতে পারে না। বোন ক্যানালের পরের পুরু চামড়ার মতো স্বাভাবিক বাধা এবং সমস্ত মাইক্রোঅরগানিজমকে নিয়ে চলা ওয়্যাক্স গ্ল্যান্ড থাকার জন্য খুব কমই ব্যাকটেরিয়া একজন সুস্থ ব্যক্তির ইয়ার ক্যানালের মধ্য দিয়ে ঢুকতে পারে।“

তাই, হেডফোন পরে থাকলে কানে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ৭০০ গুণ বেড়ে যায় তা যেমন ঠিক নয়, তেমনি হেডফোন নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরী এবং অনেকক্ষণ ধরে তা পরে থাকা থেকে দূরে থাকতে হবে। যদি আপনি কানে ব্যথা বা কোন অস্বস্তি অনুভব করেন তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।

হেডফোন কীভাবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে?

হেডফোন ব্যবহার করা ক্ষতিকারক নয় তবে ভুল এবং দীর্ঘ সময় ব্যবহার করা কখনও কখনও ক্ষতি করতে পারে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি এরকম হতে পারেঃ

১। নয়েস ইন্ডিউসড হিয়ারিং লস (এনআইএইচএল)। হেডফোনের সবচেয়ে গুরুতর শারীরিক ক্ষতির দিকটি হল এনআইএইচএল। জোরালো শব্দের কারণে এতে কানে শোনা একদম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শব্দ যত জোরালো হবে তত দ্রুত শ্রবণশক্তির পরিমাণ কমতে থাকবে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা বা ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (হু) পরামর্শ দিয়েছে ১ ঘন্টা সময়ের জন্য আপনাকে হেডফোনের ভলিউম ৮৫ ডেসিবেল (ডিবি) র নিচে রাখতে হবে।

২। টিনিটাস… জোরালো শব্দের কাছাকাছি থাকার জন্য এতে কানে একটা ক্ষীণ বা গুঞ্জন শব্দ হয়। টিনিটাসের জন্য হেডফোন প্রধান কারণ হতে পারে।

৩। প্রেসার বা চাপের ক্ষতি… হেডফোন ইয়ারক্যানালকে আটকে দেয়, ফলে কানের ভেতরের প্রেসার বাড়তে থাকে। এ থেকে ব্যথা ও অস্বস্তি হতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে কানের পর্দার ক্ষতি হতে পারে।

৪। ত্বকে জ্বালা যন্ত্রণা…ইয়ার ক্যানালের চামড়ায় জ্বালা যন্ত্রণার কারণ করতে পারে হেডফোন। আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে হেডফোন পরে থাকেন বা নরম, আরামদায়ক উপাদান দিয়ে তৈরি নয় এমন হেডফোন ব্যবহার করেন তবে এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

৭। কেউ কেউ মনে করেন ব্লুটুথ হেডফোনের ব্যবহারে ক্যানসার হতে পারে। থিপ মিডিয়া খোঁজ নিয়ে দেখেছে এবং  এই তথ্যটি এটি ভুল বলে জেনেছে।

ডাঃ পানিগ্রাহি বলেছেন, “যে ধরণের অবস্থায় হেডফোন বা ইয়ারফোনের ব্যবহার ক্ষতিকারক, তা হলঃ

ক) অনেক সময় ধরে খুব জোর ভলিউমে মিউজিক শুনলে শ্রবণশক্তির স্থায়ীভাবে ক্ষতি হতে পারে।

খ) কোন নরম কভার না লাগিয়ে শক্ত কোন বস্তু দিয়ে তৈরী হেডফোন বহুক্ষণ ব্যবহার করলে ইয়ার ক্যানালে ব্যথা হতে পারে।

গ) এতে চারপাশের সাধারণ আওয়াজ শোনায় সমস্যা হয়, রাস্তায় এটি খুব মারাত্বক হতে পারে, এর থেকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।“

হেডফোন ব্যবহার করতে হলে কী কী সতর্কতা মেনে চলতে হবে?

হেডফোন ব্যবহার করতে হলে নিচে লেখা নিরাপত্তা পরামর্শগুলি মেনে চলতে হবেঃ

  • ভলিউম কম রাখতে হবে।
  • অনেক সময় ধরে হেডফোন পরে থাকা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  •  আপনার চারপাশের আওয়াজ কম করতে নয়েজ ক্যানসেলিং হেডফোন ব্যবহার করুন, এটি আপনার শ্রবণযন্ত্রকে রক্ষা করবে।
  • কানের ভেতরে পরা হেডফোনের থেকে কানের ওপরে পরা হেডফোন ব্যবহার করুন।
  • নিয়মিত হেডফোন পরিষ্কার করুন।
  • অন্য কারোর সঙ্গে নিজের হেডফোন শেয়ার করবেন না।
  • যদি আপনি কোন ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করেন হেডফোন ব্যবহার বন্ধ রাখুন। যদি আপনি হেডফোন পরে থাকার সময় কোন ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করেন সঙ্গে সঙ্গে হেডফোন ব্যবহার বন্ধ করুন। যদি ব্যথা বা অস্বস্তি না যায় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

ফ্ল্যাক্স সিড অয়েল আর মধুর মিশ্রণ কী আঁচিল আর ওয়ার্টস দূর করতে পারে?

সারমর্ম

একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্ট ও হেলথ ব্লগে দাবী করা হয়েছে ফ্ল্যাক্স সিড অয়েল আর মধু আঁচিল এবং ওয়ার্টস্‌ দূর করতে পারে। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী ভুল

rating

দাবি

অনেকেই ত্বকের আঁচিল ও ওয়ার্টস নিয়ে চিন্তিত থাকেন । সোশ্যাল মিডিয়া তে আঁচিল ও ওয়ার্টস কে ঘরোয়া পদ্ধতিতে সরিয়ে ফেলার অনেক উপদেশ সহ পোস্ট আছে । তার মধ্যে একটি হলো ফ্ল্যাক্স সিড অয়েল আর মধুর মিশ্রণ দিয়ে আঁচিল ও ওয়ার্টস কে সরিয়ে ফেলা সেরকম একটি পোস্ট দেখা যাবে এখানে

সত্যানুন্ধান

মোল এবং ওয়ার্টস্‌ কি?

মোল হচ্ছে ত্বকের বাড়তি অংশ যা দেখতে কালো বা বাদামী। পিগমেন্ট তৈরী করা কোষগুলি যাদেরকে মেলানোসাইট বলে, যখন এগুলি একসঙ্গে বেড়ে বেড়ে ওঠে তখন এটি তৈরী হয়। ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত শরীরে ১০ থেকে ৪০ টি মোল থাকা স্বাভাবিক।ওয়ার্ট হচ্ছে ত্বকের একটি বিশেষ অবস্থা যা থেকে ত্বকের ছোট এবং মাংসল বাড়তি অবস্থা তৈরী করে। এটি ভেরুকা ভালগারিস নামেও পরিচিত, হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) থেকে এটি সৃষ্টি হয়।

আঁচিল ও ওয়ার্টস কীভাবে সারানো যায়?

একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ হয়ত আঁচিলটি কেটে ফেলে সেলাই করে দিতে পারেন অথবা একে তুলে ফেলতে সার্জিকাল ব্লেড ব্যবহার করতে পারেন। তবে, গবেষণা থেকে জানা গেছে ডাক্তার আঁচিলটিকে আরো পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন কারণ কোষের বাড়তি বৃদ্ধি ত্বকের ক্যানসারের একটি লক্ষণ। ওয়ার্ট অনেকসময় নিজে থেকেই চলে যায়। তবে, একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এটা কেটে দিতে পারেন বা তাৎক্ষনিক আরামের জন্য ক্যান্থারাইডিন লাগিয়ে দিতে পারেন। নরম ওয়ার্ট তুলে ফেলতে ডাক্তার ক্রায়োথেরাপি বা ইলেক্ট্রোসার্জারির সাহায্য নিতে পারেন। এছাড়া, যদি ওয়ার্টটি শক্ত হয় ডাক্তার তখন ইমিউনোথেরাপি, লেসার ট্রিট্মেন্ট, কেমিকেল পিল আর ব্লিওমাইসিন চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারেন।

ফ্ল্যাক্স সিড অয়েল এবং মধু আঁচিল আর ওয়ার্টস্‌কে স্থায়ীভাবে তুলে দিতে পারে?

না। বেশ কিছু ব্লগ পোষ্টে এধরণের ঘরোয়া উপায়ের কথা বলা হয়েছে যার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কোন গবেষণাতেই এধরণের কথা বলা হয়নি যেখানে ফ্ল্যাক্স সিড অয়েল এবং মধু মোলকে স্থায়ীভাবে তুলে দিতে পারে। যদিও, ফ্ল্যাক্স সিড অয়েল এবং মধুর ত্বকের জন্য বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে সেটা ঠিক, তবে এদুটি কখনোই আঁচিল এবং ওয়ার্টস্‌ দূর করতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা আরো মনে করেন ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করে আঁচিল তুলে ফেলার চেষ্টায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।

ডাঃ স্মৃতি নাসওয়া, ক্লিনিকাল, পেডিয়াট্রিক এবং কসমেটিক ডার্মাটোলজিষ্ট, বলেছেন, “আঁচিল হল লোয়ার ডার্মিসে বা ত্বকের নিচের স্তরে একগুচ্ছ মেলানিনের (জন্মদাগ) দৃঢ় অবস্থান। একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বা প্লাস্টিক সার্জেন খুব সামান্য দাগ রেখে আঁচিল তুলে দিতে পারেন। তবে, ওয়ার্ট হচ্ছে একধরনের ভাইরাসজনিত সংক্রমণ যা স্পর্শের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ‘নিজে থেকে করো’ কোন একটি উপায় থেকে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। একজন ডার্মাটোলজিষ্ট বা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি বা সিওটু লেসারের সাহায্যে ওয়ার্ট তুলে ফেলতে পারেন।“

কলার খোসা কি ব্রণ সারিয়ে ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে ?

একটি সোশাল মিডিয়া পোস্টে দাবী করা হয়েছে কলার খসার সাদা অংশের সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে মালিশ করলে অ্যাকনে, বয়সের ছাপ, দাগ দূর করে ত্বককে চকচকে করে তোলে। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অর্ধ-সত্য

Fact Check Rating

কলার খোসায় কী কী উপাদান থাকে?

কলার খোসায় খুব বেশি পরিমাণে বায়োঅ্যাক্টিভ যৌগ আছে। এই যৌগগুলির অনেকরকম উপকারিতা রয়েছে, বিশেষ করে এতে রয়েছে ফেনোলিক এবং নন-ফেনলিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, ক্যারোটিন এবং সায়ানিডিন। ইনফ্ল্যামেশন দূর করতে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এরা যেসমস্ত অক্সিজেনের স্পিসিস বা প্রজাতি রিঅ্যাকটিভ বা প্রতিক্রিয়াশীল তাদেরকে বাধা দিয়ে, অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে প্রোটিজ ইনহিবিটারদের রক্ষা করে এবং ফাইব্রোব্লাস্ট ডিগ্রেডেশন বা ক্ষয় রোধ করে। কলার খোসায় ট্রাইগোনেলাইন, আইসোভানিলিক অ্যাসিড এবং ফেরুলিক অ্যাসিডের মতো অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রদাহ-রোধকারী উপাদানও রয়েছে। ট্রাইগোনেলাইন ব্যাকটেরিয়া এনজাইম এবং নিউক্লিক অ্যাসিড সংশ্লেষণ বা সিনথেসিস প্রক্রিয়াকে বাধা দিতে পারে। আইসোভানিলিক অ্যাসিড এলপিএস দ্বারা প্রভাবিত টিএনএফ-α উৎপাদনকে আটকে দেয়। ফেরুলিক অ্যাসিড প্রোইনফ্ল্যামেটরি সিগন্যালিং এবং সাইটোকাইন উৎপাদনকে আটকে দেয়।

কলার খোসা কীভাবে অ্যাকনে দূর করতে পারে?

কলার খোসা ঘসলে অ্যাকনে দূর হতে পারে এমন কোন প্রমাণ নেই। কিন্তু এতে অ্যাকনে ছড়িয়ে পড়া আটকানো যায়২০২২ এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানা গেছে কলার খোসায় অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারি বৈশিষ্ট্য থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কলার খোসা অ্যাকনে সারাতে পারে কিনা তা সঠিকভাবে বলতে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে।

২০১৮ সালে একটি গবেষণা চালানো হয়েছিল, অ্যাকনে ভালগারিস সারাতে কলার খোসার কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য। কলার খোসা লাগানোর আগে, ৬২.২% (২৮) জন মানুষের হালকা অ্যাকনে ভালগারিস ছিল। মোটের ওপর, ৩৩.৩% (১৫) জনের মাঝারি অ্যাকনে ভালগারিস ও ৪.৪% (২) জনের খুব বেশি অ্যাকনে ভালগারিস ছিল। গবেষকরা এদেরকে অ্যাকনের ওপর পাকা কলার খোসা ঘষতে এবং ৩০ মিনিট থেকে এক ঘন্টার জন্য এটিকে রেখে দিতে বলেন। সাতদিন ধরে এই পদ্ধতি টি প্রতিদিন করতে বলা হয়। কলার খোসা ব্যবহারের পরে, হালকা, মাঝারি এবং বেশি সংখ্যক অ্যাকনে ভালগারিসের পরিমাণ একই ছিল, যথাক্রমে ৬২.২% (২৮), ৩৩.৩% (১৫) এবং ৪.৪% (২)। তবে, গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে ৫৭.৯% মানুষের যাদের আগে মাঝারি অ্যাকনে ভালগারিস ছিল তাদের তা কমে হালকা অ্যাকনে ভালগারিসে নেমে এসেছে। উইলকক্সন সাইনড র‌্যাঙ্ক টেস্টে অ্যাকনে ভালগারিসের চিকিৎসায় কলার খোসার কার্যকারিতার একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখানো হয়েছে।

৪৫ জন মহিলার ওপর করা এই পরীক্ষামূলক গবেষণায় দেখা গেছে যে কলার খোসার ব্যবহারে অ্যাকনে ভালগারিসের তীব্রতা কম করতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। তবে, এই ফলাফল যাচাই করার জন্য আমাদের আরও গবেষণা প্রয়োজন।

কলার খোসা কীভাবে ত্বকে চকচকে ভাব আনতে পারে?

কলার খোসায় রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,লুটেইন এবং জিক্সানথিন। ত্বক ফর্সা করতে ও ত্বকের রঙে  লুটেইন ও জিক্সানথিন আইসোমার সাপ্লিমেন্টের কি প্রভাব রয়েছে তা পরীক্ষা করতে একটি গবেষণা চালানো হয়েছিল। গবেষণায় ৬০ জন সুস্থ মহিলাকে ১২ সপ্তাহের জন্য একটি প্লাসিবো বা ১০ মিলিগ্রাম লুটেইন এবং ২ মিলিগ্রাম জেক্সানথিন আইসোমার সাপ্লিমেন্ট প্রতিদিন দেওয়া হয়েছিল। গবেষকরা একটি মেক্সামিটার যন্ত্র এবং নির্দিষ্ট মানের ফটোগ্রাফির মাধ্যমে ত্বকের রং এবং ফর্সা হওয়া মেপে দেখেন।

এর ফল হিসেবে প্লাসিবো গ্রুপের তুলনায় যাদেরকে বিশেষ চিকিৎসা করা হয়েছে সেই গ্রুপে ত্বকের হলুদভাব বেড়ে যাওয়া এবং ত্বকের লালভাব কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো ত্বকের রং এবং ফর্সা হওয়ার উল্লেখযোগ্য উন্নতি চোখে পড়ে। গবেষকরা মনে করেন লুটেইন ও জেক্সানথিন আইসোমারের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যগুলোই এই উন্নতির কারণ। সেইসঙ্গে তারা ত্বক ভালো রাখা ও দেখতে ভালো স্বাস্থ্য এবং চেহারা উন্নত করার একটি নিরাপদ এবং কার্যকর উপায় হিসাবে এই সাপ্লিমেন্টগুলির কথা উল্লেখ করেছেন। তবে, সঠিক ফল পেতে এবং সাপ্লিমেন্টের সঠিক ডোজ এবং সময়কাল ঠিক করতে আমাদের আরও গবেষণা প্রয়োজন। কোনো নতুন সাপ্লিমেন্ট শুরু করার আগে একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করাও জরুরী।

বয়সের ছাপ কমাতে কলার খোসা কী কাজ করে?

কলার খোসা একটি সস্তা বর্জ্য পদার্থ যা ভারতে সারা বছর পাওয়া যায়। একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে খোসায় ফেনোলিক্স এবং অ্যালকালয়েড নামক সহায়ক পদার্থ রয়েছে যা অ্যাকনের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে বিশেষ করে স্ট্যাফিলোকক্কাস এপিডার্মিডিস-এর বিরুদ্ধে লড়াই করে। এছাড়াও, খোসায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ত্বককে খুব দ্রুত বার্ধক্য রোধ করতে সাহায্য করে। ফল হিসেবে, ত্বককে রক্ষা করতে ম্যাশ করা কলার খোসা ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয় কিন্তু তা ব্যবহার করা কতটা উচিৎ সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে

কলার খোসা কী দাগ সারাতে পারে?

কলার খোসায় অনেক রকম পুষ্টি উপাদান ও চিকিৎসা সংক্রান্ত উপকারিতা থাকার জন্য একে দাগ দূর করার জন্য প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে প্রচার করা হয়। এতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং লুটেইনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যাদের ত্বক সারানোর বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এছাড়াও, খোসার এনজাইম এবং মিনারেলগুলি ইনফ্ল্যামেশন কমাতে এবং বেশী পরিমাণে কোলাজেন তৈরী করতে সাহায্য করে, যার ফলে দাগ সেরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়

তবে, কলার খোসার দাগ সারানোর ক্ষমতা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত নয়। যদিও কথ্য প্রমাণ ও চিরাচরিত উপশমের উপায়গুলি এই পরামর্শ দেয় যে বেশ কিছুদিন ধরে খোসা ব্যবহার করলে দাগ হালকা হয়ে আসে। তবে, এর স্বপক্ষে প্রমাণের জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন।

ডার্মাটোজিষ্ট ডাঃ জ্যোতি কান্নানগাথ জানিয়েছেন, “ফলের খোসায় কিছু অত্যাবশ্যক স্বাস্থ্যের-উপকারী উপাদান যেমন ডায়েটারি ফাইবার এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট যেমন ক্যারোটিনয়েড, ফ্ল্যাভোনয়েড, ভিটামিন, পটাসিয়াম, খনিজ ইত্যাদি থাকে। ফলের পাল্পের সঙ্গে এটা ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

কিছু ফলের খোসা যেমন কমলালেবু, আপেল, পেঁপে, কলা, কিউই এবং বেদানা সাময়িকভাবে গায়ের রং উজ্জ্বল বা হালকা করতে পারে। যদিও কিছু ফলের খোসায় কোলাজেন উদ্দীপক স্টিমুলেটিং প্রভাব রয়েছে, আমি মনে করি না যে সেগুলি কার্যকরভাবে বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াটিকে উলটে দিতে বা বিলম্বিত করতে পারে। স্কার টিস্যুকে উন্নত করতে লেজার বা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির মতো উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।“

স্ট্রবেরি কি দাঁতের হলুদ দাগ দূর করতে পারে?

সারমর্ম

অনেক সোশ্যাল মিডিয়া ও ব্লগ পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে দাতের কালো দাগ দূর করতে স্ট্রবেরি খুব কার্যকারী । আমরা সত্যতা যাচাই করে দেখেছি যে এই দাবিটি অর্ধ সত্য । দাঁত পরিষ্কার করার কিছুটা ক্ষমতা থাকলেও, স্ট্রবেরিতে থাকা বেশ কিছু উপাদান দীর্ঘ্য ব্যবহারে উল্টে দাঁতের বেশ ক্ষতি অর্থে পারে ।

Fact Check Rating

দাবি

“হলুদ দাঁত সাদা করতে সাহায্য করে স্ট্রবেরি”- এই দাবি ছড়িয়ে আছে অনেক সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে । এরকম একটি পোস্টস দেখা যাবে এইখান

সত্যানুন্ধান

ফল কি দাঁত সাদা করার জন্য উপকারী?

সবসময় কার্যকরী হয়না । এই নিয়ে আমরা আগেও বেশ কিছু ফ্যাক্ট চেক করেছি । প্রাকৃতিক ভাবে আমাদের দাঁতের রং কিছুটা হলদেটে হয়। দাঁতের ডাক্তার বা ডেন্টিস্ট রা বিভিন্ন আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির দ্বারা এই রং কিছুটা পরিষ্কার করে তুলতে পারে কিন্তু সেটার ও সীমা আছে ।

দাতের কোনও ক্ষতি না করেই কি স্ট্রবেরি দাঁত সাদা করতে পারে ?

না। যদিও স্ট্রবেরির কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা দাঁত সাদা করতে কাজ করে, তবে দাঁত সাদা করার জন্য এর ব্যবহার প্রমাণিত নয় কারণ এর ব্যবহারের কিছু ক্ষতিকর দিক ও আছে। স্ট্রবেরিতে থাকে ম্যালিক অ্যাসিড এবং সাইট্রিক অ্যাসিড, যা দাঁত সাদা করতে কাজ করে। ম্যালিক অ্যাসিড আসলে দাগ দূর করে না, তবে দাঁতের উপরিভাগ পরিষ্কার করে যা দাঁতকে সাদা রঙ দেয়। স্ট্রবেরিতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড দাঁতের এনামেলের ক্ষয় করে । আসলে স্ট্রবেরি তে এমন কোনো উপাদান নেই যা টুথপেষ্ট এর থেকে বেশি কার্যকরী । সাইট্রিক অ্যাসিড এনামেল কে ধীরে ধীরে উপর থেকে ক্ষয় করতে থাকে বলে অনেকেরই শুরুতে মনে হয় দাঁত সাদা হচ্ছে ।

স্ট্রবেরি কি দাঁত সাদা করার চেয়ে বেশি ক্ষতি করে?

Endodontist Dr Paridhi Garg জানান “স্ট্রবেরি দাঁত সাদা করে না। স্ট্রবেরিতে থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড, যা এনামেল নষ্ট করে দেয়। এটি ডিমিনারলাইজ বাড়ায় ও sensitivity সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। স্ট্রবেরিতে চিনির পরিমাণও বেশি থাকে, যা দাঁতের ক্ষয়ের সম্ভাবনা বাড়ায়।”

ওজন বাড়াতে কী বাসি পাউরুটি খাওয়া উচিত?

সারমর্ম

একটি সোশাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে বাসি পাউরুটি(রুটি) দুধে ভিজিয়ে খেলে তা ওজন বাড়াতে ও গাল ভরাট করতে সাহায্য করে। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল

Rating

দাবি

শরীর স্বাস্থ্য ভালো করার জন্য খাওয়া দাওয়ার যথেষ্ট গুরুত্ব আছে । কিন্তু সেই ব্যাপারে ঘরোয়া, প্রচলিত সব উপদেশেরই যে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকবে তা নয় । বাসি রুটি খেলে শরীর ভালো হয়, গাল ভরে ওঠে – এই ধরণের অতিরঞ্জিত দাবিগুলো আজকাল সংবাদ মাধ্যমের স্বাস্থ্য পাতায় বা সোশ্যাল মিডিয়া তে প্রায়ই দেখা যায় । একদিকে যেমন এগুলো কার্যকরী নয়, অপরদিকে এর বেশ কিছু আধুনিক চিকিৎসকদের মতে নিরাপদ নয় । বাসি রুটি খেয়ে শরীর ভালো করার সেরকমই একটি পোস্ট দেখা যাবে এখানে

সত্যানুন্ধান

ভরাট গাল পেতে কী বাসি রুটি খাওয়া উচিৎ?

ঠিক তা নয়। ওজন বাড়াতে বা গাল ফোলা বা ভরাট করতে বাসি রুটি দুধে ভিজিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যায় না। আমাদের গবেষণা থেকে জানা যায় বাসি খাবারে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বা টক্সিন থাকতে পারে যার থেকে ফুড পয়েজনিং বা খাবারে বিষক্রিয়া অথবা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা হতে পারে। তবে, বাসি খাবার খেলে ক্যালোরির পরিমাণ বাড়তে পারে, কারণ মানুষ তার সন্তুষ্টির জন্য বেশি খেতে শুরু করতে পারে। বাসি খাবারে পুষ্টির পরিমাণ কমে যেতে পারে, এতে ডায়েটের বা খাদ্যাভ্যাসের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও এতে হজমের সমস্যা তৈরী হয়, এতে স্বাভাবিক খাওয়া দাওয়া করার অভ্যাস নষ্ট হতে পারে ও শরীর চালনাতেও সমস্যা হতে পারে। এই জিনিসগুলোই একসঙ্গে অস্বাস্থ্যকরভাবে কোন মানুষের ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে।

ফরিদাবাদের অ্যাকর্ড সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের এমারজেন্সি ফিসিশিয়ান, এমডি, ডাঃ কুনাল গুপ্তা জানিয়েছেন, “বাসি রুটি দুধে ভিজিয়ে খেলে তা থেকে ওজন কমে যেতে পারে কারণ বাসি রুটি সময়ের সাথে সাথে স্টার্চকে ভেঙে দেয়, ফলে শরীরে ক্যালোরি গ্রহণ কম হতে পারে। তবে, ১২ ঘন্টা পরের কোন বাসি খাবার থেকে ডায়রিয়া, বমি-বমি ভাব ও বমি হতে পারে।

নিউট্রিশনিষ্ট প্রিয়াঙ্কাও একই কথা বলেছেন, “অনেকে একথা বললেও, দুধে ভেজানো বাসি রুটি খেলে তা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে না। আপনি ওজন বাড়াতে বা কমাতে চাইলে কোন একটা খাবার থেকে সেটা হতে পারে না, তার বদলে আপনি গোটা দিন ধরে কী খাচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করে। তাই, ওজন বাড়াতে এধরণের কথার ওপর ভরসা না করাই ভালো।“

তিনি আরও বলেছেন, “ফুড সেফটি বা যে খাবার খাওয়া নিরাপদ সেই খাবার এবং তাজা, সঠিক উপায়ে রান্না করা খাবার খাওয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরী। যদি আপনি স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়াতে চান, তাহলে বিভিন্ন রকম পুষ্টিগুণে ভরা সুষম খাবার খাওয়ার ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে চর্বিছাড়া বা লীন প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি বা ফ্যাট, গোটা শস্য, ফল, সবজি ও দুগ্ধজাত খাবার রয়েছে। এছাড়া, নিয়মিত শরীরচর্চা, বিশেষ করে শক্তি বাড়ানোর চর্চা মাসলের পরিমাণ বাড়াতে ও স্বাস্থ্যকর ভাবে ওজন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।“ শরীর ভালো রাখতে রুটি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এটাই প্রথম নয় যেখানে আমরা এরকম অবান্তর দাবীর কথা শুনেছি।

বাসি খাবার খাওয়া কী অস্বাস্থ্যকর?

হতে পারে। এমন প্রমাণ আছে যে বাসি খাবার থেকে ডায়রিয়া ও অন্যান্য হজমের সমস্যা সহ নানা রকম শারীরিক সমস্যা হতে পারে। বাসি খাবার যদি ঠিকভাবে তুলে রাখা না হয় বা অনেক পরে খাওয়া হয় তাহলে এতে ব্যাকটেরিয়া ও টক্সিন তৈরী হতে পারে যা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল বিভিন্ন সমস্যার কারণ হতে পারে। এই ধরণের মাইক্রোঅরগ্যানিজম সময়ের সাথে সাথে প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যেতে পারে ও তাই এগুলো খেলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।

এছাড়া, বাসি খাবারে সতেজতা থাকে না ও রাসায়নিক পরিবর্তন হতে পারে বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যা এর পুষ্টির মান এবং খাবার খাওয়া কতটা নিরাপদ তার সাথে আপস করে। এটা মনে রাখা জরুরী যে বিভিন্ন খাবারের সেলফ লাইফ বা তা কতদিন ভালো থাকতে পারে তা বিভিন্ন হয় এবং বাসি হয়ে যাওয়ার পর সেসব খাওয়া, খাবার থেকে হওয়া অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

ফোলা গালের কারণগুলি কী কী?

ফোলা গাল অনেকসময়ই গালের পরিপূর্ণ বা গোলাকার দেখানোর বিষয়টির সঙ্গে জড়িত এবং ব্যক্তি বিশেষে সেটি বিভিন্নভাবে প্রকট হতে পারে। ফোলা গালের পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে বলে মনে করা হয়ঃ

  • জেনেটিক্স আমাদের জিন মুখের গঠন এবং মুখের চর্বি জমার বিন্যাসকে প্রভাবিত করতে পারে। জিনঘটিত কারণে কিছু মানুষের স্বাভাবিকভাবেই ফোলা বা ভরাট গাল থাকে।
  • শরীরের ওজন ও চর্বির বিন্যাস – ফোলা গাল পুরো শরীরের ওজন ও চর্বি কীভাবে জমা হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে। যদি কারোর শরীরের ওজন খুব বেশি হয় বা চর্বির পরিমাণ বেশি হয় তাহলে তা গালে জমা হতে পারে, ফলে গাল ফোলা বা ভরাট লাগতে পারে।
  • বয়স – আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মুখের চেহারার বদল হয়। মুখের ট্যিসুতে কোলাজেন ও চর্বি কমে যাওয়ার ফলে মুখে একটা শুকিয়ে যাওয়া ভাব চলে আসে। তবে, কিছু মানুষের ক্ষেত্রে চর্বি কমের যাওয়ার বিষয়টি সমানভাবে ঘটে না ফলে গাল ফোলা লাগতে পারে।

ওজন বাড়ার কারণগুলি কী কী?

বিভিন্ন কারণে ওজন বাড়তে পারে, এর মধ্যে রয়েছেঃ

  • ক্যালোরি গ্রহণ – আপনার শরীরের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করলে তা ওজন বাড়ার কারণ হতে পারে। আপনি যা খরচ করেন তার থেকে যদি খাবারের মাধ্যমে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করেন তবে বাড়তি এনার্জি বা শক্তি চর্বি হিসেবে শরীরে জমা হয়।
  • ভুলভাল খাবার খাওয়া – যদি আপনার ডায়েটে প্রসেসড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার, মিষ্টি জাতীয় খাবার ও পানীয়, অস্বাস্থ্যকর চর্বি জাতীয় খাবার বেশি থাকে তবে তা ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। এই খাবারগুলিতে ক্যালোরিভর্তি থাকে কিন্তু পুষ্টিগুণ খুব কম থাকে, এগুলো বেশি খেলে তাই ওজন বেড়ে যায়।
  • সেডেন্টারি লাইফস্টাইল বা অলস জীবনধারা – শরীরচর্চার অভাব ও অলস জীবনযাপন ওজন বাড়ার একটি কারণ। নিয়মিত শরীরচর্চা ও প্রতিদিনের কাজকর্মের মাধ্যমে যখন আপনি যথেষ্ট ক্যলোরি ঝড়াচ্ছেন না তখন সেই বাড়তি শক্তি বা ক্যালোরি চর্বি হিসেবে শরীরে জমা হচ্ছে।
  • জেনেটিক্স – কিছু মানুষের শরীরে ওজন বেড়ে যাওয়ার জিনঘটিত প্রবণতা আছে। কিছু জিনঘটিত কারণের জন্য মেটাবলিজম, খিদে নিয়ন্ত্রণ এবং চর্বি জমে যাওয়াকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে তাদের ওজন সহজেই বেড়ে যায়।
  • হরমোনের ভারাসাম্য না থাকা – প্রেগনেন্সি বা গর্ভাবস্থায়, মেনোপজে বা বিশেষ কিছু শারীরিক অবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের ফলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে তা মেটাবলিজম, খিদে ও শরীরে চর্বি জমার কারণ হতে পারে।
  • ইমোশানাল বা আবেগপ্রবণতা – ইমোশানাল ইটিং হল এমন এক অবস্থা যেখানে মানুষ মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা ডিপ্রেশন মোকাবিলা করতে খাবারের আশ্রয় নেন, এর ফলে তা ওজন বাড়িয়ে দেয়। মানসিক সমস্যার অবস্থায় হাই ক্যালোরিযুক্ত ভালো লাগার খাবারগুলি শরীরে ক্যালোরির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ৭। ওষুধের প্রভাব – কিছু ওষুধ যেমন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, অ্যান্টিসাইকোটিকস, কর্টিকোস্টেরয়েড এবং কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ বা বার্থ কন্ট্রোল পিল, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসাবে ওজন বাড়াতে পারে। এই ওষুধগুলো খিদে, মেটাবলিজম বা শরীরে ফ্লুইডের পরিমাণ হেরফের ঘটাতে পারে।
  • চিকিৎসা জনিত কারণ – কিছু শারীরিক অবস্থা, যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস), এবং কুশিং সিন্ড্রোম ওজন বাড়ার কারণ হতে পারে বা এতে ওজন ঠিক রাখা আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলতে পারে। এইধরণের অবস্থা মেটাবলিজম, হরমোনের মাত্রা এবং চর্বি জমে যাওয়ার ওপর প্রভাব ফেলে।
  • ঘুমের অভাব – অপর্যাপ্ত ঘুম বা ঘুমের অভাব বা ঘুমের ব্যাঘাত খিদে নিয়ন্ত্রণের জড়িত হরমোনগুলিকে ব্যাহত করতে পারে, যেমন লেপটিন এবং ঘ্রেলিন। এগুলি সময়ের সাথে সাথে খিদে, খাবারের লোভ ও ওজন বাড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  • বয়স – মানুষের যত বয়স বাড়ে ততই মেটাবজম কমতে থাকে, এর ফলে ক্যলোরি খরচও কম হতে শুরু করে। যদি খাবারের অভ্যাসের পরিবর্তন না করা হয় তবে এই বয়সজনিত কম মাত্রার মেটাবলিজম থেকে ওজন বেড়ে যেতে পারে।

মুখে ফেভিকল লাগানো কি নিরাপদ?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে যে মানুষের মুখের চামড়ায় ফেভিকল দিয়ে বানানো ফেস মাস্ক লাগালে উপকার পাওয়া যায়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি যে এই দাবী ভুল

rating

দাবি

অবৈজ্ঞানিক, হাস্যকর এবং শরীরের পক্ষ্যে ক্ষতিকর বেশ কিছু স্বাস্থ্য জ্ঞান ইন্টারনেটে প্রচলিত আছে । তার মধ্যে একটি হলো ফেভিকল এর ফেস মাস্ক । বাজারে বহু নামি দামি কোম্পানির ফেস মাস্ক থাকা সত্ত্বেও কিছু লোক ফেভিকলকে রূপচর্চার কাজে লাগানোর উপদেশ দেন । ফর্সা হয় হেকে শুরু করে ব্ল্যাকহেডস কমিয়ে ফেলা পর্যন্ত্য বহু ভ্রান্তিকর কার্যকারিতা এর পক্ষ্যে যোগ করা হয় । এইরকমই একটি ইউটুব পোস্ট দেখা যাবে এখানে

সত্যানুন্ধান

ফেভিকল কি?

ফেভিকল হচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি পিডিলাইট ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেডের তৈরী একটি বহুল প্রচলিত আঠা। এর চমৎকার জুড়ে রাখার ক্ষমতার জন্য কাঠের কাজ, নির্মাণকাজ, বিভিন্ন রকম শিল্পের কাজ এবং বাড়ির কোন জিনিস মেরামতির কাজে ব্যাপকভাবে এর ব্যবহার করা হয়। কাঠ, প্লাইউড, ল্যামিনেট, কাগজ এবং চামড়ার কাজে জোড়ার ক্ষেত্রে এটি সবার কাছে বিশেষ ভাবে পরিচিত।

মুখে ফেভিকল লাগানো কি নিরাপদ এবং কার্যকরী?

ফেভিকল বা অন্য কোন আঠা মুখে লাগানো নিরাপদ এবং তা থেকে উপকার পাওয়া যায় কিনা তা নিয়ে কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। ফেভিকল চামড়ায় লাগানোর বিশেষ করে মুখের ত্বকে লাগানোর জন্য বানানো হয়নি। ফেভিকল মুখে লাগানো নিরাপদ নয়, কার্যকরীও নয়, এর থেকে ত্বকে জ্বালা যন্ত্রণা, ইনফ্ল্যামেশন, পুড়ে যাওয়া, লোমকুপের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ত্বকে ক্ষত তৈরী হওয়ার মত সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও, ফেভিকল লাগালে মুখের ত্বকের আগে থেকে কোন সমস্যা থাকলে তা বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া, আমরা এই যুক্তির স্বপক্ষে চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত কারোর কোন সুপারিশ বা পরামর্শ পাইনি।

ডার্মাটোলজিষ্ট, ডাঃ জ্যোতি কান্নানগাথ বলেছেন, “ফেভিকল বা অন্য কোনরকম আঠা মুখে লাগানো নিরাপদ নয়। ফেভিকল হচ্ছে সিন্থেটিক রেসিন আঠা। ত্বকে এটি লাগালে অনেক রকম বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং সেই সঙ্গে শারীরিক অনেক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। মুখের ত্বক খুব পাতলা ও সংবেদনশীল। আঠার মত রাসায়নিক জিনিসের ক্ষতিকর প্রভাব মুখের ত্বক কখনোই সহ্য করতে পারে না। এ থেকেই ত্বকে জ্বালাযন্ত্রণা, কেমিকেল বার্ণ বা রাসায়নিক জিনিসের থেকে পুড়ে যাওয়া এবং অ্যালার্জি হতে পারে। এছাড়াও, ফেভিকলের সংস্পর্শে চোখের ক্ষতি ও নিঃশ্বাসের ক্ষতি হতে পারে।“ এবিষয়ে আরো অনুসন্ধান চালিয়ে আমরা দেখেছি কিছু মানুষ তাদের মেকআপে স্পেশাল এফেক্টস দেওয়ার জন্য বা প্রস্থেটিক ব্যবহারের জন্য বিশেষ কিছু আঠা ব্যবহার করেন। তবে, এই বিশেষ আঠাগুলি ত্বকে ব্যবহারে জন্য তৈরী করা হয় এবং প্রসাধনে ব্যবহারে জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত। এইধরনের জিনিস সাধারণত নিরাপদ এবং ত্বকের পক্ষে সহনশীল। এছাড়াও, এগুলি কোন ক্ষতি না করে ত্বক থেকে তুলে ফেলা যায়। তাই, যদি এই কাজের উদ্দেশ্যে আঠাগুলি ব্যবহৃত হয় তবে তা বেছে নেওয়ার আগে অবশ্যই দেখে নিতে হবে যে সেগুলি চিকিৎসাগত দিক থেকে ত্বকের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কিনা।

কনসালটেন্ট ডার্মাটোলজিষ্ট ডাঃ সৌম্য সচদেবা, এগুলির ব্যবহার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন এবং বলেছেন, “দয়া করে মুখে ফেভিকল লাগাবেন না, সোশাল মিডিয়ার খুব ভুল ট্রেন্ড প্রচার করা হচ্ছে। ত্বকে এর ফল খারাপ হতে পারে এবং এর থেকে শুষ্কতা, লাল হয়ে যাওয়া, বা ত্বকের চামড়া উঠে যেতে পারে।“ এটাই প্রথমবার নয় যে আমরা এরকম অসামঞ্জস্যপূর্ণ দাবির সম্মুখীন হয়েছি যেখানে মানুষকে তাদের মুখে কিছু অননুমোদিত পণ্য ব্যবহারের  পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং দাবী করা হয়েছে এর থেকে ত্বক ভালো হবে। আমরা এর আগে দেখেছি অনেক সোশাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে মেন্সট্রুয়াল(রজঃস্রাব) মাস্ক ত্বকের জন্য নিরাপদ ও কার্যকরী নতুন স্কিনকেয়ার ট্রেন্ড, যার অর্থ হল রজঃস্রাব বা মাসিকের রক্ত দিয়ে বানানো ফেস মাস্ক ত্বকের জন্য উপকারী। প্রচলিত কিছুর বাইরে যে কোন রকম জিনিস মুখে বা ত্বকে লাগানোর আগে ডার্মাটোলিষ্ট বা চিকিৎসাবিদ্যার সঙ্গে যুক্ত কারোর পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। তারা আপনাকে এসংক্রান্ত সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন এবং বিশেষ কোন সমস্যার জন্য নিরাপদ বিকল্প উপায়গুলির সন্ধান দিতে পারবেন। আপনার ত্বক ভালো রাখা ও সুরক্ষিত রাখা আপনার অগ্রাধিকার, তাই কোন সংশয় থাকলে পেশাদারী পরামর্শ নিন।

যে কোন রকম আঠা / ফেভিকল মুখে লাগালে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি কি কি হতে পারে?

 যে কোন রকম আঠা মুখে লাগালে এর থেকে যেধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে তা হলঃ

সংক্রমণের সম্ভাবনাঃমুখে আঠা লাগালে তা লোমকূপগুলিকে আটকে দেয়, এগুলির মধ্যে ময়লা, ব্যাকটেরিয়া ও ঘামও আটকে যায়। এর থেকে ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধি হতে পারে এবং তা থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে।

ডাঃ পারভেজ মাথারু, এমবিবিএস, এমডি (ডার্মাটোলজি) বিষয়টি সংক্ষেপে জানিয়ে বলেছেন, “এটা সত্যিকারের একটি

নির্বোধের মত বিষয় তবে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি মানুষ কিভাবে ব্ল্যাকহেড তোলার জন্য ফেভিকলকে নিজে করো উপায় হিসেবে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। আমরা অবশ্যই একে নিয়ে খেলার চেষ্টা করেছি এবং হাত থেকে তা তুলে ফেলার মজা উপভোগ করেছি কিন্তু দয়া করে ফেভিকল মুখে লাগাবেন না।

হ্যাঁ, এটা হয়তো ত্বকের পক্ষে বিষাক্ত নয় তবে প্রত্যেকের ত্বকে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে এবং ফেভিকল লাগালে তা থেকে অ্যালার্জি বা জ্বালাযন্ত্রণা থেকে শুরু করে ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, পুঁজ বেরনো, ফোসকা বা পিগমেন্টেশন পর্যন্ত হতে পারে। এটা ত্বক থেকে তুলে ফেলার সময় আপনি হয়ত ত্বকের কোন একটি স্তরকে তুলে ফেলতে পারেন এবং এর থেকে রক্তনালীগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই আপনি যদি ভ্যাম্পায়ারের মত লাল রাগী দেখতে না হতে চান তাহলে এধরনের কৌশল থেকে দূরে থাকুন।“ তাই, বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয় নিজে-তৈরী-করো এমন মাস্ক ব্যবহার করা ঠিক নয় কারণ তারা ভালোর চেয়ে ক্ষতি বেশি করতে পারে।

হলুদ কী হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে?

সারমর্ম

ফেসবুক এ বহু চর্চিত একটি ভিডিওতে দেখানো হয়েছে হলুদ মেশানো জল খেলে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল।

Rating

দাবি

শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাবে বহু অনুষ অসুস্থ্য হয়ে পরে । এই হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ঘরোয়া উপায়ের কথা বলা হয়ে থাকে । এর মধ্যে একটি হলো হলুদ মেশানো জল খেলে হিমোগ্লোবিন বেড়ে ওঠে । ফেসবুক ও ইউটুবে এ হলুদ মেশানো জল বা হলুদ চা এর গুনাগুন অতিরঞ্জিত করে প্রকাশিত কিছু ভিডিও প্রচুর শেয়ার হয়েছে । তার মধ্যে একটি ভিডিও দেখা যাবে এখানে

সত্যানুন্ধান

হিমোগ্লোবিন কী?

হিমোগ্লোবিন (কোন কোন জায়গায় একে হেমোগ্লোবিন) বলা হয়, এটি একধরনের প্রোটিন যা লোহিত রক্তকণিকায় পাওয়া যায়, যা ফুসফুস থেকে শরীরের বাকি অংশে অক্সিজেন সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ফুস্ফুস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইডের মত, একটি বর্জ্য পদার্থকে বয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। অণু বা মলিকিউলের জন্য রক্তের রঙ লাল হয়।

হিমোগ্লোবিনের প্রাথমিক কাজ হল ফুসফুসে অক্সিজেনের সাথে মিলে অক্সিহিমোগ্লোবিন নামে একটি অণু গঠন করা। এই পদার্থটি তারপর রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়, ট্যিসু ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গগুলিতে অক্সিজেন সরবরাহ করে। বিভিন্ন মেটাবলিক প্রক্রিয়ার জন্য ট্যিসুতে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়,

সেখানে অক্সিহিমোগ্লোবিন অক্সিজেন নিঃসরণ করে, এবং এর ফলে অক্সিজেন ছাড়া হিমোগ্লোবিন কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং তা শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ফুসফুসে ফেরত নিয়ে আসে।

হিমোগ্লোবিন চারটি প্রোটিন সাব ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত, যার প্রতিটিতে একটি আয়রনের পরমাণু থাকে। অক্সিজেন অণুকে  একজোট করে রাখার জন্য আয়রন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন বি১২ এবং ফোলেটের মতো অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির সাথে আয়রনের পর্যাপ্ত মাত্রা হিমোগ্লোবিন তৈরী এবং সঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয়। কম হিমোগ্লোবিনের মাত্রা রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া তৈরী করতে পারে, এটি এমন একটি অবস্থা যা শরীরের অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে অপর্যাপ্ত লোহিত রক্তকণিকা বা হিমোগ্লোবিনের ফলে তৈরী হয়।

কোন কোন কারণের জন্য হিমোগ্লোবিন কাউন্ট কম হতে পারে?

শরীরের মধ্যে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়ার বিভিন্ন রকম কারণ রয়েছেঃ

  • রক্তক্ষরণঃ আঘাত, অস্ত্রোপচার, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তপাত অথবা রজঃস্রাব বা মাসিকের কারণে উল্লেখযোগ্য রক্তক্ষরণের ফলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে পারে।
  • হরমোনের পরিবর্তনঃ হরমোনের পরিবর্তন, যেমন প্রেগন্যান্সি বা গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা প্রভাবিত হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং ভ্রূণের বিকাশের জন্য অতিরিক্ত আয়রনের প্রয়োজন হতে পারে।
  • বিশেষ কিছু ওষুধপত্রঃ কিছু ওষুধ, যেমন কিছু কেমোথেরাপির ওষুধ বা এমন কিছু ওষুধ যেগুলি অস্থি মজ্জাকে প্রভাবিত করে, সেগুলি লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদনকে প্রভাবিত করতে পারে এবং এর ফলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রার তারতম্য হতে পারে।

খাবার কী হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে পারে?

হ্যাঁ, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সুষম খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেসব খাবারে আয়রনের মাত্রা বেশি থাকে যেমন রেড মিট, বিনস আর সবুজ শাক-পাতা হিমোগ্লোবিন বাড়াতে কাজ করে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার আয়রন শুষে নিতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক অ্যাসিডের উৎসগুলিও রক্তকে সামগ্রিক ভাবে ভালো রাখতে সাহায্য করে। হিমোগ্লোবিনের সর্বোচ্চ মাত্রাকে বজায় রাখতে হলে সুষম খাদ্য তালিকা মেনে চলতে হবে।

হলুদ কী হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে পারে?

এর সঠিক উত্তর জানা যায় না। একটি রিভিউ পেপারে যেখানে ২৫ টি আর্টিকেলের পরীক্ষা চালানো হয় সেখানে মাত্র ৩ টিতে দাবী করা হয়েছে যে হলুদ হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিন্তু, এর স্বপক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমাণের সংখ্যা কম এবং এর থেকে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে হলুদের সরাসরি যোগের প্রমাণ খুব স্পষ্ট নয়। হলুদে থাকে কারকিউমিন, এটি একটি কার্যকরী যৌগ যা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে পরিচিত এবং এর অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য আছে, যা কার্ডিওভাসকুলার সহ সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। তা সত্ত্বেও, হলুদ যে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে এর স্বপক্ষে যথেষ্ট পরিমাণে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। আর তাছাড়া, কতটা হলুদ খাওয়া যাবে সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ অতিরিক্ত হলুদ খেলে তা থেকে রক্তাল্পতা বেড়ে যেতে পারে এবং অ্যানিমিয়া হতে পারে, কারণ এতে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমিয়ে দেওয়ার বৈশিষ্ট্যও রয়েছে।

জেনারেল ফিজিশিয়ান ডাঃ কাশ্যপ দক্ষিনী এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন, “খুব অল্প প্রমাণ রয়েছে যেখানে দেখা গেছে হলুদ হয়ত ইন্টেসটাইন বা অন্ত্রের আয়রন বেশি করে শোষণ করতে সাহায্য করে, যেমন হেমোক্রোমাটোসিস, বা হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া, সিকেল সেল রোগের ক্ষেত্রে। এককভাবে হলুদ সরাসরি কোনভাবেই হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে পারে না। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে গেলে খাবারে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১২, ফলিক অ্যাসিড এবং প্রোটিনের পরিমাণও বাড়ানো প্রয়োজন। খাবার হিসেবে আয়রনের পরিমাণ বাড়াতে বিভিন্ন ধরণের বাদাম, বীজ, ফল, গাঢ় সবুজ শাক সবজি, শুঁটি জাতীয় দানা, শুকনো ফল, মাংস ইত্যাদি সাহায্য করে।

জেনারেল ফিজিশিয়ান, ডাঃ অতুল বশিষ্ঠ বলেছেন, “চিকিৎসাক্ষেত্রে আমার মতে হিমোগ্লোবিনের মাত্রায় হলুদের প্রত্যক্ষ প্রভাবকে সমর্থন করে এমন নির্ভরযোগ্য ত্বত্ত্ব নেই। যদিও হলুদের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য প্রমাণিত হয়েছে এবং এটি অন্ত্রের মাইক্রোফ্লোরা এবং পরজীবীকে প্রভাবিত করতে পারে, হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষণে আয়রন, ফলিক অ্যাসিড এবং মিথাইলকোবালামিনের মতো প্রয়োজনীয় উপাদান জড়িত। হলুদের অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মত কিছু গুণ পরোক্ষভাবে রক্তের ক্ষয় কমাতে পারে, সম্ভাব্য হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তবুও, এটা স্পষ্ট করা দরকার যে আমি হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর প্রাথমিক সমাধান হিসাবে হলুদকে সমর্থন করছি না।”

পেঁয়াজ কি কাশি, অ্যালার্জি, গলা ব্যথা এবং জ্বর সারাতে পারে?

সারমর্ম

একটি ফেসবুক পোষ্টে দাবী করা হয়েছে পেঁয়াজ জ্বর, গলা ব্যথা, অ্যালার্জি এবং কাশি সারিয়ে দিতে পারে। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই তথ্য অনেকাংশে ভুল।

Rating

দাবি

পেঁয়াজের গুনাগুন নিয়ে নানা গুজব আছে । বেশ কিছু মিডিয়া ওয়েবসাইট এ এই গুজব গুলোকে আরো অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করা হয় । এর মধ্যে একটি হলো পেঁয়াজ থেকে জ্বর, কাশি, এলার্জি – সব কিছু সেরে ওঠে । ফেসবুক এবং অন্য সোশ্যাল মিডিয়া তে ও এই গুজব ছড়িয়ে আছে সেরকম একটি পোস্ট দেখা যাবে এখানে ।

সত্যানুন্ধান

পেঁয়াজ কী কাশি সারাতে পারে?

কাশি বা অ্যালার্জি হলে পেঁয়াজ খাওয়া অনেকের কাছে সাধারণত নিরাপদ। পেঁয়াজে কিছু বিশেষ যৌগ থাকে যেমন, কোয়ারসেটিন, এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য গলায় জ্বালা-যন্ত্রণায় আরাম হতে পারে আর কাশি কিছুটা কমতে পারে। তবে, কিছু মানুষ পেঁয়াজের ক্ষেত্রে সংবেদনশীল বা তাদের এতে অ্যালার্জি থাকতে পারে, তাই আপনার শরীর কিভাবে প্রতিক্রিয়া করছে তার দিকে সজাগ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

পেঁয়াজ কী অ্যালার্জি সারাতে পারে?

পেঁয়াজ কোনভাবে অ্যালার্জি দূর করতে পারে না। অ্যালার্জি হল কিছু মানুষের বিশেষ কিছু অ্যালার্জেনের প্রতিক্রিয়ায় হয় যেমন পরাগরেণু বা বিশেষ কিছু খাবার। এমনকি পেঁয়াজ কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অ্যালার্জি বাড়িয়ে দিতে পারে। অ্যালার্জি থেকে বাঁচা মানে ঐ বিশেষ অ্যালার্জেনগুলি চিহ্নিত করা ও সেগুলি থেকে দূরে থাকা, ওষুধ ও ইমিউনোথেরাপি, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা এবং স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমানো এর থেকে দূরে থাকার উপায় হতে পারে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে খাবারে পেঁয়াজ থেকেই অ্যালার্জি হতে পারে।

পেঁয়াজ কী জ্বর সারাতে পারে?

পেঁয়াজ জ্বর সারাতে পারে না, কিন্তু জ্বরের উপসর্গগুলি কমাতে পারে। জ্বর হচ্ছে এমন এক অবস্থার উপসর্গ যার কারণ হল শরীরে কোন অসুস্থতা বা সংক্রমণ, একে ঠিক করতে হলে এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে পেঁয়াজের বিশেষ কিছু উপকারিতা রয়েছে এবং কিছু পুষ্টিগুণ রয়েছে কিন্তু এর থেকে সরাসরি জ্বর সেরে যাওয়ার কোন সংযোগ নেই। কিছু স্বাস্থ্যকরী পুষ্টিগুণের জন্য আপনি খাবারের তালিকায় একে রাখতে পারেন, তবে শুধুমাত্র এ দিয়ে জ্বরের চিকিৎসা করা যাবে তা ভাবা ঠিক না।

পেঁয়াজ কী গলা ব্যথা কমাতে পারে?

পেঁয়াজ গলা ব্যথা সারাতে পারে না, কিন্তু তবে গলা ব্যথার উপসর্গে এটি কিছুটা আরাম দিতে পারে। পেঁয়াজের মধ্যে কিছু অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারি ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল যৌগ রয়েছে যা গলা ব্যথায় কিছুটা আরাম দেয়। কিন্তু, এটা মনে রাখা দরকার যদিও পেঁয়াজে কিছুটা আরাম পাওয়া যায়, এটা কিন্তু গলা ব্যথার সঠিক কারণের দাওয়াই নয়, ভাইরাসজনিত বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণসহ নানা কারণের জন্য এটা হতে পারে। একটি সুষম খাদ্যতালিকায় পেঁয়াজ থাকতে পারে এবং তা সামগ্রিক সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে কিন্তু গলা ব্যথা শুধুমাত্র এতেই সারানো যায় তা ভেবে নেওয়া ঠিক নয়। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রচারিত একটি বিশ্বাস জনপ্রিয় হয়েছে যেখানে দাবি করা হয়েছে যে আপনার মোজায় পেঁয়াজের টুকরো রাখলে বা পেঁয়াজ মালিশ করলে সর্দি এবং ফ্লু সেরে যায়। আমরা এর বিশদ ফ্যাক্ট-চেক করে দেখেছি, আমরা এই সিদ্ধান্তে এসেছি এই দাবী অলীক। মোজার মধ্যে পেঁয়াজের টুকরো রাখলে তা সর্দি-কাশি বা জ্বর সারাতে পারে এমন কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। এধরনের রোগের প্রতিকারে অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা পরিষেবা ও পেশাদারী স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শের ওপর নির্ভর করা উচিত।

চৈতালিভারতিয়া, এমএসসিস্পেশালাইজডডায়েটিক্সইনডায়াবেটিসএবংকার্ডিয়াকনিউট্রিশন বলেছেন, ”কিছু কিছু সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য পেঁয়াজ বহুকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, তবে এটা ভালোভাবে বোঝা দরকার যে এটি বিশেষ কিছু উপসর্গের জন্য উপকারী, এটি অসুস্থতার জন্য ওষুধ নয়। পেঁয়াজে কোয়ারসেটিনের মতো যৌগ রয়েছে, যা এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এগুলিকে বিভিন্ন অবস্থার জন্য ঘরোয়া প্রতিকারের উপায় হিসাবে মনে করা হয়, যেমন কাশি কমানোর জন্য মধুর সাথে পেঁয়াজের রস মেশানো, অ্যালার্জির লক্ষণগুলির জন্য কোয়ারসেটিনের সম্ভাব্য অ্যান্টি-অ্যালার্জিক বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যবহার করা এবং গলা ব্যথা কমানোর জন্য পেঁয়াজের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যবহার করা। যদিও পেঁয়াজ উপসর্গ গুলি থেকে আরাম দিতে পারে, তবে কখনই এগুলিকে এই স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলির সেরে যাওয়ার উপায় হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়।”