Last Updated on March 5, 2024 by Urmimala Sengupta
সারমর্ম
সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিওতে দাবী করা হয়েছে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে চোখের ক্ষতি হয়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবীর অর্ধেকটা ঠিক।
দাবি
মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে চোখের ক্ষতি হয়। সোশ্যাল মিডিয়াতে এই ধরণের ভ্রান্তিকর পোস্ট আরো অনেক ছড়িয়ে আছে | এই দাবি নিয়ে একটি পোস্ট এখানে দেখা যাবে |
সত্যানুন্ধান
সেল ফোন থেকে কী চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা হয়?
সেরকমটাই মনে হয়। যে সমস্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে সেল ফোন থেকে চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা তৈরী হচ্ছে। যদিও বাচ্চাদের মোবাইল ফোনের অত্যধিক ব্যবহার সীমিত করা ভাল, তবে ভিডিওটিতে শিশুর নির্দিষ্ট রোগ নির্ণয় এবং চোখে প্যাচ দেওয়ার যে বিষয়টির কথা বলা হয়েছে তার কারণ কি তার জন্য পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায় না। এছাড়া, মোবাইল ফোনে বেশি করে স্ক্রীন টাইম কাটালে যে সরাসরি পেরিফেরল ভিশনের পরিবর্তন হয়, তা ঠিক করার জন্য যে বিশেষ ব্যান্ডেজ লাগে তার কোন প্রমাণ কিন্তু এই দাবীর স্বপক্ষে পাওয়া যায় না।
বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য হরিয়ানার গুরগাঁও-এ অরুণোদয় ডেসেরেট আই হসপিটালের (এডিইএইচ) অপথ্যালমোলজিষ্ট বা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ আদিত্য শেঠির সাথে যোগাযোগ করেছি। তিনি জানান, “মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহারের বৃদ্ধি এবং শিশুদের মধ্যে খুব বেশি মাত্রায় ইসোট্রপিয়ার বেড়ে যাওয়ার মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক রয়েছে। অনেকসময় ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে চোখের স্ট্রেন, ক্লান্তি এবং ফোকাসের পরিবর্তনের কারণ হতে পারে, যা চোখের অ্যালাইনমেন্টকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া, ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখানো ব্যান্ডেজটির কারণ কী, এর পেছনে অতিরিক্ত বিষয়গুলি কী কী তা না জানলে পুরোপুরি বোঝা সম্ভব নয়। এই ধরণের বিষয়বস্তুকে নজরে রাখতে হলে সতর্কতার দিকটি ভেবে দেখতে হবে এবং এর জন্য বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দরকার। আমার মনে হয়, চোখের ফিউশন ভাঙতে ও অ্যালাইনমেন্ট ঠিক করতে ব্যান্ডেজটি কোন চিকিৎসা পরিকল্পনার একটি অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তবুও, এটি সঠিকভাবে বোঝার জন্য যোগ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞের সামগ্রিক মূল্যায়ন প্রয়োজন। যে চিকিৎসা এখানে দেখানো হয়েছে এই ভিডিওটি এককভাবে তার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করতে অক্ষম। এটি এখনও চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রমাণিত পদ্ধতি নয় এবং এখনো এর সাফল্যের হার নথিভুক্ত করা নেই। এটি ফিউশন ভেঙে ফেলা বা বিশ্রাম দেওয়ার ব্যবহারিক পদ্ধতি হতে পারে। এধরনের সমস্যায় ওষুধের ব্যবহার ও অস্ত্রোপচারের মত চিকিৎসার কথা বলা হয়ে থাকে। তবুও বলব, এধরনের চিকিৎসার সাহায্য নেওয়ার আগে একজন যোগ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞকে দিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করানো ও সঠিক রোগ নির্ণয়ের বিশেষ প্রয়োজন। শিশুটির প্রয়োজন অনুসারে পেশাদারী পরামর্শের মাধ্যমে সমস্যার অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে বের করা এবং পাশাপাশি যথাযথ ও কার্যকরী চিকিৎসার পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।“
এছাড়াও, বিষয়টি আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য আমরা ডেয়লি ওয়াটান নিউজের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং ওদের কাছ থেকে কোন জবাব পেলেই আমরা বিষয়টি জানাবো।
কীভাবে সেলফোন চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা তৈরী করতে পারে?
বর্তমানে যে সমস্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে বলা হয়েছে দীর্ঘ সময়ের জন্য মোবাইল ফোনের ব্যবহার দৃষ্টিশক্তির ওপর বিভিন্ন ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে ডিজিটাল আই স্ট্রেন বা কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম হতে পারে। এটা হয় যখন আপনি কম্পিউটার, ফোন বা ট্যাবলেটের মতো স্ক্রিনের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকেন, তখন আপনার চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং অস্বস্তি বোধ হয়। এতে চোখের স্ট্রেন, মাথাব্যথা, ঝাপসা দৃষ্টি এবং শুষ্ক চোখ বা ড্রাই আইজের মতো সমস্যা তৈরী হতে পারে। অনেক সময় ধরে একই জায়গায় বসে থাকা এবং বিরতি না নেওয়া এটিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। মাঝে মাঝে বসে থাকার অবস্থান পরিবর্তন করা, বিরতি নেওয়া এবং চোখ কে বিশ্রাম দিলে এর থেকে উপকার মিলতে পারে।
এছাড়া, মোবাইল ফোন থেকে নীল আলো বেরোয়, যা ঘুমানো ও জেগে ওঠার যে চক্র বা সাইকেল তার ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং এর থেকে আই স্ট্রেন হতে পারে এবং খুব বেশি সংস্পর্শে থাকলে তা থেকে রেটিনার ক্ষতিও হতে পারে।
আমরা এক গবেষণায় আরো দেখেছি যে বাড়তি স্ক্রীন টাইম, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে, এবং মায়োপিয়া (দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হওয়া) বেড়ে যাওয়ার মধ্যে একটি যোগসূত্রের কথা বলা হয়েছে। অন্য আর একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করার সময় মানুষ চোখের পাতা ফেলে কম। এর ফলেও চোখ শুকনো বা ড্রাই আইজ বা চোখ জ্বালা বা চুলকানোর মত সমস্যা হতে পারে। এই জিনিসগুলো ছাড়াও, বেশ কিছু প্রমাণে দেখা গেছে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় চোখের সঙ্গে দূরত্ব ঠিক থাকলে বা কোণ ঠিক না থাকলে, কাঁধে বা ঘাড়ে চাপ পড়তে পারে তা থেকে অস্বস্তি বাড়তে পারে।
মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে হওয়া চোখের সমস্যা কী আমরা প্রতিহত করতে পারি?
সেইরকমটাই মনে হয়। অত্যধিক মাত্রায় মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ফলে তৈরী হওয়া চোখের দৃষ্টির সমস্যা কিছু অভ্যাসের মাধ্যমে প্রতিহত করা সম্ভব। মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়া ও দীর্ঘক্ষণ স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে থাকা বা অতিরিক্ত স্ক্রীন টাইম কমিয়ে আনা এই অভ্যাসগুলির মধ্যে পড়ে। ২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়, অর্থাৎ ২০ মিনিট অন্তর স্ক্রীন থেকে ২০ ফুট দূরের কিছু জিনিসের দিকে ২০ সেকেন্ড ধরে তাকানোর অভ্যাস, চোখ ভালো রাখতে উল্লেখযোগ্যভাবে উপকার করতে পারে। এছাড়াও, বেশি সময় ধরে স্ক্রীন ব্যবহারের থেকে চোখের দৃষ্টির ক্ষতি ঠিক করতে চরম পন্থাগুলি নেওয়া যেমন ব্যান্ডেজ ব্যবহারের পরিবর্তে চোখের যত্নের জন্য সুঅভ্যাস গড়ে তোলা জরুরী।
চোখ ছাড়াও, সেল ফোন ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি ৪০% বাড়িয়ে দেয় এমন দাবিও আমরা খারিজ করেছি।
Disclaimer: Medical Science is an ever evolving field. We strive to keep this page updated. In case you notice any discrepancy in the content, please inform us at [email protected]. You can futher read our Correction Policy here. Never disregard professional medical advice or delay seeking medical treatment because of something you have read on or accessed through this website or it's social media channels. Read our Full Disclaimer Here for further information.