Home Blog

বাড়িতে সাদা চুল কী পুরোপুরি স্থায়ীভাবে কালো করা যায়?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে বাড়িতে তৈরী আমলকী, হলুদ ও সরষের তেলের মিশ্রণ সাদা চুলে লাগালে পুরোপুরি স্থায়ীভাবে কালো করে তোলা যায়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল।

Rating

দাবি

সাদা চুল কালো করা নিয়ে অনেক রকম ঘরোয়া পধ্যতি ছড়িয়ে আছে ইন্টারনেটে। তেমনি একটি পোষ্টে বলা হয়েছে সাদা চুল ঘরেই চিরতরে রাঙিয়ে দেয় গুজবেরি, হলুদ এবং সরিষার তেল দিয়ে তৈরি তেল। তেমনি একটি পোস্ট এখানে দেখা যাবে।

সত্যানুন্ধান

আমাদের চুল সাদা হয়ে যায় কেন?

বয়স বেড়ে চলার সাথে সাথে চুলের রঙ সাদা হয়ে যাওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। হার্ভার্ড হেলথের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে চুলের ফলিকলগুলি থেকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে রঙ তৈরী হওয়ার পরিমাণ কমতে থাকে, তাই যখন চুলের আয়ু শেষ হয়ে যাওয়া ও এর আবার নতুন করে গজিয়ে ওঠার চক্রটি চলতে থাকে, ৩৫ বছরের পর চুলের গোড়া থেকে সাদা চুল গজিয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরী হয়। এই প্রক্রিয়ায় জেনেটিক্সের একটি বড় ভূমিকা আছে। এছাড়াও, বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা বা কারণের জন্য চুল সময়ের আগে পেকে যেতে পারে, যাকে বলা হয় বয়সের আগে চুল পেকে যাওয়া। এই কারণগুলির মধ্যে ভিটামিনের ঘাটতি, থাইরয়েডের রোগ, ভিটিলিগো এবং অ্যালোপেশিয়া রয়েছে।

অনেকে মনে করেন স্ট্রেস বা মানসিক চাপের কারণেও চুল পেকে যেতে পারে। তবে এর পেছনে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ খুব কমই আছে। গবেষণায় এমন দেখা গেছে যে মানসিকের চাপের কারণে ইঁদুরের লোমগুলি সাদা হয়ে যায়। কিন্তু এই ঘটনা মানুষের ক্ষেত্রেও একইভাবে ঘটবে কিনা তা এখনো জানা যায়নি।

চুল সাদা হয়ে যাওয়া কী পুরোপুরি বদলে ফেলা যায়?

না। পণ্য উৎপাদকদের অনেকরকম মার্কেটিং বা বিপণনের দাবী সত্ত্বেও বলা যায় চুলের সাদা হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া পুরোপুরি উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায় না। প্রসাধনী রঙের বাইরে, যখন একটি চুলের ফলিকল রঙ তৈরী করে সেই রঙ হয় স্থায়ী ও তা কখনোই পরিবর্তন করা যায় না। হার্ভার্ড ব্লগ জানিয়েছে যদি একটি মাত্র চুল বাদামী (বা লাল বা কালো বা সোনালী) হয়, এই রঙের পরিবর্তন কখনই সম্ভব নয় (যদি না আপনি চুলে রঙ করেন)।

Dermatologist & Cosmetologist

কনসালটেন্ট ডার্মাটোলজিষ্ট ও কসমেটোলজিষ্ট ডাঃ রীনা মাজিথিয়া আরো জানিয়েছেন, “চুল পেকে যাওয়া হচ্ছে প্রাথমিকাভাবে বয়স বেড়ে যাওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এটিকে বিভিন্ন রকম জেনেটিক বৈশিষ্ট্য প্রভাবিত করে। যখন চুলের ফলিকলের পিগমেন্ট তৈরীর কোষগুলিতে রঙ তৈরীর পরিমাণ কমে যেতে থাকে তখন এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই কম পরিমাণে তৈরী হওয়ার জন্যই চুল দেখতে ধুসর বা সাদা হয়ে যায়।

চুল ভালো রাখতে লেবু ও নারকোল তেলের কিছু উপকারিতার বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন এদুটি চুল নরম ও চকচকে করে, কিন্তু তারা কখনোই চুল সাদা হয়ে যাওয়ার অন্তর্নিহিত কারণগুলির পরিবর্তন করতে পারে না। লেবুর রস হল অম্ল জাতীয় বা অ্যাসিডিক এবং এটি হয়ত বাড়তি তেল বা স্কাল্পের ওপরে জমে থাকা কিছু সরিয়ে দিতে পারে,আবার নারকোল তেল চুলের পুষ্টিতে সাহায্য করতে পারে। তবে, এদের কোনটিই মেলানিন (চুলের রঙ তৈরীতে যে পিগমেন্ট কাজে লাগে) তৈরীকে প্রভাবিত করতে পারে না বা বয়স বেড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে উল্টোমুখে ঘুরিয়ে দিতে পারে না।“

Swati Watwani

পার্সসিয়ানলিলির স্কিন/হেয়ার/অ্যাস্থেটিক্স/আয়ুর্বেদা ক্লিনিকের ডার্মাটোলজিষ্ট এবং মেডিকেল ডিরেক্টর ডাঃ স্বাতী ওয়াতওয়ানি বলেছেন, “আপনি যখন ৪০-এর শেষের দিকে ও ৫০-এর গোড়ায় পৌঁছন তখন আপনার চুল সাদা হতে শুরু করে। কিন্তু সময়ের আগে পেকে যাওয়ার এই প্রক্রিয়া ২০-র প্রথম দিকেও শুরু হয়ে যেতে পারে। তাই সময়ের আগে চুল পেকে যাওয়ার পদ্ধতির গতি কমাতে এর পেছনে কারণগুলি খুঁজে বের করে তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এটা পুরোপুরি উলটো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।“

আমলকী, সরষের তেল আর হলুদের মিশ্রণ দিয়ে কী চুল সাদা হয়ে যাওয়াকে পুরোপুরি বদলে ফেলা যায়?

আমলকী, সরষের তেল আর হলুদের মিশ্রণ দিয়ে চুল সাদা হয়ে যাওয়াকে পুরোপুরি বদলে ফেলা যায় এমন কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। বয়স বেড়ে যাওয়া ও জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে চুল সাদা হয়ে যাওয়ার পেছনে যে বিষয়টি রয়েছে তা হল চুলের রঙের জন্য যে পিগমেন্ট দায়ী মেলানিন, মেলানিনের পরিমাণ কমে যাওয়াই চুল সাদা হয়ে যাওয়ার প্রাথমিক কারণ। কিছু প্রাকৃতিক উপায় ও উপাদান চুলকে ভালো রাখতে পারে ঠিকই, এর জন্য দায়ী কারণগুলির পরিবর্তন না করা গেলে কিন্তু সাদা চুল পুরোপুরি কালো করে দেওয়া সম্ভব নয়। কিছু ক্ষেত্রে নিউট্রিশনের ঘাটতির কারণে সময়ের আগে চুল পেকে গেলে এই প্রক্রিয়ার গতিকে কিছুটা কমানো যায়।

আমলকী (যাকে আমলাও বলা হয়), সরষের তেল এবং হলুদ এধরণের অবস্থায় কাজে লাগতে পারে বলে মনে করা হয়। তবে এর কার্যকারিতা প্রমাণ করার মত যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

  • আমলকী (আমলা) – আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি রয়েছে যা চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস-এর বিরুদ্ধে লড়াই করে, যার কারণে সময়ের আগে চুল পেকে যায়। কিন্তু আপনার ডায়েটের অংশ হিসেবে আমলকী খাওয়া বা আমলকী দিয়ে বানানো হেয়ার মাস্ক সাদা চুল পুরোপুরি বদলে দিতে পারে না কিন্তু এই মাস্ক চুলের সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে।
  • সরষের তেল – চুল ভালো রাখতে সরষের তেলের কিছু উপকারিতা রয়েছে, এতে স্কাল্প নরম থাকে ও চুলের বৃদ্ধি ভালো হয়। সরষের তেল দিয়ে স্কাল্প মালিশ করলে চুল ভালো হতে পারে তবে, সাদা চুল উলটো দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে না।
  • হলুদ – হলুদের মধ্যে অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে মনে করা হয়। এটি স্কাল্প ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করতে পারে কিন্তু সাদা চুলের রঙ পুরোপুরি আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে কিনা তার কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

কিছু উপায় ও প্রসাধনী দিয়ে আপনার চুলের স্বাস্থ্য ভালো হতে পারে, তা দেখতেও ভালো হতে পারে কিন্তু তা দিয়ে সাদা চুল পুরোপুরি বদলে ফেলা যায় না। আপনি যদি আপনার চুল সাদা হয়ে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হন এবং এটি আপনার আত্ম-সম্মানকে প্রভাবিত করে, আপনি পেশাদার পরামর্শ এবং চিকিৎসার জন্য চুলের রং ব্যবহার বা ডার্মাটোলজিষ্ট বা ট্রাইকোলজিস্টের সাথে কথা বলার কথা ভাবতে পারেন। মনে রাখবেন ঘরোয়া উপায়গুলি কতটা কাজ করবে তা কিন্তু ব্যক্তি বিশেষে আলাদা আলাদা হয় এবং আপনার যাতে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য চুলের জন্য ঘরোয়া কোন উপায় ব্যবহার করার আগে সতর্ক হওয়া এবং একটি প্যাচ টেস্ট করা গুরুত্বপূর্ণ।

মানুষ বিশ্বাস করে যে বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় যেমন নাকে তেল দেওয়া চুলের সাদা হয়ে যাওয়াকে প্রভাবিত করতে পারে, টমেটো এবং কফি ব্যবহার করলে সাদা চুল কালো হয়ে যেতে পারে, লেবু এবং পেঁয়াজ চুলের সাদা হয়ে যাওয়াকে পুরোপুরি বদলে ফেলতে পারে এবং আরও অনেক কিছু। যদি আপনি সাদা চুলের ব্যাপারে কিছু করতে চান তবে একজন ডার্মাটোলজিষ্ট বা পেশাদারী চিকিৎসা পরামর্শ নিন। তারা আপনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দিতে পারবেন। মনে রাখবেন যে জেনেটিক্স, সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং লাইফস্টাইল সহ অনেকগুলি কারণ চুলের স্বাস্থ্য এবং চেহারাতে প্রতিফলিত হয়।

পেঁয়াজ এবং টুথপেস্ট ট্যানিং দূর করতে পারে?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে যে পেঁয়াজ ও টুথপেষ্ট দিয়ে ঘষলে ট্যান দূর হয়। এতে সোডা ও গোলাপ জল মেশানোর কথাও বলা হয়েছে। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী ভুল

rating

দাবি

অনেক সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে পেঁয়াজ এবং টুথপেস্ট ঘষে ত্বকের ট্যানিং দূর করার কথা বলা হয় । তেমনি একটি পোস্ট এইখানে দেখতে পাওয়া যাবে।

সত্যানুন্ধান

মানুষের ত্বকের রঙ কোন কোন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

মানুষের ত্বকের অনেক রকম টোন ও রঙ হয়। ত্বকের রঙের পেছনে অনেকগুলি কারণ থাকে, জেনেটিক্স হল প্রধান কারণ। টাইরোসিনেজ এনজাইম জিনগত প্রক্রিয়ার জন্য দায়ী যা মানুষের ত্বকের রঙ নিয়ন্ত্রণ করে।

মেলানিন হল ত্বকের রঙের প্রধান নির্ধারক, মেলানোসাইট নামক কোষের মাধ্যমে আমাদের ত্বক যাকে তৈরি করে। মেলানিন সেই সমস্ত জিনগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে যা পরিমাণগত ও গুণগত দিক থেকে আমাদের ত্বকের রঙ নির্ধারণ করে। এই জেনেটিক প্রক্রিয়া বা মেকানিজম ফ্যাকাল্টেটিভ মেলানোজেনেসিস এবং ট্যানিং প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ঠিক হয়। এছাড়াও, ভিটামিন ডি, মেলানিনের মতো, বিভিন্ন টিস্যুতে কোষের বেড়ে চলা এবং পার্থক্য নিয়ন্ত্রণ করে। তাই এটিও ত্বকের রং প্রভাবিত করতে পারে।

ট্যানিং কী?

ট্যানিং হল এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি(ইউভি)র বিকিরণে ত্বকের রঙ গাঢ় হয়ে যায়। আল্ট্রাভায়োলেট বা অতিবেগুনী বিকিরণের প্রাথমিক উৎস হল সূর্যের আলো, কিন্তু ট্যানিং বেডের মতো কৃত্রিম উৎস থেকেও এই রশ্মি বের হয়। যখন ত্বক ইউভি বিকিরণের সংস্পর্ষে আসে তখন শরীরের মেলানোসাইট (যে কোষ মেলানিন তৈরী করে) মেলানিন বেশি মাত্রায় তৈরী করে। ইউভি রশ্মির ক্ষতি যাতে আর না হতে পারে তার জন্য এই কোষগুলির এটি একটি রক্ষণাত্মক প্রতিক্রিয়া বলে মনে করা হয়। মেলানিন হল এমন একটি পিগমেন্ট যা থেকে মানুষের দেহের ত্বক, চুল ও চোখের রঙ তৈরী হয়। এটি ইউভি বিকিরণের শোষণ ও ছেড়ে দেওয়া বা বিচ্ছুরণের সময় প্রাকৃতিক সানস্ক্রীন হিসেবে কাজ করে। মেলানিন ত্বকের গভীর স্তরে প্রবেশের পরিমাণ কমায়। বাড়তি মেলানিন তৈরীর কারণে ত্বক কালো হয় বা ট্যানিং বাড়ে।

ট্যানিং কীভাবে দূর করা যায়?

কিছু পদ্ধতি আছে যা ট্যানিং দূর করতে সাহায্য করেঃ

১। এক্সফলিয়েশন বা ত্বকের ওপরের অংশ তুলে ফেলা – নিয়মিত ভাবে ত্বকের ওপরের অংশ তুলে ফেলার কাজ করলে ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়, এর মাধ্যমে ট্যান হালকা হয়। স্ক্রাব, লুফা বা এক্সফলিয়েটিং গ্লাভস দিয়ে ত্বকের সবচেয়ে ওপরের অংশ তুলে ফেললে ট্যান হালকা হয়।

২। ত্বকের-রঙ হালকা করার পণ্য – বিভিন্ন ক্রিম, লোশন এবং সিরাম যাতে এমন উপাদান থাকে যা সময়ের সাথে সাথে ট্যানিংয়ের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এই পণ্যগুলি ত্বকের প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েশন প্রক্রিয়ার গতিকে দ্রুত করতে এবং মেলানিন তৈরীকে বাধা দিতে সাহায্য করতে পারে।

৩। ব্লিচিং-এর জিনিসপত্র – কেউ কেউ ব্লিচিং-এর সামগ্রী ব্যবহার করতে পারেন, যা ত্বককে হালকা করতে সাহায্য করতে পারে। তবে এর জন্য বিশেষ সতর্কতা জরুরি এবং পেশাদারদের সাহায্য নিয়ে তা করা উচিত। সঠিকভাবে ব্যবহার না করা হলে এগুলি থেকে ত্বকে জ্বালা এবং অন্যান্য সাইড এফেক্ট হতে পারে।

৪। কেমিক্যাল পিল – ডার্মাটোলজিষ্টরা অনেকসময় কেমিক্যাল পিলের সাহায্য নিয়ে থাকেন। এই পদ্ধতিতে একটি রাসায়নিক মিশ্রণ ত্বকে ব্যবহার করা হয় যাতে বাইরের স্তরটি এক্সফোলিয়েট হয় এবং এটি খোসা ছাড়ানোর মত করে উঠে আসে। এটি ট্যানিং এর পরিমাণ কমাতে ও নতুন এবং ফর্সা রঙ-এর ত্বক তৈরীতে কাজে লাগতে পারে।

লেসার চিকিৎসা – ট্যানিং এর জন্য যে হাইপারপিগমেন্টেশন হয় সেই জায়গাগুলিতে কয়েকরকমের লেসার চিকিৎসা বা ইনটেনস পালসড লাইট (আইপিএল) চিকিৎসা করা হয়। এই পদ্ধতিগুলিতে ত্বকের মেলানিন পিগমেন্টগুলি ভেঙে যায়, ফলে ট্যান হালকা হয়ে যায়।

পেঁয়াজ আর টুথপেষ্টের মিশ্রণ লাগালে কী ত্বকের ট্যান দূর করা যায়?

না।পেঁয়াজ আর টুথপেষ্টের মিশ্রণ লাগালে ত্বকের ট্যান দূর হয়, এরকম কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। দাঁতের যত্নের জন্যই টুথপেষ্ট তৈরী করা হয় এবং এটি কখনোই ত্বকে লাগানো উচিত নয়। টুথপেষ্টে এমন কিছু উপাদান থাকতে পারে যা থেকে ত্বকে জ্বালা-যন্ত্রণা বা অ্যালার্জি হতে পারে। অন্যদিকে পেঁয়াজে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, সেটা থেকে হয়তো ত্বকের ক্ষেত্রে কিছু উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু পেঁয়াজ ব্যবহার করে ত্বক সাদা করা যায় কিনা তা এখনো জানা যায়নি।

সাধারণভাবে, ট্যান দূর হলে ত্বক ঝকঝকে হতে পারে কিন্তু ট্যানিং দূর করা এবং ত্বক সাদা করার পেছনের উদ্দেশ্য আলাদা হতে পারে। এক্সফোলিয়েশনের মতো পদ্ধতি, ত্বক-সাদা করার উপাদানের ব্যবহার, বা কেমিক্যাল পিল বা লেজার থেরাপির মতো কিছু চিকিৎসায় ত্বক বা স্কিন টোন হালকা হতে পারে। পিগমেনটেশন কমানো ও ত্বকের রঙ হালকা করতে এই পদ্ধতিগুলির ব্যবহারে ওভারল্যাপিং এফেক্ট থাকতে পারে। লোকমুখে কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে, কিন্তু পেঁয়াজ বা টুথপেষ্ট কতটা ভালো ভাবে ট্যান দূর করতে পারে তা নিয়ে কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায় না।

ডাঃ জয়িতা চৌধুরী, এমডি (ডার্মাটোলজি) বলেছেন, “টুথপেস্টে নন-আয়নিক ডিটারজেন্ট এসএলএস/পলিথিলিন গ্লাইকল, ট্রাইক্লোসান/কোপোলাইমার থাকে। দীর্ঘদিন ধরে এই জিনিসগুলোর ব্যবহার বিশেষত মুখের ত্বকে, কখনোই করা উচিত নয়। “এমনকি পেঁয়াজ ও টুথপেষ্ট দুটো থেকেই ত্বকে জ্বালা-যন্ত্রণা হতে পারে এবং দুটো একসঙ্গে মিশিয়ে লাগালে তা আরো বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও, পেঁয়াজে সালফার রয়েছে, তার সঙ্গে টুথপেষ্টের উপাদানগুলি মিশ্রিত হলে তা থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়া হতে পারে এবং এর থেকে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।

Dermatologist

ডাঃ ইরাম কাজী, এমডি (ডার্মাটোলজি) বলেন, “টুথপেস্টে এমন উপাদান থাকতে পারে যা দাঁতকে সাদা করতে পারে কিন্তু ত্বককে নয়। টুথপেষ্ট ত্বকে লাগালে তা থেকে ত্বকে জ্বালা-যন্ত্রণা, জ্বালা-পোড়া এবং ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে কারণ এর উপাদানগুলি ত্বকের পক্ষে কড়া। ত্বকের কোন সমস্যায় টুথপেষ্ট ব্যবহারের পরামর্শ আমি দেব না।“

Dermatologist

এরকমই ত্বকে গোলাপ জলের ভূমিকা নিয়ে আমরা কনসালটেন্ট ডার্মাটোলজিষ্ট ডাঃ সৌম্যা সচদেবার সঙ্গে কথা বলি, তিনি বলেন, “গোলাপ জলে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা ত্বককে কোমলতা দেয় ও ত্বকে লাল হয়ে যাওয়া কমিয়ে দিতে পারে। তাই, অ্যাকনের চিকিৎসায় এর ব্যবহারে উপকার হতে পারে, কিন্তু, সব ধরণের মুখের ত্বকে গোলাপ জলের প্রভাব ভালো হয় না, কারণ এর থেকে ডার্মাটাইটিস বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

Swati Watwani

এছাড়াও, পার্সিয়ানলিলির স্কিন/হেয়ার/অ্যাস্থেটিক্স/আয়ুর্বেদা ক্লিনিকের ডার্মাটোলজিষ্ট এবং মেডিকেল ডিরেক্টর ডাঃ স্বাতী ওয়াতওয়ানি ত্বকে বেকিং সোডা লাগাতে নিষেধ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন বেকিং সোডায় অনেক বেশি মাত্রায় ক্ষারীয় বা অ্যালকালিন পিএইচ রয়েছে, ফলে এতে ত্বকের স্বাভাবিক পরতে ক্ষতি হতে পারে, এতে ত্বকে এনজাইমের কাজ ব্যাহত হতে পারে, যা থেকে বিভিন্ন সমস্যার সূত্রপাত হয়, যেমন জ্বালা-যন্ত্রণা, ত্বকে জলের পরিমাণ কমে যাওয়া, ত্বকের প্রতিবন্ধকতার কাজ ব্যাহত হতে পারে। ত্বকে অ্যাসিডিক পিএইচ রয়েছে এছাড়াও বেকিং সোডার অত্যন্ত ঘর্ষণকারী বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রচুর পরিমাণে অ-নির্দিষ্ট যান্ত্রিক এক্সফোলিয়েশন ত্বককে শুষ্ক করে তুলতে পারে এবং তা থেকে ফুসকুড়ি হয় এবং হাইপারপিগমেন্টেশন বাড়িয়ে ত্বককে আরও সংবেদনশীল করে তোলে।

Dermatologist

ডাঃ নেহা খুরানা, এমডি (ডার্মাটোলজি) সহমত জানিয়ে বলেছেন, “ত্বকের চিকিৎসায় নিজে করো গোত্রের কোন পদ্ধতির আমি পরামর্শ দেব না।  প্রত্যেককে বুঝতে হবে যে আমাদের ত্বকের পিএইচ অ্যাসিডিক প্রান্তে রয়েছে, এইভাবে একটি মৌলিক পিএইচ যুক্ত কিছু ব্যবহার করা ত্বকের পিএইচ ভারসাম্যকে পরিবর্তন করতে পারে যা ত্বকের আর্দ্রতার বাধাকে প্রভাবিত করে, ফলে ত্বকে জ্বালা, শুষ্কতা এবং এক্সফলিয়েশন হতে পারে। তাছাড়া, টুথপেস্ট থেকে অ্যালার্জিক কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিসও হতে পারে।“

Dermatologist

সব শেষে, ডাঃ জ্যোতি আগারকর, এমডি (ডার্মাটোলজি) পুরো বিষয়টি সম্পর্কে বলেন, “ভগবান আমাদের খুব সুন্দর একটা দেহ ও ত্বক দিয়েছেন এবং এর রঙ এর পরিবর্তন না করে আমাদের তা নিয়েই আনন্দে থাকা উচিত। আমি সবসময়ই আমার রোগীদের সুষম খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও বেশ কিছুটা পরিমাণে জল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। এর থেকেই যে স্বাভাবিক চকচকে ভাবে ত্বকে আসে তা কোন কৃত্রিম ফর্সা করার পণ্য করতে করতে পারে না। এছাড়াও, যখন আপনি ত্বকের জন্য কোন পণ্য বেছে নেবেন তখন অবশ্যই আপনার ত্বক কোন প্রকৃতির তা দেখে নেবেন। “ত্বক ফর্সা করার অনেকরকম মিথ রয়েছে। থিপ মিডিয়া এর আগে এইসব দাবীর ফ্যাক্ট চেক করে দেখেছে। এর মধ্যে রয়েছে চিনি আর লেবুর রসের মিশ্রণ দিয়ে ত্বক ফর্সা করা যায় এবং টমেটো ও বেকিং সোডার মিশ্রণ লাগালে ত্বক ফর্সা হয়, ইত্যাদি। ডার্মাটোলিজিষ্টের সুপারিশ করা পণ্যগুলি ব্যবহার করা জরুরি। এছাড়াও, যেকোনো নতুন স্কিনকেয়ার ট্রিটমেন্ট করার আগে সবসময় একজন স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত পেশাদার বা ডার্মাটোলজিষ্টের সাথে পরামর্শ করুন, বিশেষ করে যদি কারোর ত্বক সংবেদনশীল হয় বা কোন সমস্যা থাকে।

একটি মাটির পাত্র এবং মোমবাতি কী ঘর গরম করতে পারে?

সারমর্ম

একটি ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট দাবি করেছে যে একটি মাটির ফুলের পাত্র এবং একটি মোমবাতি ঘর গরম করতে পারে। আমরা সত্য-পরীক্ষা করেছি এবং দাবিটি বেশিরভাগই মিথ্যা বলে পেয়েছি।

rating

দাবি

শীতকালে ঘর গরম করার উপায় নিয়ে অনেক পোস্ট ইন্টারনেটে ছড়িয়ে আছে । তেমনি একটি ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে একটি মাটির ফুলের পাত্র এবং একটি মোমবাতি ঘরকে গরম করবে। পোস্টটি বলে যে এটি ঘরটিকে উষ্ণ করে তুলতে পারে যদি অন্য কোনও উৎস না থাকে।

সত্যানুন্ধান

এই দাবী কী সঠিক?

ঠিক তা নয়। একটি মাটির ফুলদানি ও একটি মোমবাতি কিছুটা তাপ সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু এটা মনে রাখা জরুরি একটি ঘর গরম করতে, বিশেষত ঠান্ডার সময় এই তাপ যথেষ্ট নাও হয়ে পারে।

এটি একটি ডিআইওয়াই বা নিজে করো প্রক্রিয়া যাকে বলা হয়, ‘ফ্লাওয়ার পট হিটার’ বা ‘ক্যান্ডেল হিটার’। এতে একটি উল্টে যাওয়া মাটির ফুলদানির ভেতরে একটি জ্বলন্ত মোমবাতি বসানো হয়, পাত্রটি হিট ডিফিউসার হিসেবে কাজ করে।

এই মূল বিষয়টি হল যে মোমবাতিটি ফুলের পাত্রের ভেতরে বাতাসকে গরম করে এবং পাত্রটি ঘরে সেই তাপ বিকিরণ করে।

এই পদ্ধতিতে একটি ছোট নির্দিষ্ট জায়গার জন্য তাপ হয়ত তৈরী হতে পারে। কিন্তু সাধারণভাবে গরম করার জন্য এটি নির্ভরযোগ্য বা কার্যকরী উপায় নয় এবং পুরো ঘর যথেষ্ট পরিমাণে গরম করতে এটা উপযোগী নয়।

একটি মাত্র মোমবাতি এবং ফুলদানি পুরো ঘরের তাপমাত্রা, বিশেষ করে বড় জায়গায় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট তাপ তৈরী করতে পারে না। তবে মাটির পাত্র কিছু তাপ শোষণ এবং বিকিরণ করতে পারে, কিন্তু তা খুব অল্প মাত্রায় এবং এটি কার্যকরী উপায় নয়। এছাড়াও, এটি থেকে পাত্রের আশেপাশে গরম হয়ে উঠতে পারে, যেরকম ফায়ারপ্লেসের ধারে বসে থাকলে মনে হয় কিন্তু এথেকে পুরো ঘর সমানভাবে গরম হতে পারে না।

Dr Rohan Pandey Psychiatrist

আমরা এই দাবি সম্পর্কে এমকেসিজি, ওড়িশার ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজিস্ট ডাঃ রোহন পান্ডে (এমবিবিএস, এমডি) কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি জানিয়েছেন, “কুড়ে ঘর গরম করার জন্য এই পাত্রের পদ্ধতি চীনে প্রাচীন কালে ব্যবহৃত হত। যদিও এমিশন একটি ফিল্টার ছাড়া দেখা যায় না, সেখান থেকে এর কাছাকাছি কিছুটা তাপ দিতে পারে। তবে, জলবায়ুর সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং গৃহনির্মাণ পরিকাঠামোর পরিবর্তনের জন্য, প্রাচীন ব্যবস্থার পরিবর্তে আধুনিক হিটার বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।“

ক্যান্ডেল হিটার থেকে কী কোন নিরাপত্তা জনিত উদ্বেগ রয়েছে?

কিছুটা থাকতে পারে। মাটির ফুলদানির মধ্যে মোমবাতি জ্বালালে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা হতে পারে। প্রথমত, মোমবাতির জ্বলতে থাকা শিখা থেকে আগুন ধরে পুড়ে যাওয়ার ভয় থাকতে পারে। যদি কেউ নজর না করেন বা পড়ে যায় তবে মোমবাতি থেকে আগুন লেগে পুড়ে গিয়ে জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যেতে পারে, বা এমনকি বাড়িতেও আগুন লেগে যেতে পারে। এছাড়াও, মোমবাতির জ্বলন্ত শিখার জন্য মাটির পাত্রটি খুব গরম হয়ে ওঠে, এতটাই এর তাপমাত্রা বেড়ে যায় যদি এটিকে স্পর্শ করা হয় তবে দেহাংশ পুড়ে যেতে পারে – বিশেষ করে অজ্ঞতার জন্য ছোট ছেলে-মেয়ে ও পোষ্য প্রানীদের ক্ষতি হতে পারে।

আরও একটি শারীরিক সমস্যা হতে পারে তা হল কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়া। একটি বদ্ধ ঘরে মোম জ্বালানো থাকলে তা থেকে বর্ণহীন ও গন্ধহীন কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস তৈরী হয়, এটি একটি বিষাক্ত গ্যাস, এর থেকে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এর কারণে মাথাব্যাথা, মাথা ঘোরা, বমি-বমি ভাব এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

বাতাসের গুণমান অন্য আর একটি বিষয়, মোমবাতি যখন জ্বলে তখন ঝুলকালি এবং অন্যান্য দূষক তৈরি করে। এই দূষকগুলি, বিশেষত যেখানে বায়ু চলাচল ঠিক নেই, বা কারুর হাঁপানির সমস্যা রয়েছে তাদের ফুসফুসে সমস্যা তৈরী করতে পারে এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যায় তা আরও জটিল হয়ে পড়তে পারে।

রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা আর এক উদ্বেগের বিষয়, বিশেষ করে যেসমস্ত মোমবাতি প্যারাফিন ওয়াক্স দিয়ে তৈরী। জ্বলতে থাকার সময় প্যারাফিন ওয়াক্স থেকে টলুইন বা বেনজিনের মত রাসায়নিক বের হয় যা থেকে শ্বাসপ্রশ্বাসের রোগ, ক্যানসার বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও, তাপের জন্য মোমবাতি জ্বালানো থেকে বাতাস শুষ্ক হয়ে গিয়ে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হতে পারে। দুর্বল মানুষজনদের জন্য, যেমন বৃদ্ধ বা শিশুদের জন্য এটি যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ।

ডালিম কী জয়েন্ট বা হাড়ের সন্ধির ব্যথা কমাতে পারে?

সারমর্ম

একটি ফেসবুক পোষ্টে দাবী করা হয়েছে যে ডালিম খেলে হাড়ের সন্ধির ব্যথায় উপকার পাওয়া যায়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অর্ধেকটা ঠিক।

Fact Check Rating

দাবি

ডালিমের গুন নিয়ে অনেক ধরনের গুজব ছড়িয়ে আছে নানা ওয়েবসাইট এ । টার মধ্যেই একটি গুজব হল ডালিম খেলে পা বা জয়েন্টের ব্যথা কমে। তেমন একটি পোস্ট এইখানে দেখতে পাওয়া যাবে ।

সত্যানুন্ধান

হাড়ের সন্ধি বা জয়েন্ট দু জায়গাতেই কী কী কারণে ব্যথা হয়?

পা বা জয়েন্টের ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন গুরুতর কোন শারীরিক রোগ অবস্থা যেমন এডিমা বা শোথ, লিম্ফেডেমা, গভীর শিরা থ্রম্বোসিস, বা সিস্টেমিক রোগ যা হার্ট, কিডনি বা লিভারকে প্রভাবিত করে। একইভাবে, হাঁটুর ব্যথা একাধিক কারণের জন্য দায়ী, আঘাত লাগা থেকে শুরু করে, যেমন লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া বা তরুণাস্থির ক্ষতি, আর্থারাইটিস বা বাত, গেঁটেবাত বা সংক্রমণের মতো আরও গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির জন্য হতে পারে।

ডালিম কী হাড়ের সন্ধির ব্যথা কমাতে পারে?

কিছুটা পারে। ২০২০ সালের একটি গবেষণায় ডালিমের বিভিন্ন রূপ (নির্যাস, রস ইত্যাদি) এবং ডালিমের বিভিন্ন অংশ যেমন খোসা, বীজ এবং অ্যার্লাজিক অ্যাসিড নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল। পরীক্ষার ফলে দেখা যায় ডালিম ব্যথা উপশম করতে পারে। গবেষকরা কম্পাউন্ড বা যৌগ বের করতে মিথানল ও ইথানল নামক সল্ভেন্ট বা দ্রাবক ব্যবহার করেছিলেন। ডোজ ১০ থেকে ৩০০০মিলিগ্রাম/কেজি পর্যন্ত, ১০০ মিলিগ্রাম/কেজি সবচেয়ে কার্যকর। ডালিমের নির্যাস প্রায়শই ব্যথা কমানোর সাধারণ ওষুধের কাজ করার ক্ষমতার সঙ্গে মিলে যায়। উল্লেখযোগ্যভাবে, ডালিমের খোসা, প্রায়শই যা বর্জ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তা সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যথা উপশমের কাজ করে। বিভিন্ন ধরণের খোসার বিভিন্ন রকমের প্রভাব নজরে আসে। মোটের ওপর ডালিমের যৌগগুলির মিশ্রণ ব্যথা উপশমের প্রভাব তৈরী করে। কিন্তু পা ব্যথা কমাতে সরাসরি ডালিমের ব্যবহারের উপকারের বিষয়টি নিয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন।

২০১৯ এর গবেষণায় এই সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়েছে যে ডালিম রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (আরএ) ইনফ্ল্যামেশন কমাতে উল্লেখযোগ্য ভাবে কাজ করে। তাই, এটি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (আরএ) এর মতো ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহজনিত রোগগুলির উপশমের জন্য একটি সম্ভাব্য প্রতিকার হিসাবে কাজ করতে পারে যার লক্ষণগুলির একটি অংশ হল হাড়ের সন্ধি বা জয়েন্ট/পায়ে ব্যথা।

ডায়েট কী জয়েন্টে ব্যথা কমাতে পারে?

আর্থ্রাইটিস ফাউন্ডেশন অনুযায়ী, আর্থ্রাইটিস সারানোর জন্য কোন ম্যাজিক ডায়েট না থাকলেও, মরিঙ্গার মতো অসংখ্য খাবার ইনফ্ল্যামেশনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং জয়েন্ট/পায়ের ব্যথা এবং এর থেকে হওয়া উপসর্গ থেকে যাতে আরাম বেশি করে পাওয়া যায় সেই সাহায্য করতে পারে।

Orthopeadic

অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ সারাংশ গুপ্তা বলেছেন, “বর্তমান চিকিৎসা পদ্ধতি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে ইনফ্লামেশন কমানোর ওপর জোর দেয়। প্রকাশিত গবেষণাগুলি থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে ডালিম ফলে প্রচুর পরিমাণে বায়োঅ্যাকটিভ কম্পাউন্ড রয়েছে, যেমন পলিফেনল, অ্যান্থোসায়ানিন, ফ্ল্যাভোনয়েড, ট্যানিন, পুনিনিক অ্যাসিড এবং আরও অনেক কিছু। এই কম্পাউন্ডগুলির অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দুধরণের বৈশিষ্ট্যই রয়েছে, যা রোগের এবং ইনফ্ল্যামেশন চিহ্নিতকারীর প্রভাব কম করতে সাহায্য করে। গবেষণার ফলাফলে জানা গেছে যে ডালিম ফলের নির্যাস (পিএফই) মানুষের তরুণাস্থি বা কার্টিলেজকে ঠিক রাখতে উল্লেখযোগ্যভাবে কাজ করে এবং মানুষের কার্টিলেজের কোষগুলিতে কোনরকম বিষক্রিয়ার প্রভাব ফেলে না।

dietitian

নিউট্রিশানিষ্ট প্রিয়াঙ্কা জানিয়েছেন, “জয়েন্টের ব্যথা একরকম ইনফ্ল্যামেটারি বা প্রদাহজনিত অবস্থা, এবং আর্থ্রাইটিস উপশমে ডালিমের কিছু উপকারিতা থাকলেও, এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে আর্থ্রাইটিস হল এমন একটি অসুখ যার জন্য বিভিন্ন কারণ দায়ী। সঠিক পরিমাণ ঠিক করার জন্য বয়স, লিঙ্গ, স্থূলতা এবং জয়েন্টে আগে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন আঘাতের  মতো ঝুঁকির কারণগুলিকে মাথায় রাখা দরকার। জয়েন্টে ব্যথা কমানো এবং এই সমস্যা সমাধানের সময় বিশেষত আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে, এই সমস্ত কারণগুলিকে মাথায় রাখা জরুরি।“

গ্রীণ টি কী ডিপ্রেশন প্রতিহত করতে পারে?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে গ্রীণ টি খেলে ডিপ্রেশন আটকানো যায়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল।

Rating

দাবি

সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে গ্রীণ টি খাওয়ার সম্ভাব্য স্বাস্থ্য উপকারিতা তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। একটি পয়েন্টে, দাবি করা হয়েছে যে গ্রীণ টি খেলে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । এরকম একটি পোস্ট এখানে দেখা যাবে ।

সত্যানুন্ধান

গ্রীণ টি বা সবুজ চা কী?

গ্রীণ টি সারা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয় ও এটি ঠান্ডা বা গরম দুভাবেই খাওয়া হয়। এটি ক্যামেলিয়া সিনেনসিস গাছের পাতা থেকে তৈরি করা হয়। এই গাছটি থেকে কালো চা, ওলং চা এবং সাদা চা-ও পাওয়া যায়। তবে, অন্যান্য চায়ের সঙ্গে গ্রীণ টি র পার্থক্য হল এটি যখন তৈরী করা হয় এতে সবচেয়ে কম পরিমাণ অক্সিডেশন পদ্ধতির প্রয়োগ হয়। গ্রীণ টি সবচেয়ে কম পরিমাণ অক্সিডেশন পদ্ধতির প্রয়োগে তৈরী হয়। এর ফলে এই চায়ে স্বাভাবিক অ্যান্টিওক্সিডেন্ট ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে সাহায্য করে।

গ্রীণ টি খেলে কী কোন স্বাস্থ্যকরী উপকার পাওয়া যায়?

হয়ত পাওয়া যায়। গ্রীণ টি থেকে স্বাস্থ্যসম্মত উপকার পাওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিওক্সিডেন্ট তৈরী যা হার্ট ভালো রাখতে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও গ্রীণ টি ব্রেণের কাজ ভালো করতে সাহায্য করে, ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়, দাঁত ভালো রাখে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। কিন্তু এগুলি কম পরিমাণে খেলে তবেই সম্ভব কারণ এতে রয়েছে ক্যাফিনের কিছু উপাদান এবং ব্যক্তিবিশেষে তা পরিবর্তিত হতে পারে।

ব্রেণের স্বাস্থ্যের ওপর গ্রীণ টির প্রভাব সম্পর্কে প্রমাণ কী বলে?

বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ, বিশেষ করে ক্যাটেচিন এবং ক্যাফিনের উপাদানের জন্য গ্রিন টি ব্রেনের স্বাস্থ্যের ভালো রাখার বিষয়টির ওপর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমরা কয়েকটি গবেষণা পত্র সংগ্রহ করেছি যেখানে ব্রেনের স্বাস্থ্যের উপর গ্রীণ টির প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদানঃ গ্রীণ টি-তে রয়েছে অনেক বেশী মাত্রায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, বিশেষ করে ক্যাটেচিন যা এপিগ্যালোক্যাটেচিন গ্যালাট (ইজিসিজি) নামে পরিচিত। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ব্রেনের কোষগুলিকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে, যা বার্ধক্য এবং অ্যালজাইমার ও পারকিনসনের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের সাথে যুক্ত।

নিউরোপ্রোটেকশনঃ গ্রীণ টি-র ক্যাটেচিনে নিউরোপ্রোটেক্টিভ প্রভাব থাকতে পারে, এর ফলে নিউরোডিজেনারেটিভ রোগগুলির ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং কগনিটিভ বা জ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত কাজকর্ম উন্নত করে। যদিও, মানুষের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে ভালো ভাবে জানতে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে।

কগনিটিভ ফাংশন উন্নত করাঃ নিয়মিত গ্রীণ টি খাওয়া কগনিটিভ ফাংশনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, এই কাজকর্ম উন্নত হওয়া এবং তা কমে আসার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, ফলাফলগুলি নিয়ে দন্দ্ব রয়েছে, এবং এর একটি কার্যকারণ সম্পর্ক তৈরীর জন্য আরও জোরালো ক্লিনিকাল গবেষণার প্রয়োজন।

মুড বুষ্টিং বা মন ভালো করা ও মেন্টাল অ্যালার্টনেস বা মানসিকভাবে সচেতন থাকাঃ গ্রীণ টির মধ্যে থাকা ক্যাফিনের উপাদান মন ভালো করতে পারে সেইসঙ্গে মানসিকভাবে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, এর থেকে কগনিটিভ পারফরমেন্স বাড়ে ও ডিপ্রেসশনের ঝুঁকি কমে গিয়ে তা পরোক্ষ ভাবে ব্রেন ভালো রাখে।

নিউরোজেনেসিসে সম্ভাব্য ভূমিকা পালনঃ গ্রীণ টি-র ক্যাটেচিন নিউরোজেনেসিসকে বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্রেনের নতুন নিউরোন তৈরী হয়। এর থেকে কগনিটিভ ফাংশন ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

মোটের ওপর কয়েকটি প্রমাণ আছে যেখানে দেখা গেছে গ্রীণ টি ব্রেনের ওপর কিছু প্রভাব ফেলছে। তবে,আমাদের ব্রেনে গ্রীণ টি খাওয়ার প্রভাব এবং উপকারিতা পুরোপুরিভাবে বোঝার জন্য আরও অনেক মানুষের মধ্যে এলোমেলোভাবে নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা বা র‍্যানডামাইজড কনট্রোল্ড ট্রায়াল সহ আর উঁচু-মানের গবেষণা প্রয়োজন। এছাড়াও, জেনেটিক্স, সামগ্রিক খাদ্যাভ্যাস বা ডায়েট এবং জীবনযাত্রার অভ্যাস বা লাইফস্টাইলের মতো কারণের উপর ভিত্তি করে গ্রীণ টি খাওয়ার প্রভাব ব্যক্তিবিশেষে পরিবর্তিত হতে পারে।

গ্রীণ টি খেলে কী ডিপেশন প্রতিহত করা যায়?

ঠিক তা নয়। গ্রীণ টি যে ডিপ্রেশন আটকাতে পারে তার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ নেই। অল্প পরিমাণে যেসব প্রমাণ রয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে গ্রীণ টি ডিপ্রেসিভ মুড বা মনখারাপের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে। ২০২৩ এ প্রকাশিত অন্য একটি গবেষণায় জানানো হয়েছে অনেক দিন ধরে গ্রীণ টি খেলে মহিলাদের মেনোপজের পরে ডিপ্রেশনের ঝুঁকি কমাতে পারে।

আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে গ্রীণ টি-তে এল-থেনাইন এর মতো যৌগ রয়েছে, এটি একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা মন শান্ত রাখতে সাহায্য করে বলে পরিচিত এবং ক্যাটেচিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যার নিউরোপ্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। এই যৌগগুলি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কিছু ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যার মধ্যে স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি অর্থাৎ মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমানো একটি।

তবে, এটা মনে রাখা দরকার যে কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে ঠিকই যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো হওয়ার সঙ্গে গ্রীণ টি খাওয়ার যোগ রয়েছে কিন্তু এই প্রমাণগুলি চূড়ান্ত নয়। গ্রীণ টি এবং ডিপ্রেসশনের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে বের করার জন্য গবেষণা এখনো চলছে এবং এর সাথে জড়িত সমস্তরকম সুবিধা এবং প্রক্রিয়াগুলি পুরোপুরি বোঝার জন্য আমাদের আরও গবেষণার প্রয়োজন। যাই হোক না কেন, একটি সুষম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারার অংশ হিসাবে গ্রিন টি খাওয়ার বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উপকারিতা থাকতে পারে, তবে এটিকে ডিপ্রেশনের জন্য একটি স্বতন্ত্র চিকিৎসা হিসাবে দেখা উচিত নয়। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত একজন ব্যক্তির কাছ থেকে পেশাদার সাহায্য নেওয়া অত্যাবশ্যক, যিনি উপযুক্ত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা সম্পর্কে পরামর্শ দিতে পারবেন।

কনসালটেন্ট সাইকোলজিষ্ট ডাঃ রাহুল বনসল থিপ-কে দেওয়া একটি সাক্ষাতকারে বলেছেন, “চিকিৎসায় যে কোনো ধরনের বিলম্ব এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাবে”।

শুধুমাত্র গ্রিন টি পান করলে ডিপ্রেশন প্রতিরোধ করা যায় এই ধারণাটি একটি জটিল অবস্থার অতি সরলীকরণ, এবং ডিপ্রেসনের চিকিৎসার জন্য একটি সামগ্রিক ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক।

Dr Binda Singh

সাইকিয়াটিষ্ট ডাঃ বিন্দা সিং জানিয়েছেন, “ডিপ্রেশন হচ্ছে একটি অসুখ এবং এর সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন। এটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন পরিস্থিতিগত বা সিচুয়েশনাল, ট্রমা, শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা ইত্যাদি। ডিপ্রেশনের মোকাবিলায় প্রয়োজন হস্তক্ষেপ, যার মধ্যে রয়েছে ওষুধ, পরামর্শ, ইতিবাচক চিন্তা, কথা বলা ইত্যাদি।

Dr Sameer Kalani

দুর্ভাগ্যবশত, ডিপ্রেসশনের জন্য খাদ্যতালিকাগত প্রতিকারের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।“ অভিজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ সমীর কালানি থিপ মিডিয়া-কে দেওয়া একটি সাক্ষাতকারে বলেছেন ঘরোয়া প্রতিকারগুলি ডিপেশনের মূল কারণকে সরিয়ে ফেলতে পারে না।

রসুন কী উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পারে?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে যে রসুন খেলে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার কমে যায়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবীর অর্ধেকটা ঠিক।

Fact Check Rating

দাবি

সোশ্যাল মিডিয়াতে ভ্রান্তিকর পোস্ট অনেক ছড়িয়ে আছে যেখানে বলা হয়েছে যে রসুন খেলে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার কমে যায়। এইরকম একটি পোস্ট এইখানে দেখা যাবে।

সত্যানুন্ধান

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার কী?

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার-কে হাইপার টেনশনও বলা হয়। এটা এমন এক অবস্থা যখন আর্টারির বা ধমনীর দেয়ালের গায়ে রক্তের বেগ ক্রমাগত খুব বেশী মাত্রায় চাপ দেয়, যা পারদের মিলিমিটারে (mmHg) মাপা হয়। স্বাভাবিক ব্লাড প্রেসার মোটামুটি ১২০/৮০ mmHg থাকে, কিন্তু হাইপারটেনশনের রিডিং ধারাবাহিকভাবে ১৩০/৮০ mmHg -এর বেশী থাকে। হার্টের অসুখ, স্ট্রোক এবং কিডনির অসুখে এটা খুব বড় ঝুঁকি বা রিস্ক ফ্যাকটর বলে মনে করা হয়। লাইফস্টাইলের পরিবর্তন ও ওষুধের মাধ্যমে এই সমস্যার সাধারণভাবে মোকাবিলা করা হয়। নিয়মিত নজর করা বা মনিটরিং ও প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবস্থা নেওয়া এক্ষেত্রে জরুরি।

উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা কী?

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে লাইফস্টাইলের পরিবর্তন আর অবশ্যই ওষুধের প্রয়োজন। লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, মদ বা অ্যালকোহলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ এবং ধূমপান ছেড়ে দেওয়া। ওষুধের মধ্যে ডায়ুরেটিক্স, বিটা-ব্লকার ও অন্যান্য ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। সারা জীবন ধরে কার্যকরভাবে এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং পরিকল্পনা মাফিক চিকিৎসার ধারাবাহিকতা প্রয়োজন।

ডায়েট কী হাই ব্লাড প্রেসার কমাতে পারে?

কিছুটা পারে। যদিও শুধুমাত্র কোন একটি বিশেষ খাবার উচ্চ রক্তচাপ সারাতে পারে না, তবে এটি উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা কমাতে ও এই অবস্থার মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে খাবারের ওপরই শুধুমাত্র নির্ভর করা উচিৎ নয় এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রকৃত উৎস কী তা জানা জরুরি।

উদাহরণ হিসেবে, যখন আলোচনা চলছিল যে রক সল্ট বা সৈন্ধব লবণ উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পারে কিনা, সেই প্রসঙ্গে ডায়েটেশিয়ান কামনা চৌহান জানান, “অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরে জলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এর থেকে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় ও তার ফলে হার্টে আরো চাপ তৈরী হয়। দিনে ৬গ্রাম করে সোডিয়াম গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের জন্য এই পরিমাণ ৩.৭৫গ্রাম। সাধারণ টেবিল নুনের থেকে সৈন্ধব লবণে অ্যাডিটিভ কম থাকে বলে একে স্বাস্থ্যকর বিকল্প বলা যেতে পারে। তবুও, সর্বাধিক পরিমাণে এর গুণ পেতে হলে এটিও পরিমিত পরিমাণেই খাওয়া উচিৎ।“

মোটের ওপর, হার্ট ভালো রাখার উপযোগী স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে কার্ডিওভাসকুলার কাজকর্ম ভালো হয় ও হাইপারটেনশনও নিয়ন্ত্রণে থাকে। উচ্চ রক্তচাপ বন্ধ করার জন্য ডায়েটারি অ্যাপ্রোচ (ড্যাশ) ডায়েট প্রায়ই উচ্চ রক্তচাপযুক্ত ব্যক্তিদেরকে পরামর্শ করা হয়।

এই ধরণের ডায়েট উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ফল খাওয়া, শাকসবজি, গোটা শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কম করা। সেইসঙ্গে, লাইফস্টাইলের পরিবর্তন এর মধ্যে রয়েছে ব্যায়াম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণও যথেষ্ট জরুরি। এছাড়াও এটা মনে রাখা দরকার ব্যক্তিবিশেষে এই জিনিসগুলোর প্রভাব পরিবর্তিত হয়, এবং একটি সামগ্রিক চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রয়োজন যার মধ্যে রয়েছে ওষুধপত্র। তাই, স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হল এসমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য বিশেষ জরুরি।

রসুনের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত উপকারিতাগুলি কী কী?

রসুন খেলে বেশ কিছু স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপকারিতা পাওয়া যায়।

নিচে এর কিছু কিছু বলা হয়েছে।

  • হার্ট-এর স্বাস্থ্যঃ রসুন ব্লাড প্রেসার ও কোলেস্টরেলের মাত্রা কমাতে পারে।
  • রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাঃ এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদানগুলির জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি হতে পারে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের প্রভাবঃ রসুনে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ রয়েছে যা ফ্রি র‍্যাডিক্যালসকে মেরে ফেলতে পারে।
  • অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারিঃ এটি শরীরে ইনফ্ল্যামেশন কমাতে পারে, যেমন আর্থাইটিস এর সমস্যায় কাজ করতে পারে।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালঃ রসুনে রয়েছে স্বাভাবিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য, যা ইনফেকশন বা সংক্রমণ রোধ করে।

রসুন, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার স্থানীয় একটি ফসল, এর হাজার হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। মিশরীয়, ভারতীয়, ব্যাবিলনীয় এবং চীনাদের মতো প্রাচীন সংস্কৃতিতে এর ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে, এটি প্রাচীনতম পরিচিত ঔষধি এবং সুগন্ধি ফসলের মধ্যে একটি বলে পরিচিত। এমনকি প্রাচীন গ্রীসে অলিম্পিক খেলোয়াড়দেরও রসুন দেওয়া হত” ।

রসুন খেলে কী উচ্চ রক্তচাপ কমে?

হয়তো। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে রসুনের সামান্য প্রভাব রয়েছে বলে কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। রসুনে অ্যালিসিন রয়েছে, এটি একটি যৌগ যার স্বাস্থ্য ভালো রাখার বিভিন্নগুণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে রক্তচাপ কমানোর সম্ভাব্য প্রভাব। কিন্তু, অল্পই কিছু প্রমাণ রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে রসুন খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে।

আমাদের অন্য একটি ফ্যাক্ট চেকের ঘটনায়, ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডাঃ প্রিয়জিৎ পানিগ্রাহি, এমবিবিএস, ডিএনবি, এবং এমএনএএমএস জানিয়েছেন যে রসুনে অ্যালিসিন এবং অ্যালাইনের মতো বায়োঅ্যাকটিভ উপাদান রয়েছে, যার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, কার্ডিওভাসকুলার রক্ষাকারী প্রভাব এবং আরও অনেক কিছু রয়েছে, যার মধ্যে অ্যান্টিক্যানসার এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, কিছু গবেষণায় খুব কম সাইড এফেক্ট থাকা রসুনের কার্যকারিতাকে সাধারণ ব্লাড প্রেসার কমানোর ওষুধের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণায় লক্ষ্য করা গেছে যে রসুনের পরিপূরক বা সাপ্লিমেন্টগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ কমাতে পারে।

এটি লক্ষণীয় যে রসুনের রক্তচাপ-কমানোর প্রভাবগুলি সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য বলে মনে হয়, তবে তা রক্তচাপ ঠিক থাকা মানুষদের থেকে, উচ্চ রক্তচাপ আছে এমন মানুষদের মধ্যে বেশি কাজ করে।

এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে রসুন আপনার খাদ্যতালিকা বা ডায়েটে একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে, তবে তা চিকিৎসার বিকল্প কিন্তু নয়। যদি আপনার উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে সঠিক পরামর্শ ও সাহায্যের জন্য স্বাস্থ্যপরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি। তারা আপনাকে, আপনার উপযোগী খাবার, ব্যায়াম এবং ওষুধের ব্যাপারে পরামর্শ দেবেন।

উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করতে হলে, আপনাকে রান্নায় যতটা পরিমাণ ব্যবহার করা হয় তার থেকে বেশ কিছুটা বেশি পরিমাণে রসুন খেতে হবে। নির্দ্দিষ্ট ওষুধের বিকল্প হিসাবে রসুনকে বিবেচনা করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা জরুরি, কারণ এই ব্যবস্থা ক্ষতিকারক হতে পারে। আপনার স্বাস্থ্য পরিকল্পনার মধ্যে রসুনের অন্তর্ভুক্তি একটি বৃহত্তর পদ্ধতির অংশ হওয়া উচিত, যার মধ্যে থাকবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা বা ডায়েট, ব্যায়াম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের মতো লাইফস্টাইল পরিবর্তন, যার মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়।

General Physician Dr Kahsyap Dakshini

জেনারেল ফিজিশিয়ান ডাঃ কাশ্যপ দক্ষিনী জানিয়েছেন, “নির্ভরযোগ্য মেডিকেল জার্নালে এমন তথ্য রয়েছে যা প্রমাণ করে যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য রসুন উপকারী। তবুও, হাই ব্লাড প্রেসার হলো একটি মেডিকেল অবস্থা যার জন্য একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা প্রয়োজন।“ব্যক্তি বিশেষে রসুন খেলে বিভিন্ন রকম সাইড এফেক্ট হতে পারে। সাধারণ সাইড এফেক্টের মধ্যে রয়েছে নিঃশ্বাস ও শরীরে দুর্গন্ধ, বুকজ্বালা এবং পেট খারাপ। কাঁচা রসুন এই সাইড এফেক্টের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। কিছু মানুষের এর থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। রসুনের সাপ্লিমেন্টগুলি রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে, বিশেষ করে যখন ওয়ারফারিনের মতো অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট ওষুধ চলাকালীন তা খাওয়া হয়। আপনি যদি রসুনের সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার পরিকল্পনা করেন, বিশেষ করে অস্ত্রোপচারের আগে বা আপনার যদি অ্যান্টিকোয়গুল্যান্ট ওষুধ চলাকালীন তা হয় তবে আপনার স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে বিষয়টি জানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রসুনের সাপ্লিমেন্টগুলি নির্দিষ্ট ওষুধের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যেমন এইচআইভি চিকিৎসায় ব্যবহৃত সাকুইনভির ওষুধের ব্যবহার চলাকালীন। এছাড়াও, অন্যান্য ভেষজ খাদ্য বা ডায়েটারি হার্ব এবং সাপ্লিমেন্টের সংযোগ হতে পারে ঠিকই, কিন্তু আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও ওষুধের পদ্ধতির সাথে এর সামঞ্জস্য তৈরীর জন্য আপনার স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

বিশেষ কিছু হাতের ব্যায়াম কী স্তন ক্যানসার প্রতিহত করতে পারে?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিওতে দাবী করা হয়েছে বিশেষ কিছু হাতের ব্যায়াম স্তন ক্যানসার প্রতিহত করতে পারে। মোটের ওপর, এই ভিডিওতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিশেষ এক প্রকার যোগব্যায়াম করলে মহিলারা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া থেকে দূরে থাকতে পারেন। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল।

Rating

দাবি

সোশ্যাল মিডিয়া এবং হেলথ ব্লগে ক্যান্সার  চিকিৎসা সংক্রান্ত অনেক দাবি করা হয়ে থাকে । বিভিন্ন পোস্টে বিভিন্ন ধরণের কথা উল্লেখ করা হয়ে থাকে । এরকম একটি পোস্ট এখানে দেখা যাবে ।

সত্যানুন্ধান

স্তন ক্যানসার কী?

স্তন ক্যানসার বা ব্রেস্ট ক্যানসার হল এক ধরনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমার যার সুত্র হল স্তনের সেল বা কোষ। যখন স্তনের অস্বাভাবিক কোষগুলি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে, এর ফলে লাম্প বা মাস অথবা মাংসপিন্ড তৈরী হয়, তখন এর সূত্রপাত হয়। এটি আশেপাশের ট্যিসু গুলিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এটা যদি দ্রুত সনাক্ত বা তারপর চিকিৎসা না করা হয় তবে শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, যাকে মেটাস্টাইজ বলে। পরীক্ষা করে দ্রুত সনাক্তকরণ এবং সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া এর চিকিৎসা সফল করতে সবচেয়ে জরুরী বিষয়।

স্তন ক্যানসার কী সেরে যায়?

ঠিক তা নয়। স্তন ক্যানসারকে সাধারণত নিরাময়যোগ্য নয় বলে মনে করা হয়, কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা গেলে তা বেঁচে থাকার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলে একে চিকিৎসা যোগ্য করে তোলে। আমেরিকার ক্যানসার সোসাইটি ওয়েবসাইট অনুযায়ী, যেসব মহিলাদের সনাক্তকরণ প্রাথমিক পর্যায়ে হয় তাদের রোগ ধরা পড়ার পর অন্ততপক্ষে ৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার বেশী মাত্রায় সম্ভাবনা থাকে, এক্ষেত্রে যাদের ক্যানসার নেই তাদের সাথে ৯০ শতাংশ মিল রয়েছে। তবে, স্তন ক্যানসার বাড়তে থাকলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও কমতে থাকে। অনেক বেশী মাত্রায় সচেতনতা, উন্নত ধরণের পরীক্ষা পদ্ধতি এবং সুনির্দিষ্ট থেরাপির ফলে এর চিকিৎসার সফলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। যে সমস্ত গবেষণা চলছে সেখানে স্তন ক্যানসারের ঘটনা বেড়ে চলার মোকাবিলায় প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণ এবং ইমিউনোথেরাপির ওপর জোর দেওয়া হয়, রোগটির মোকাবিলা করা ও বেড়ে চলার বিষয়টির দিকে নজর দেওয়া হয়।

কিছু হাতের ব্যায়াম কী স্তন ক্যানসার আটকাতে পারে?

ঠিক তা নয়। ব্যায়াম থেকে স্তন ক্যানসার আটকানো যায় এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। কিন্তু এরকম প্রমাণ আছে যেখানে দেখা গেছে নিয়মিত শরীরচর্চার সঙ্গে এধরণের রোগে কম আক্রান্ত হওয়ার মধ্যে একটি যোগ রয়েছে। প্রিমেনোপজাল বা যাদের মাসিক বন্ধ হয়নি ও পোষ্টমেনোপজাল বা যাদের মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে দুধরণের মহিলাদের ক্ষেত্রেই এর সুফল দেখা গেছে। এখানে মূল পয়েন্টগুলিকে আলাদা করে বলা হয়েছেঃ

  • ঝুঁকির সম্ভাবনা কমে যাওয়াঃ প্রমাণ পাওয়া গেছে যেসমস্ত মহিলারা নিয়মিত শরীর চর্চা করেন না তাদের থেকে যারা নিয়মিত শরীর চর্চা করেন সেইসব মহিলাদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১০-২০% কম।
  • সংগঠনে থাকার গুরুত্বঃ সারা জীবন ধরে বা মেনোপজের পর যারা বিনোদনমূলক কাজকর্ম এবং মাঝারী থেকে ভারী মাত্রায় শরীরচর্চার সঙ্গে যুক্ত থাকেন তারা উপকৃত হন।
  • সম্ভাব্য কিছু প্রক্রিয়াঃ সঠিক প্রক্রিয়াটি নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে, কিন্তু গবেষকরা মনে করছেন স্তন ক্যানসারের ঝুঁকির বেশ কিছু কারণ যেমন ওজন নিয়ন্ত্রণ, হরমোনের ভারসাম্য, ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ রোধে শরীরচর্চার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
  • সীমাবদ্ধতাঃ এটা মনে রাখা দরকার যে ব্যায়াম হচ্ছে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি রোধের অন্যতম একটি উপায় মাত্র। জেনেটিক্স, পরিবারের ইতিহাস এবং অন্যান্য জীবনধারা পালনেরও এতে ভূমিকা রয়েছে।

যদিও প্রতিদিনের শরীরচর্চা স্তন ক্যানসার রোধে বিশেষ ভূমিকা থাকলেও, ইনস্টাগ্রাম ভিডিও-তে যেমন দেখানো হয়েছে এরকম বিশেষ হাতের ব্যায়াম এক্ষেত্রে কতটা কার্যকরী তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যিনি এটি দাবী করেছেন তিনি খুব জোরালো ভাবে বিশ্বাসযোগ্য কোন প্রমাণ ছাড়াই একথা বলেছেন।

যোগব্যায়াম কী চিকিৎসার সময়, আগে এবং পরে স্তন ক্যানসারকে সারাতে বা বিলম্বিত করতে পারে?

না ঠিক তা নয়। যোগব্যায়াম স্তন ক্যানসার সারাতে পারেনা তবে এর কিছু লক্ষণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, চিকিৎসার সময় জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে, চিকিৎসার আগে শারীরিক প্রস্তুতিতে সাহায্য করতে এবং চিকিৎসার পরে সুস্থ থাকতে সাহায্য করতে পারে। যদিও এই রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধের জন্য প্রমাণগুলি যথেষ্ট নয়, কিন্তু যোগব্যায়াম সহ একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ সামগ্রিক সুস্থতায় কার্যকরী হতে পারে।

যাদের স্তন ক্যানসার আছে তাদের ক্ষেত্রে যোগব্যায়াম কীভাবে উপকার করতে পারে?

যোগব্যায়াম করলে চিকিৎসার সময় এবং পরে দুক্ষেত্রেই স্তন ক্যানসারে আক্রান্তরা বিভিন্নভাবে উপকার পেয়ে থাকেন। এ থেকে তারা শারীরিক, মানসিক ও ইমোশনাল সাহায্য পানঃ

১। শারীরিকভাবে ভালো থাকাঃ যোগব্যায়াম নমনীয়তা, শক্তি ও ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। হালকা যোগব্যায়াম মাসল বা পেশীর শক্তভাব যা স্তন ক্যানসারের চিকিৎসার সাধারণ সাইড এফেক্ট বলে চিহ্নিত তা দূর করে সচল রাখতে সাহায্য করে।

২। স্ট্রেস কমানোঃ যোগব্যায়ামে মন দিয়ে শ্বাস নেওয়া এবং ধ্যান করা মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং ডিপ্রেশনের সমস্যা যা প্রায়শই স্তন ক্যানসারের সনাক্তকরণের সাথে যুক্ত হয় তা কমাতে সাহায্য করে।

৩। ঘুম ভালো হওয়াঃ যাদের স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা চলছে বা চিকিৎসার পরে ভালো ঘুম না হওয়ার সমস্যায় যোগব্যায়াম ভালো কাজ দেয় কারণ এতে পেশিগুলি শিথিল হয়ে পড়ে।

স্তন ক্যানসার থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে?

স্তন ক্যানসার থেকে সুরক্ষিত থাকতেঃ

১। পরীক্ষাঃ নিয়মিত ম্যামোগ্রাম ও সেলফ-এক্সাম বা নিজে পরীক্ষা করুন।

২। লাইফস্টাইলঃ ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে সঠিক ওজন বজায় রাখুন।

৩। ডায়েটঃ ফল ও সবজি সমৃদ্ধ সুষম খাবার খান।

৪। শরীরচর্চাঃ সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট কোন শরীরচর্চার সঙ্গে যুক্ত থাকুন।

৫। অ্যালকোহলঃ মদ খাওয়ার পরিমাণ সীমিত রাখুন।

৬। ধূমপান করবেন নাঃ ধূমপান ছেড়ে দিন।

৭। স্তনপানঃ ব্রেস্টফিডিং বা স্তন্যপান করান।

৮। পরিবেশগত সচেতনতাঃ টক্সিনের সংস্পর্শে কম থাকার চেষ্টা করুন। ৯। চেক-আপঃ নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।

মোরাজী দেশাই ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ যোগার সিনিয়র কনসালটেন্ট, হিমানী শোখান্দ বলেছেন, “নিয়মিত যোগব্যায়াম ও শরীরচর্চা সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং স্তন ক্যানসারের ঝুঁকির কারণগুলি কমাতেও সাহায্য করতে পারে। কিন্তু, কোন নির্দিষ্ট যোগব্যায়াম বা শরীরচর্চা নিশ্চিতভাবে স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে না। যোগব্যায়াম সহ, সুষম খাদ্য এবং নিয়মিত পরীক্ষা প্রভৃতির মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মেনে চলাই স্তন ক্যানসার প্রতিরোধের চাবিকাঠি।

Yoga Practitioner

আয়ুষ মন্ত্রকের শংসাপত্র প্রাপ্ত কর্পোরেট যোগ প্রশিক্ষক, ডাঃ আয়ুষ চন্দ্র বলেছেন, “হালকা যোগাভ্যাস খুব কার্যকরী হতে পারে এবং এতে বেশ কিছু ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়, তা হল এতে ক্লান্তি দূর হয় এবং জীবনের সামগ্রিক মানের উন্নতি হয়।“

মোবাইল ফোনের ব্যবহার কী দৃষ্টিশক্তির উপর প্রভাব ফেলে?

সারমর্ম

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিওতে দাবী করা হয়েছে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে চোখের ক্ষতি হয়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবীর অর্ধেকটা ঠিক

Fact Check Rating

দাবি

মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে চোখের ক্ষতি হয়। সোশ্যাল মিডিয়াতে এই ধরণের ভ্রান্তিকর পোস্ট আরো অনেক ছড়িয়ে আছে | এই দাবি নিয়ে একটি পোস্ট এখানে দেখা যাবে |

সত্যানুন্ধান

সেল ফোন থেকে কী চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা হয়?

সেরকমটাই মনে হয়। যে সমস্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে সেল ফোন থেকে চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা তৈরী হচ্ছে। যদিও বাচ্চাদের মোবাইল ফোনের অত্যধিক ব্যবহার সীমিত করা ভাল, তবে ভিডিওটিতে শিশুর নির্দিষ্ট রোগ নির্ণয় এবং চোখে প্যাচ দেওয়ার যে বিষয়টির কথা বলা হয়েছে তার কারণ কি তার জন্য পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায় না। এছাড়া, মোবাইল ফোনে বেশি করে স্ক্রীন টাইম কাটালে যে সরাসরি পেরিফেরল ভিশনের পরিবর্তন হয়, তা ঠিক করার জন্য যে বিশেষ ব্যান্ডেজ লাগে তার কোন প্রমাণ কিন্তু এই দাবীর স্বপক্ষে পাওয়া যায় না।

Dr Aditya Sethi, Ophthalmologist

বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য হরিয়ানার গুরগাঁও-এ অরুণোদয় ডেসেরেট আই হসপিটালের (এডিইএইচ) অপথ্যালমোলজিষ্ট বা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ আদিত্য শেঠির সাথে যোগাযোগ করেছি। তিনি জানান, “মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহারের বৃদ্ধি এবং শিশুদের মধ্যে খুব বেশি মাত্রায় ইসোট্রপিয়ার বেড়ে যাওয়ার মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক রয়েছে। অনেকসময় ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে চোখের স্ট্রেন, ক্লান্তি এবং ফোকাসের পরিবর্তনের কারণ হতে পারে, যা চোখের অ্যালাইনমেন্টকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া, ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখানো ব্যান্ডেজটির কারণ কী, এর পেছনে অতিরিক্ত বিষয়গুলি কী কী তা না জানলে পুরোপুরি বোঝা সম্ভব নয়। এই ধরণের বিষয়বস্তুকে নজরে রাখতে হলে সতর্কতার দিকটি ভেবে দেখতে হবে এবং এর জন্য বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দরকার। আমার মনে হয়, চোখের ফিউশন ভাঙতে ও অ্যালাইনমেন্ট ঠিক করতে ব্যান্ডেজটি কোন চিকিৎসা পরিকল্পনার একটি অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তবুও, এটি সঠিকভাবে বোঝার জন্য যোগ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞের সামগ্রিক মূল্যায়ন প্রয়োজন। যে চিকিৎসা এখানে দেখানো হয়েছে এই ভিডিওটি এককভাবে তার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করতে অক্ষম। এটি এখনও চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রমাণিত পদ্ধতি নয় এবং এখনো এর সাফল্যের হার নথিভুক্ত করা নেই। এটি ফিউশন ভেঙে ফেলা বা বিশ্রাম দেওয়ার ব্যবহারিক পদ্ধতি হতে পারে। এধরনের সমস্যায় ওষুধের ব্যবহার ও অস্ত্রোপচারের মত চিকিৎসার কথা বলা হয়ে থাকে। তবুও বলব, এধরনের চিকিৎসার সাহায্য নেওয়ার আগে একজন যোগ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞকে দিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করানো ও সঠিক রোগ নির্ণয়ের বিশেষ প্রয়োজন। শিশুটির প্রয়োজন অনুসারে পেশাদারী পরামর্শের মাধ্যমে সমস্যার অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে বের করা এবং পাশাপাশি যথাযথ ও কার্যকরী চিকিৎসার পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।“

এছাড়াও, বিষয়টি আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য আমরা ডেয়লি ওয়াটান নিউজের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং ওদের কাছ থেকে কোন জবাব পেলেই আমরা বিষয়টি জানাবো।

কীভাবে সেলফোন চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা তৈরী করতে পারে?

বর্তমানে যে সমস্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে বলা হয়েছে দীর্ঘ সময়ের জন্য মোবাইল ফোনের ব্যবহার দৃষ্টিশক্তির ওপর বিভিন্ন ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে ডিজিটাল আই স্ট্রেন বা কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম হতে পারে। এটা হয় যখন আপনি কম্পিউটার, ফোন বা ট্যাবলেটের মতো স্ক্রিনের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকেন, তখন আপনার চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং অস্বস্তি বোধ হয়। এতে চোখের স্ট্রেন, মাথাব্যথা, ঝাপসা দৃষ্টি এবং শুষ্ক চোখ বা ড্রাই আইজের মতো সমস্যা তৈরী হতে পারে। অনেক সময় ধরে একই জায়গায় বসে থাকা এবং বিরতি না নেওয়া এটিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। মাঝে মাঝে বসে থাকার অবস্থান পরিবর্তন করা, বিরতি নেওয়া এবং চোখ কে বিশ্রাম দিলে এর থেকে উপকার মিলতে পারে।

এছাড়া, মোবাইল ফোন থেকে নীল আলো বেরোয়, যা ঘুমানো ও জেগে ওঠার যে চক্র বা সাইকেল তার ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং এর থেকে আই স্ট্রেন হতে পারে এবং খুব বেশি সংস্পর্শে থাকলে তা থেকে রেটিনার ক্ষতিও হতে পারে।

আমরা এক গবেষণায় আরো দেখেছি যে বাড়তি স্ক্রীন টাইম, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে, এবং মায়োপিয়া (দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হওয়া) বেড়ে যাওয়ার মধ্যে একটি যোগসূত্রের কথা বলা হয়েছে। অন্য আর একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করার সময় মানুষ চোখের পাতা ফেলে কম। এর ফলেও চোখ শুকনো বা ড্রাই আইজ বা চোখ জ্বালা বা চুলকানোর মত সমস্যা হতে পারে। এই জিনিসগুলো ছাড়াও, বেশ কিছু প্রমাণে দেখা গেছে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় চোখের সঙ্গে দূরত্ব ঠিক থাকলে বা কোণ ঠিক না থাকলে, কাঁধে বা ঘাড়ে চাপ পড়তে পারে তা থেকে অস্বস্তি বাড়তে পারে।   

মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে হওয়া চোখের সমস্যা কী আমরা প্রতিহত করতে পারি?

সেইরকমটাই মনে হয়। অত্যধিক মাত্রায় মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ফলে তৈরী হওয়া চোখের দৃষ্টির সমস্যা কিছু অভ্যাসের মাধ্যমে প্রতিহত করা সম্ভব। মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়া ও দীর্ঘক্ষণ স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে থাকা বা অতিরিক্ত স্ক্রীন টাইম কমিয়ে আনা এই অভ্যাসগুলির মধ্যে পড়ে। ২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়, অর্থাৎ ২০ মিনিট অন্তর স্ক্রীন থেকে ২০ ফুট দূরের কিছু জিনিসের দিকে ২০ সেকেন্ড ধরে তাকানোর অভ্যাস, চোখ ভালো রাখতে উল্লেখযোগ্যভাবে উপকার করতে পারে। এছাড়াও, বেশি সময় ধরে স্ক্রীন ব্যবহারের থেকে চোখের দৃষ্টির ক্ষতি ঠিক করতে চরম পন্থাগুলি নেওয়া যেমন ব্যান্ডেজ ব্যবহারের পরিবর্তে চোখের যত্নের জন্য সুঅভ্যাস গড়ে তোলা জরুরী।

চোখ ছাড়াও, সেল ফোন ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি ৪০% বাড়িয়ে দেয় এমন দাবিও আমরা খারিজ করেছি।

সত্যানুন্ধান: পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকায় কী কখনো ক্যানসার হয় না?

সারমর্ম

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিওতে দাবী করা হয়েছে যে পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকায় কোন মানুষের কখনো ক্যানসার হয়নি। এর পেছনে যে কারণ বলা হয়েছে তা হল এখানকার মানুষ অ্যাপ্রিকটের বীজ খান। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল

Rating

দাবি

কটি ভিডিওতে দাবী করা হয়েছে যে পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকায় কোন মানুষের কখনো ক্যানসার হয়নি। সেরকম একটি পোস্ট দেখা যাবে এখানে

সত্যানুন্ধান

পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকার মানুষদের কী কখনো ক্যানসার হয় না?

ঠিক তা নয়। পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকায় কখনো কারুর ক্যানসার হয়নি এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকার মানুষদের দীর্ঘ জীবন ও ভালো স্বাস্থ্য নিয়ে বহু দশক ধরে দাবী করা হচ্ছে। কিন্তু, তাদের যে ক্যানসার হয় না বা তাদের জীবন সুস্বাস্থ্যে ভরা এমন কোন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। যদিও কিছু গবেষণায় হুনজার জনগণের স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ুর বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে, কিন্তু তাদের কখনো ক্যানসার হয়না একথার চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া যায় না। অন্যান্য বিষয়গুলি যেমন তুলনামূলকভাবে ছোট জনসংখ্যা এবং চিকিৎসা পরিষেবার সাহায্য বিশেষ না পাওয়ার জন্য, এই অঞ্চলে ক্যানসার হওয়ার খবর বা রোগ নির্ধারন না হওয়াও এই ধারণার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

হুনজার মানুষদের স্বাস্থ্য বিভিন্ন বইয়ের বিষয়বস্তু হিসেবে উঠে এসেছে এবং দীর্ঘায়ু বৃদ্ধির জন্য তাদের খাদ্যাভ্যাস বিজ্ঞাপনের অংশ হিসেবে সামনে এসেছে। যদিও, এই উপত্যকায় ক্যানসার হয় না বলে গবেষণায় এরকম কিছু পাওয়া যায়নি।

এই দাবীর বিপরীতে বলা যায়, এই প্রকাশিত প্রামাণ্য তথ্যে দেখানো হয়েছে হুনজা উপত্যকায় নিশ্চিত ভাবে মানুষের দেহে ক্যানসার ধরা পড়েছে। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক অধ্যাপক ড. উইলিয়াম জার্ভিসের ১৯৮৬ তে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে ‘ক্যানসার মুক্ত সমাজ’ এর ধারণাকে ভুল বলা হয়েছে এবং কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল হুনজায় ক্যানসার রোগ যে রয়েছে তা নিশ্চিত করেছে।

ক্যানসারের বৃদ্ধি কী থেকে হতে পারে?

ক্যানসার একটি জটিল রোগ যা ভৌগলিক অবস্থান নির্বিশেষে যে কোন ব্যক্তির হতে পারে। তবে এটা ঠিক যে কিছু জনসংখ্যার মধ্যে ক্যানসারের প্রকোপ কম দেখা যায়, কিন্তু এই বিষয়টিকে শুধুমাত্র হুনজা উপত্যকায় বসবাসের জন্য দায়ী করলে তা অতি সরলীকরণ হয়ে যাবে। যে কোনো জনসংখ্যার ক্যান্সারের হার সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য, বড় নমুনার আকার, দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠীর সাথে তুলনা করে যথাযথ বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা প্রয়োজন।

বিভিন্ন রকমের কারণ ক্যানসার হওয়ার জন্য দায়ী, তার মধ্যে রয়েছে জিনগত প্রবণতা, বিশেষ রকমের লাইফস্টাইল (যেমন ধূমপান, ডায়েট এবং শারীরিক কাজকর্ম), কার্সিনোজেনের সংস্পর্শ এবং স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রাথমিক সনাক্তকরণের সুবিধা না থাকা। ক্যানসারের ব্যাপকতা নিয়ে গবেষণা করার সময় এই বহুমুখী দিকগুলি দেখে নেওয়া ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যাপ্রিকট বীজ খেলে কী ক্যানসারকে আটকানো যায়?

ঠিক তা নয়। অ্যাপ্রিকট বীজ খেলে যে ক্যানসার আটকানো যায় তার স্বপক্ষে কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। অ্যাপ্রিকট বীজে অ্যামিগডালিন নামক একটি যৌগের উপাদানের কারণে এটি নজরে এসেছে, যা ভিটামিন বি১৭ নামেও পরিচিত। এই যৌগটি খাওয়ার সময় তা থেকে সায়নাইড নির্গত হয়। বিকল্প চিকিৎসার কিছু প্রবক্তা দাবি করেছেন যে অ্যামিগডালিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন এপ্রিকট বীজ ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে বা ক্যানসারের চিকিৎসায় কাজে লাগতে পারে।

যদিও, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এই দাবীর সমর্থন করে না। অ্যামিগডালিন থেকে বেরোনো সায়ানাইড মানব কোষের জন্য বিষাক্ত হতে পারে এবং এর থেকে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুতর ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এমনকি, ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) একটি সতর্কতা জারি করেছে এর সম্ভাব্য বিষাক্ততার কারণে অ্যাপ্রিকট বীজ বা অ্যামিগডালিন যুক্ত পণ্য খাওয়ার বিরুদ্ধে।

অ্যাপ্রিকট বীজ খাওয়া আসলে ক্ষতিকারক হতে পারে কারণ এতে অ্যামিগডালিন নামক একটি যৌগ থাকে, যা সায়ানাইড বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে। অ্যামিগডালিনের একটি বিশুদ্ধ রূপ লায়েট্রিল, আগে ক্যানসার রোধকারী  চিকিৎসা হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল কিন্তু প্রাণীদের নিয়ে গবেষণায় এটি খুব সামান্য ক্যানসার রোধকারী হিসাবে কাজ করে এরকম দেখা গেছে এবং মানুষের ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলিতে তা কোন কাজে আসেনি। কানসারের চিকিৎসায় অ্যামিগডালিন বা লায়েট্রিলের ব্যবহারের জন্য প্রমাণগুলি যথেষ্ট না এবং তা ধারাবাহিকও নয়। অধিকন্তু, কাঁচা অ্যাপ্রিকটের বীজ খাওয়ার ফলে সায়ানাইড বিষক্রিয়া হতে পারে, এই জন্য বেশ কয়েকটি দেশে এগুলি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ক্যানসার সারানোর দাবি করে এমন অসংখ্য অসঙ্গত তত্ত্ব রয়েছে। আমরা এর আগে রাইফ মেশিনগুলি সম্পূর্ণরূপে ক্যানসার সারিয়ে তুলতে পারে এমন ধারণা খারিজ করে দিয়েছি। তবে, এটা মনে রাখা জরুরী যে ক্যানসার একটি জটিল রোগ। কার্যকরী চিকিৎসার জন্য সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে ক্লিনিকাল ট্রায়াল সহ যথাযথ বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রয়োজন।

রসুন কী চুলের বৃদ্ধি দ্রুত করতে সাহায্য করে?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে রসুনের কোয়া প্রতিদিন স্কাল্পের নির্দিষ্ট এলাকায় লাগালে চুল গজিয়ে ওঠে। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবীর অর্ধেকটা ঠিক

Fact Check Rating

দাবি

সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে বলা হয়েছে রসুনের কোয়া প্রতিদিন স্কাল্পের নির্দিষ্ট এলাকায় লাগালে যাদুকরীভাবে এক সপ্তাহের মধ্যে চুল গজিয়ে ওঠে। এই ধরণের পোস্ট আরো অনেক ছড়িয়ে আছে | এইমত একটি পোস্ট এখানে দেখা যাবে|

সত্যানুন্ধান

চুল পাতলা হয়ে যাওয়া/পড়ে যাওয়ার কারণগুলি কী কী?

অস্বাস্থ্যকর চুলের পরিচর্যা যেমন, খুব বেশি পরিমাণে চুলের সৌন্দর্য্যচর্চা, রুক্ষ জিনিসের সংস্পর্শে আসা এবং গোড়া শক্ত করে চুল বাঁধার কারণে চুল পাতলা হয়ে যেতে পারে। প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব যেমন আয়রন, ফলিক অ্যাসিডের অভাব এবং সেই সঙ্গে মানসিক চাপ চুলের স্বাস্থ্যের ওপরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়াও, চুল পাতলা হয়ে আসার আরো কিছু কারণ আছে যেমন, জিনগত, হরমোনের পরিবর্তন, ওজন কমে যাওয়া, অটোইমিউন রোগ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা, ত্বকের সমস্যা, সংক্রমণ বা ভিটামিন ডি-র অভাব।

রসুন কী চুলের সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে পারে?

হ্যাঁ। ২০২২ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে রসুনের ইমিউন-মডুলেটিং বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা যা একটি অটোইমিউন অবস্থা, এতে চুলের ক্ষতি হয়, এর চিকিৎসায় কার্যকরী হতে পারে। রসুন ও পেঁয়াজ, দুটিই অ্যাসপারাগাস গোত্রের সবজি, দুয়ের মধ্যেই ডায়ালাইল ডিসালফাইড থাকে, এই বৈশিষ্ট্যর জন্য এর ঔষধিগুণ থাকতে পারে। চুল আবার গজানোর জন্য বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি থাকলেও রসুনের অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, ইমিউনোমডিউলেটরি এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য এটিকে চমৎকার একটি সম্ভাব্য বিকল্প করে তোলে।

২০২১ সালের একটি গবেষণায় বলা হয় বহুদিন ধরে এর বিভিন্ন রকম বৈশিষ্ট্যের জন্য রসুনের ব্যবহার হয়ে আসছে এবং বর্তমানে একে খুসকি নিয়ন্ত্রণের একটি সম্ভাব্য উপায় বলে মনে করা হয়। এর অন্যতম মূল উপাদান হল অ্যালিসিন, যা সালফারে ভরপুর এবং চুল পড়ে যাওয়ার চিকিৎসায় তা বিশেষ কার্যকরী। এটির জন্য চুল পরে যাওয়ার সমস্যা সমাধানে রসুনকে একটি প্রতিশ্রুতিপূর্ণ উপাদান বলে মনে করা হয়।

স্কাল্পে বা মাথার ত্বকে সরাসরি রসুন লাগানোর কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে?

স্কাল্পে বা মাথার ত্বকের টাক পড়ে যাওয়া অংশে রসুনের কোয়া লাগানোর দাবি নিয়ে ২০২০ সালে একটি গবেষণা করা হয়েছিল। রিপোর্টে চর্মরোগের অবস্থায় রসুনের প্রয়োগে বেশ কিছু খারাপ ফল উঠে আসে। কেউ কেউ অ্যালার্জি বা জ্বালা যন্ত্রণা চুলকানির সমস্যাযুক্ত ডার্মাটাইটিস, ছত্রাক, অ্যানজিওডিমা, পেমফিগাস, অ্যানাফিল্যাক্সিস এবং ফটোঅ্যালার্জির মত সমস্যা অনুভব করতে পারেন। রসুনের অ্যালার্জেনিক উপাদান, যেমন ডায়ালিল ডিসালফাইড, অ্যালিল প্রোপিল সালফাইড এবং অ্যালিসিন, এধরনের প্রতিক্রিয়াগুলির জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। বিশেষ জায়গায় রসুন ব্যবহার করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি জ্বালা যন্ত্রণা চুলকানির সমস্যাযুক্ত ডার্মাটাইটিস এবং কেমিকেল বার্ণের কারণ হতে পারে, বিশেষ করে যখন অক্লুসিভ ড্রেসিংয়ের মাধ্যমে লাগানো হয়। রসুনের অ্যালার্জি থাকতে পারে এমন ব্যক্তিদের জন্য রসুনের অ্যালার্জেনের প্যাচ টেস্ট করার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। যদিও রসুনের কিছু বিশেষ উপকারিতা রয়েছে, তবে ওষুধের উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহার করার সময় সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও সচেতন হওয়া এবং সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য।

Dermatologist Dr. Kannagath

একজন বিশিষ্ট ডার্মাটোলজিষ্ট, ডাঃ জ্যোতি কান্নানগাথের বক্তব্য অনুসারে, যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের ঐ বিশেষ অঞ্চলে লাল রঙের ফুসকুড়ি, হাইভ বা আমবাত, চুলকানি, ইনফ্ল্যামেশন, বা ফুলে যাওয়া ইত্যাদির মধ্যে কোন একটি বা একাধিক লক্ষণ দেখা যেতে পারে।

এছাড়াও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়ে ঘরোয়া প্রতিকারের উপায়গুলি ব্যবহার করার সময়ে মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় সতর্কতা গ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ার সহজলভ্যতার জন্যও এই ধরণের ঘরোয়া উপায়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নেওয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে, চুলের বৃদ্ধির দ্রুত ঘরোয়া উপায় ইত্যাদির মত প্রতিকারের দাবী নিয়ে এই ঘরোয়া উপায়গুলি আরো ছড়িয়ে পড়ছে।

নিজে থেকে চিকিৎসা করার সমস্যা নিয়ে ডাঃ কান্নানগাথ বলেছেন, “নিজে থেকে এসব চিকিৎসা করা কখনো কখনো ঝামেলার এবং সেই সঙ্গে সঠিক ভাবে প্রয়োগের উপায় না জেনে এগুলির প্রয়োগ করার ফলে সংক্রমণ হতে পারে। এ ধরণের জিনিসের ক্রমাগত প্রয়োগে ফলিকিউলাইটিস হতে পারে, এটি হল ত্বকে ছোট ফোঁড়ার মত কিছু তৈরি হওয়া, এই জাতীয় বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।“