Last Updated on March 5, 2024 by Urmimala Sengupta
সারমর্ম
সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিওতে দাবী করা হয়েছে যে পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকায় কোন মানুষের কখনো ক্যানসার হয়নি। এর পেছনে যে কারণ বলা হয়েছে তা হল এখানকার মানুষ অ্যাপ্রিকটের বীজ খান। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল।
দাবি
কটি ভিডিওতে দাবী করা হয়েছে যে পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকায় কোন মানুষের কখনো ক্যানসার হয়নি। সেরকম একটি পোস্ট দেখা যাবে এখানে ।
সত্যানুন্ধান
পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকার মানুষদের কী কখনো ক্যানসার হয় না?
ঠিক তা নয়। পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকায় কখনো কারুর ক্যানসার হয়নি এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকার মানুষদের দীর্ঘ জীবন ও ভালো স্বাস্থ্য নিয়ে বহু দশক ধরে দাবী করা হচ্ছে। কিন্তু, তাদের যে ক্যানসার হয় না বা তাদের জীবন সুস্বাস্থ্যে ভরা এমন কোন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। যদিও কিছু গবেষণায় হুনজার জনগণের স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ুর বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে, কিন্তু তাদের কখনো ক্যানসার হয়না একথার চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া যায় না। অন্যান্য বিষয়গুলি যেমন তুলনামূলকভাবে ছোট জনসংখ্যা এবং চিকিৎসা পরিষেবার সাহায্য বিশেষ না পাওয়ার জন্য, এই অঞ্চলে ক্যানসার হওয়ার খবর বা রোগ নির্ধারন না হওয়াও এই ধারণার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
হুনজার মানুষদের স্বাস্থ্য বিভিন্ন বইয়ের বিষয়বস্তু হিসেবে উঠে এসেছে এবং দীর্ঘায়ু বৃদ্ধির জন্য তাদের খাদ্যাভ্যাস বিজ্ঞাপনের অংশ হিসেবে সামনে এসেছে। যদিও, এই উপত্যকায় ক্যানসার হয় না বলে গবেষণায় এরকম কিছু পাওয়া যায়নি।
এই দাবীর বিপরীতে বলা যায়, এই প্রকাশিত প্রামাণ্য তথ্যে দেখানো হয়েছে হুনজা উপত্যকায় নিশ্চিত ভাবে মানুষের দেহে ক্যানসার ধরা পড়েছে। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক অধ্যাপক ড. উইলিয়াম জার্ভিসের ১৯৮৬ তে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে ‘ক্যানসার মুক্ত সমাজ’ এর ধারণাকে ভুল বলা হয়েছে এবং কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল হুনজায় ক্যানসার রোগ যে রয়েছে তা নিশ্চিত করেছে।
ক্যানসারের বৃদ্ধি কী থেকে হতে পারে?
ক্যানসার একটি জটিল রোগ যা ভৌগলিক অবস্থান নির্বিশেষে যে কোন ব্যক্তির হতে পারে। তবে এটা ঠিক যে কিছু জনসংখ্যার মধ্যে ক্যানসারের প্রকোপ কম দেখা যায়, কিন্তু এই বিষয়টিকে শুধুমাত্র হুনজা উপত্যকায় বসবাসের জন্য দায়ী করলে তা অতি সরলীকরণ হয়ে যাবে। যে কোনো জনসংখ্যার ক্যান্সারের হার সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য, বড় নমুনার আকার, দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠীর সাথে তুলনা করে যথাযথ বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা প্রয়োজন।
বিভিন্ন রকমের কারণ ক্যানসার হওয়ার জন্য দায়ী, তার মধ্যে রয়েছে জিনগত প্রবণতা, বিশেষ রকমের লাইফস্টাইল (যেমন ধূমপান, ডায়েট এবং শারীরিক কাজকর্ম), কার্সিনোজেনের সংস্পর্শ এবং স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রাথমিক সনাক্তকরণের সুবিধা না থাকা। ক্যানসারের ব্যাপকতা নিয়ে গবেষণা করার সময় এই বহুমুখী দিকগুলি দেখে নেওয়া ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যাপ্রিকট বীজ খেলে কী ক্যানসারকে আটকানো যায়?
ঠিক তা নয়। অ্যাপ্রিকট বীজ খেলে যে ক্যানসার আটকানো যায় তার স্বপক্ষে কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। অ্যাপ্রিকট বীজে অ্যামিগডালিন নামক একটি যৌগের উপাদানের কারণে এটি নজরে এসেছে, যা ভিটামিন বি১৭ নামেও পরিচিত। এই যৌগটি খাওয়ার সময় তা থেকে সায়নাইড নির্গত হয়। বিকল্প চিকিৎসার কিছু প্রবক্তা দাবি করেছেন যে অ্যামিগডালিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন এপ্রিকট বীজ ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে বা ক্যানসারের চিকিৎসায় কাজে লাগতে পারে।
যদিও, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এই দাবীর সমর্থন করে না। অ্যামিগডালিন থেকে বেরোনো সায়ানাইড মানব কোষের জন্য বিষাক্ত হতে পারে এবং এর থেকে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুতর ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এমনকি, ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) একটি সতর্কতা জারি করেছে এর সম্ভাব্য বিষাক্ততার কারণে অ্যাপ্রিকট বীজ বা অ্যামিগডালিন যুক্ত পণ্য খাওয়ার বিরুদ্ধে।
অ্যাপ্রিকট বীজ খাওয়া আসলে ক্ষতিকারক হতে পারে কারণ এতে অ্যামিগডালিন নামক একটি যৌগ থাকে, যা সায়ানাইড বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে। অ্যামিগডালিনের একটি বিশুদ্ধ রূপ লায়েট্রিল, আগে ক্যানসার রোধকারী চিকিৎসা হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল কিন্তু প্রাণীদের নিয়ে গবেষণায় এটি খুব সামান্য ক্যানসার রোধকারী হিসাবে কাজ করে এরকম দেখা গেছে এবং মানুষের ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলিতে তা কোন কাজে আসেনি। কানসারের চিকিৎসায় অ্যামিগডালিন বা লায়েট্রিলের ব্যবহারের জন্য প্রমাণগুলি যথেষ্ট না এবং তা ধারাবাহিকও নয়। অধিকন্তু, কাঁচা অ্যাপ্রিকটের বীজ খাওয়ার ফলে সায়ানাইড বিষক্রিয়া হতে পারে, এই জন্য বেশ কয়েকটি দেশে এগুলি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ক্যানসার সারানোর দাবি করে এমন অসংখ্য অসঙ্গত তত্ত্ব রয়েছে। আমরা এর আগে রাইফ মেশিনগুলি সম্পূর্ণরূপে ক্যানসার সারিয়ে তুলতে পারে এমন ধারণা খারিজ করে দিয়েছি। তবে, এটা মনে রাখা জরুরী যে ক্যানসার একটি জটিল রোগ। কার্যকরী চিকিৎসার জন্য সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে ক্লিনিকাল ট্রায়াল সহ যথাযথ বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রয়োজন।
Disclaimer: Medical Science is an ever evolving field. We strive to keep this page updated. In case you notice any discrepancy in the content, please inform us at [email protected]. You can futher read our Correction Policy here. Never disregard professional medical advice or delay seeking medical treatment because of something you have read on or accessed through this website or it's social media channels. Read our Full Disclaimer Here for further information.