Last Updated on April 15, 2024 by Team THIP
সারমর্ম
একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে খেজুর আর মেথি খেলে পিঠের ব্যথা সেরে যায়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল।
দাবি
আজকাল কোমর/পিঠের ব্যথা প্রতিটি বয়সের একটি সাধারণ সমস্যা। কিন্তু পিঠের ব্যথা সারাতে ইন্টারনেটের চারপাশে অনেক মিথ রয়েছে, তার মধ্যে একটি হল খেজুর এবং মেথি পিঠের ব্যথা সারাতে পারে।
সত্যানুন্ধান
পিঠের ব্যথা কেন হয়?
বিভিন্ন কারণের জন্য পিঠের ব্যথা হতে পারে, এর মধ্যে রয়েছে মাসল স্ট্রেন বা পেশীতে টান ধরা, লিগামেন্ট মচকে যাওয়া, হার্নিয়েটেড ডিস্ক, আর্থারাইটিস বা অস্টিওপরোসিসের মতো অবস্থা, মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিকতা, এমনকি মানসিক চাপ এবং শরীরের ভঙ্গির অস্বাভাবিকতা। পিঠে ব্যথার তীব্রতা এবং কারণ বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।
ডায়েটের মাধ্যমে কী পিঠের ব্যথা সারে?
ঠিক তা নয়। যদিও ডায়েট খুব ভালোভাবে পিঠের ব্যথা দূর করতে পারেনা তবে একে নিয়ন্ত্রণ ও কমানোর বিষয়ে এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী পিঠের ব্যথায় প্রায়শই ইনফ্ল্যামেশন জড়িত থাকে তাই ডায়েটের কিছুটা পরিবর্তন করলে তা নিয়ন্ত্রণ বা কমাতে সাহায্য করে। তাই, পিঠের ব্যথার পেছনে কী কারণ রয়েছে তা নির্ধারণ করতে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত একজন পেশাদারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এছাড়াও, এটাও জেনে রাখা জরুরি যে শুধুমাত্র ডায়েট পিঠের ব্যথার মত জটিল অবস্থার মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়। একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি, এর মধ্যে রয়েছে ডায়েটের পরিবর্তন, সেই সঙ্গে অন্যান্য বিষয়গুলি যেমন ব্যায়াম, ফিজিকাল থেরাপি এবং স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ পিঠের ব্যথা কমানোয় কার্যকরী হয়। এও জেনে রাখা দরকার যে পিঠের ব্যথার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও ওয়ান-সাইজ-ফিট-অল-অ্যাপ্রোচ অর্থাৎ সবকিছুর-জন্য-একটাই-সমাধান নেই, তাই অস্বস্তি সৃষ্টি করে এমন খাবারগুলিকে সনাক্ত করা এবং বাদ দেওয়া কারো কারো ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে।
এটা কী ঠিক যে খেজুর আর মেথি খেলে পিঠের ব্যথা সারে?
ঠিক তা নয়। যদিও ফেনুগ্রীক(মেথি) ও খেজুরের মত প্রাকৃতিক প্রতিকারের জিনিসগুলি থেকে শারীরিক ক্ষেত্রে অনেক উপকার হয় তবুও পিঠের ব্যথায় এর কার্যকারিতা কতটা তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ খুব কমই আছে। মেথি বীজে এমন কিছু যৌগ রয়েছে যাদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য আছে বলে যদিও মেথি (ট্রাইগোনেলা ফোনাম গ্রেকাম)- এর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সম্ভাব্য উপকারিতা নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে এবং জানা গেছে, এটি শরীরের ইনফ্ল্যামেশন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
সনাতনী পদ্ধতিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেথির ব্যবহার রয়েছে, এর মধ্যে ব্যথা কমানোও রয়েছে। তবে, এটি পিঠের ব্যথা সারাতে পারে কিনা সেই সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। কিছু গবেষণায় উপকার হতে পারে বলে ধারণা পাওয়া গেছে, তবে এটা কীভাবে কাজ করে আর এর কার্যকারিতা কতটা তা নিয়ে আরো অনেক বেশি গবেষণার প্রয়োজন।
মেথিতে এমন কিছু যৌগ রয়েছে যেগুলির অ্যান্টি-ইনফ্ল্যেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা কিছু ক্ষেত্রে ইনফ্ল্যামেশন এবং পিঠের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। যাইহোক, বিশেষত পিঠের ব্যথা নিয়ে গবেষণা সীমিত। এছাড়াও মেথি মাসলের ব্যথায় সাহায্য করতে পারে যা কিছুক্ষেত্রে পিঠের ব্যথা, যা পেশীর টানের জন্য হয় তা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, মেথি ব্যথায় কাজ করে এরকম বৈজ্ঞানিক প্রমাণের সংখ্যা কম এবং এর পদ্ধতি কী তা নিয়ে অনেক বড় মাপের কোন গবেষণা নেই। এ নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে গেলে আমাদের আরও ভালোভাবে ডিজাইন করা ক্লিনিকাল ট্রায়াল দরকার। তাই পিঠের ব্যথা সারাতে শুধু মেথির ওপর নির্ভর করা ঠিক নয়।
খেজুর বিভিন্ন রকম পুষ্টির উপাদান যেমন ফাইবার, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং নানা ভিটামিনের খুব ভালো উৎস যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। যদিও খেজুর কার্বোহাইড্রেট ও কিছু পুষ্টিগুণের খুব ভালো উৎস তা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় কিছু ভিটামিন, মিনারেল এবং প্রোটিন যা শরীরকে সামগ্রিকভাবে ভালো রাখার জন্য জরুরি তার ঘাটতি রয়েছে। এছাড়াও, খেজুরে যেহেতু শর্করা বা সুগারের মাত্রা যথেষ্ট বেশি তাই বেশি মাত্রায় খেজুর খেলে শরীরে ব্লাড সুগারের পরিমাণের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে ডায়েটে যদি প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণের পরিমাণ যথেষ্ট না থাকে তবে শরীরের ওপর তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। এছাড়া, বিশেষ কয়েকটি খাদ্যবস্তুর ওপর পছন্দ সীমিত করে ফেললে তা থেকে পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে এবং তা থেকে মেটাবলিক ফাংশান বা বিপাক ক্রিয়া ব্যহত হয় এবং তা থেকে সামগ্রিক স্বাস্থ্যে এর ছাপ পড়ে।
সাওল অর্থো কেয়ারের অর্থোপেডিশিয়ান এবং মেডিকেল ডিরেক্টর ডাঃ রচিত গুলাটি বলেছেন, “পিঠের ব্যথার চিকিৎসায় ডায়েট একটি সহায়ক হিসাবে কাজ করতে পারে। এর মানে হল, ভালো খাবার দাবার চিকিৎসার ফলকে উন্নত করতে পারে তেমনি খারাপ খাবার দাবার এর ফলকে নিম্নমুখী করে তুলতে পারে। কিন্তু পিঠের ব্যথার উপশমে সবচেয়ে জরুরি যে বিষয়টি হল তা হল ওষুধ, সবচেয়ে কম পরিমাণে চাপ দেওয়া, ফিজিওথেরাপি, সঠিক দেহের ভঙ্গি, ওজন কমানো এবং লাইফস্টাইল পরিবর্তন।”
পিঠের ব্যথা মোকাবিলায় সঠিক পন্থা কী?
পিঠের ব্যথা মোকাবিলায় দরকার সামগ্রিক পন্থা বেছে নেওয়া যার মধ্যে রয়েছেঃ
- সঠিক কারণ নির্ধারণঃ পিঠের ব্যথার পেছনে কারণটি কী তা খুঁজে বের করতে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত একজন পেশাদার বা ডাক্তারের প্রয়োজন। এতে শারীরিক কিছু পরীক্ষা করার দরকার হতে পারে, চিকিৎসা বা রোগীর ইতিহাস জানা এবং কিছু ক্ষেত্রে এক্স-রে বা এমআরআই এর মত কিছু পরীক্ষা করার দরকার হতে পারে।
- চিকিৎসার পরিকল্পনাঃ পিঠের ব্যথার চিকিৎসা হয় ব্যথার কারণ বা তা কতটা বেশি তার ওপর নির্ভর করে। এই চিকিৎসার মধ্যে বিভিন্ন রকম পদ্ধতি একইসঙ্গে চালানো হয় যেমন, ফিজিকাল থেরাপি, ওষুধ, ঠান্ডা/গরম সেঁক, ব্যায়াম, লাইফস্টাইল পরিবর্তন এবং কখনো কখনো খুব বেশি ব্যথায় অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন হতে পারে।
- স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বা লাইফস্টাইলঃ পিঠকে ঠিকঠাক রাখতে স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল মেনে চলা দরকার। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, দেহের ভঙ্গিমা সঠিক রাখা এবং অনেকক্ষণ বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকা এড়িয়ে চললে পিঠের ব্যথার সম্ভাবনা কমে।
- প্রাকৃতিক প্রতিকারের ব্যবস্থাঃ কেউ কেউ হালকা পিঠের ব্যথা দূর করতে প্রাকৃতিক উপায়গুলি যেমন গরম বা ঠান্ডা সেঁক, হালকা স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম বা কিছু ডায়েটের সাহায্য নিয়ে থাকেন। কারোর কারোর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিগুলি কিছুটা আরাম দিতে পারে, কিন্তু খুব বেশি মাত্রায় বা ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী পিঠের ব্যথার পেছনে আসল কারণটি কী তা বের করতে পারে না।
Disclaimer: Medical Science is an ever evolving field. We strive to keep this page updated. In case you notice any discrepancy in the content, please inform us at [email protected]. You can futher read our Correction Policy here. Never disregard professional medical advice or delay seeking medical treatment because of something you have read on or accessed through this website or it's social media channels. Read our Full Disclaimer Here for further information.