Last Updated on March 11, 2024 by Urmimala Sengupta
সারমর্ম
একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে গ্রীণ টি খেলে ডিপ্রেশন আটকানো যায়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল।
দাবি
সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে গ্রীণ টি খাওয়ার সম্ভাব্য স্বাস্থ্য উপকারিতা তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। একটি পয়েন্টে, দাবি করা হয়েছে যে গ্রীণ টি খেলে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । এরকম একটি পোস্ট এখানে দেখা যাবে ।
সত্যানুন্ধান
গ্রীণ টি বা সবুজ চা কী?
গ্রীণ টি সারা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয় ও এটি ঠান্ডা বা গরম দুভাবেই খাওয়া হয়। এটি ক্যামেলিয়া সিনেনসিস গাছের পাতা থেকে তৈরি করা হয়। এই গাছটি থেকে কালো চা, ওলং চা এবং সাদা চা-ও পাওয়া যায়। তবে, অন্যান্য চায়ের সঙ্গে গ্রীণ টি র পার্থক্য হল এটি যখন তৈরী করা হয় এতে সবচেয়ে কম পরিমাণ অক্সিডেশন পদ্ধতির প্রয়োগ হয়। গ্রীণ টি সবচেয়ে কম পরিমাণ অক্সিডেশন পদ্ধতির প্রয়োগে তৈরী হয়। এর ফলে এই চায়ে স্বাভাবিক অ্যান্টিওক্সিডেন্ট ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে সাহায্য করে।
গ্রীণ টি খেলে কী কোন স্বাস্থ্যকরী উপকার পাওয়া যায়?
হয়ত পাওয়া যায়। গ্রীণ টি থেকে স্বাস্থ্যসম্মত উপকার পাওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিওক্সিডেন্ট তৈরী যা হার্ট ভালো রাখতে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও গ্রীণ টি ব্রেণের কাজ ভালো করতে সাহায্য করে, ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়, দাঁত ভালো রাখে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। কিন্তু এগুলি কম পরিমাণে খেলে তবেই সম্ভব কারণ এতে রয়েছে ক্যাফিনের কিছু উপাদান এবং ব্যক্তিবিশেষে তা পরিবর্তিত হতে পারে।
ব্রেণের স্বাস্থ্যের ওপর গ্রীণ টির প্রভাব সম্পর্কে প্রমাণ কী বলে?
বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ, বিশেষ করে ক্যাটেচিন এবং ক্যাফিনের উপাদানের জন্য গ্রিন টি ব্রেনের স্বাস্থ্যের ভালো রাখার বিষয়টির ওপর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমরা কয়েকটি গবেষণা পত্র সংগ্রহ করেছি যেখানে ব্রেনের স্বাস্থ্যের উপর গ্রীণ টির প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদানঃ গ্রীণ টি-তে রয়েছে অনেক বেশী মাত্রায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, বিশেষ করে ক্যাটেচিন যা এপিগ্যালোক্যাটেচিন গ্যালাট (ইজিসিজি) নামে পরিচিত। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ব্রেনের কোষগুলিকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে, যা বার্ধক্য এবং অ্যালজাইমার ও পারকিনসনের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের সাথে যুক্ত।
নিউরোপ্রোটেকশনঃ গ্রীণ টি-র ক্যাটেচিনে নিউরোপ্রোটেক্টিভ প্রভাব থাকতে পারে, এর ফলে নিউরোডিজেনারেটিভ রোগগুলির ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং কগনিটিভ বা জ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত কাজকর্ম উন্নত করে। যদিও, মানুষের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে ভালো ভাবে জানতে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে।
কগনিটিভ ফাংশন উন্নত করাঃ নিয়মিত গ্রীণ টি খাওয়া কগনিটিভ ফাংশনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, এই কাজকর্ম উন্নত হওয়া এবং তা কমে আসার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, ফলাফলগুলি নিয়ে দন্দ্ব রয়েছে, এবং এর একটি কার্যকারণ সম্পর্ক তৈরীর জন্য আরও জোরালো ক্লিনিকাল গবেষণার প্রয়োজন।
মুড বুষ্টিং বা মন ভালো করা ও মেন্টাল অ্যালার্টনেস বা মানসিকভাবে সচেতন থাকাঃ গ্রীণ টির মধ্যে থাকা ক্যাফিনের উপাদান মন ভালো করতে পারে সেইসঙ্গে মানসিকভাবে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, এর থেকে কগনিটিভ পারফরমেন্স বাড়ে ও ডিপ্রেসশনের ঝুঁকি কমে গিয়ে তা পরোক্ষ ভাবে ব্রেন ভালো রাখে।
নিউরোজেনেসিসে সম্ভাব্য ভূমিকা পালনঃ গ্রীণ টি-র ক্যাটেচিন নিউরোজেনেসিসকে বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্রেনের নতুন নিউরোন তৈরী হয়। এর থেকে কগনিটিভ ফাংশন ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
মোটের ওপর কয়েকটি প্রমাণ আছে যেখানে দেখা গেছে গ্রীণ টি ব্রেনের ওপর কিছু প্রভাব ফেলছে। তবে,আমাদের ব্রেনে গ্রীণ টি খাওয়ার প্রভাব এবং উপকারিতা পুরোপুরিভাবে বোঝার জন্য আরও অনেক মানুষের মধ্যে এলোমেলোভাবে নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা বা র্যানডামাইজড কনট্রোল্ড ট্রায়াল সহ আর উঁচু-মানের গবেষণা প্রয়োজন। এছাড়াও, জেনেটিক্স, সামগ্রিক খাদ্যাভ্যাস বা ডায়েট এবং জীবনযাত্রার অভ্যাস বা লাইফস্টাইলের মতো কারণের উপর ভিত্তি করে গ্রীণ টি খাওয়ার প্রভাব ব্যক্তিবিশেষে পরিবর্তিত হতে পারে।
গ্রীণ টি খেলে কী ডিপেশন প্রতিহত করা যায়?
ঠিক তা নয়। গ্রীণ টি যে ডিপ্রেশন আটকাতে পারে তার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ নেই। অল্প পরিমাণে যেসব প্রমাণ রয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে গ্রীণ টি ডিপ্রেসিভ মুড বা মনখারাপের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে। ২০২৩ এ প্রকাশিত অন্য একটি গবেষণায় জানানো হয়েছে অনেক দিন ধরে গ্রীণ টি খেলে মহিলাদের মেনোপজের পরে ডিপ্রেশনের ঝুঁকি কমাতে পারে।
আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে গ্রীণ টি-তে এল-থেনাইন এর মতো যৌগ রয়েছে, এটি একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা মন শান্ত রাখতে সাহায্য করে বলে পরিচিত এবং ক্যাটেচিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যার নিউরোপ্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। এই যৌগগুলি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কিছু ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যার মধ্যে স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি অর্থাৎ মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমানো একটি।
তবে, এটা মনে রাখা দরকার যে কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে ঠিকই যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো হওয়ার সঙ্গে গ্রীণ টি খাওয়ার যোগ রয়েছে কিন্তু এই প্রমাণগুলি চূড়ান্ত নয়। গ্রীণ টি এবং ডিপ্রেসশনের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে বের করার জন্য গবেষণা এখনো চলছে এবং এর সাথে জড়িত সমস্তরকম সুবিধা এবং প্রক্রিয়াগুলি পুরোপুরি বোঝার জন্য আমাদের আরও গবেষণার প্রয়োজন। যাই হোক না কেন, একটি সুষম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারার অংশ হিসাবে গ্রিন টি খাওয়ার বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উপকারিতা থাকতে পারে, তবে এটিকে ডিপ্রেশনের জন্য একটি স্বতন্ত্র চিকিৎসা হিসাবে দেখা উচিত নয়। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত একজন ব্যক্তির কাছ থেকে পেশাদার সাহায্য নেওয়া অত্যাবশ্যক, যিনি উপযুক্ত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা সম্পর্কে পরামর্শ দিতে পারবেন।
কনসালটেন্ট সাইকোলজিষ্ট ডাঃ রাহুল বনসল থিপ-কে দেওয়া একটি সাক্ষাতকারে বলেছেন, “চিকিৎসায় যে কোনো ধরনের বিলম্ব এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাবে”।
শুধুমাত্র গ্রিন টি পান করলে ডিপ্রেশন প্রতিরোধ করা যায় এই ধারণাটি একটি জটিল অবস্থার অতি সরলীকরণ, এবং ডিপ্রেসনের চিকিৎসার জন্য একটি সামগ্রিক ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক।
সাইকিয়াটিষ্ট ডাঃ বিন্দা সিং জানিয়েছেন, “ডিপ্রেশন হচ্ছে একটি অসুখ এবং এর সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন। এটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন পরিস্থিতিগত বা সিচুয়েশনাল, ট্রমা, শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা ইত্যাদি। ডিপ্রেশনের মোকাবিলায় প্রয়োজন হস্তক্ষেপ, যার মধ্যে রয়েছে ওষুধ, পরামর্শ, ইতিবাচক চিন্তা, কথা বলা ইত্যাদি।
দুর্ভাগ্যবশত, ডিপ্রেসশনের জন্য খাদ্যতালিকাগত প্রতিকারের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।“ অভিজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ সমীর কালানি থিপ মিডিয়া-কে দেওয়া একটি সাক্ষাতকারে বলেছেন ঘরোয়া প্রতিকারগুলি ডিপেশনের মূল কারণকে সরিয়ে ফেলতে পারে না।
Disclaimer: Medical Science is an ever evolving field. We strive to keep this page updated. In case you notice any discrepancy in the content, please inform us at [email protected]. You can futher read our Correction Policy here. Never disregard professional medical advice or delay seeking medical treatment because of something you have read on or accessed through this website or it's social media channels. Read our Full Disclaimer Here for further information.