Last Updated on March 12, 2024 by Urmimala Sengupta
সারমর্ম
একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে বাড়িতে তৈরী আমলকী, হলুদ ও সরষের তেলের মিশ্রণ সাদা চুলে লাগালে পুরোপুরি স্থায়ীভাবে কালো করে তোলা যায়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল।
দাবি
সাদা চুল কালো করা নিয়ে অনেক রকম ঘরোয়া পধ্যতি ছড়িয়ে আছে ইন্টারনেটে। তেমনি একটি পোষ্টে বলা হয়েছে সাদা চুল ঘরেই চিরতরে রাঙিয়ে দেয় গুজবেরি, হলুদ এবং সরিষার তেল দিয়ে তৈরি তেল। তেমনি একটি পোস্ট এখানে দেখা যাবে।
সত্যানুন্ধান
আমাদের চুল সাদা হয়ে যায় কেন?
বয়স বেড়ে চলার সাথে সাথে চুলের রঙ সাদা হয়ে যাওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। হার্ভার্ড হেলথের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে চুলের ফলিকলগুলি থেকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে রঙ তৈরী হওয়ার পরিমাণ কমতে থাকে, তাই যখন চুলের আয়ু শেষ হয়ে যাওয়া ও এর আবার নতুন করে গজিয়ে ওঠার চক্রটি চলতে থাকে, ৩৫ বছরের পর চুলের গোড়া থেকে সাদা চুল গজিয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরী হয়। এই প্রক্রিয়ায় জেনেটিক্সের একটি বড় ভূমিকা আছে। এছাড়াও, বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা বা কারণের জন্য চুল সময়ের আগে পেকে যেতে পারে, যাকে বলা হয় বয়সের আগে চুল পেকে যাওয়া। এই কারণগুলির মধ্যে ভিটামিনের ঘাটতি, থাইরয়েডের রোগ, ভিটিলিগো এবং অ্যালোপেশিয়া রয়েছে।
অনেকে মনে করেন স্ট্রেস বা মানসিক চাপের কারণেও চুল পেকে যেতে পারে। তবে এর পেছনে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ খুব কমই আছে। গবেষণায় এমন দেখা গেছে যে মানসিকের চাপের কারণে ইঁদুরের লোমগুলি সাদা হয়ে যায়। কিন্তু এই ঘটনা মানুষের ক্ষেত্রেও একইভাবে ঘটবে কিনা তা এখনো জানা যায়নি।
চুল সাদা হয়ে যাওয়া কী পুরোপুরি বদলে ফেলা যায়?
না। পণ্য উৎপাদকদের অনেকরকম মার্কেটিং বা বিপণনের দাবী সত্ত্বেও বলা যায় চুলের সাদা হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া পুরোপুরি উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায় না। প্রসাধনী রঙের বাইরে, যখন একটি চুলের ফলিকল রঙ তৈরী করে সেই রঙ হয় স্থায়ী ও তা কখনোই পরিবর্তন করা যায় না। হার্ভার্ড ব্লগ জানিয়েছে যদি একটি মাত্র চুল বাদামী (বা লাল বা কালো বা সোনালী) হয়, এই রঙের পরিবর্তন কখনই সম্ভব নয় (যদি না আপনি চুলে রঙ করেন)।
কনসালটেন্ট ডার্মাটোলজিষ্ট ও কসমেটোলজিষ্ট ডাঃ রীনা মাজিথিয়া আরো জানিয়েছেন, “চুল পেকে যাওয়া হচ্ছে প্রাথমিকাভাবে বয়স বেড়ে যাওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এটিকে বিভিন্ন রকম জেনেটিক বৈশিষ্ট্য প্রভাবিত করে। যখন চুলের ফলিকলের পিগমেন্ট তৈরীর কোষগুলিতে রঙ তৈরীর পরিমাণ কমে যেতে থাকে তখন এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই কম পরিমাণে তৈরী হওয়ার জন্যই চুল দেখতে ধুসর বা সাদা হয়ে যায়।
চুল ভালো রাখতে লেবু ও নারকোল তেলের কিছু উপকারিতার বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন এদুটি চুল নরম ও চকচকে করে, কিন্তু তারা কখনোই চুল সাদা হয়ে যাওয়ার অন্তর্নিহিত কারণগুলির পরিবর্তন করতে পারে না। লেবুর রস হল অম্ল জাতীয় বা অ্যাসিডিক এবং এটি হয়ত বাড়তি তেল বা স্কাল্পের ওপরে জমে থাকা কিছু সরিয়ে দিতে পারে,আবার নারকোল তেল চুলের পুষ্টিতে সাহায্য করতে পারে। তবে, এদের কোনটিই মেলানিন (চুলের রঙ তৈরীতে যে পিগমেন্ট কাজে লাগে) তৈরীকে প্রভাবিত করতে পারে না বা বয়স বেড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে উল্টোমুখে ঘুরিয়ে দিতে পারে না।“
পার্সসিয়ানলিলির স্কিন/হেয়ার/অ্যাস্থেটিক্স/আয়ুর্বেদা ক্লিনিকের ডার্মাটোলজিষ্ট এবং মেডিকেল ডিরেক্টর ডাঃ স্বাতী ওয়াতওয়ানি বলেছেন, “আপনি যখন ৪০-এর শেষের দিকে ও ৫০-এর গোড়ায় পৌঁছন তখন আপনার চুল সাদা হতে শুরু করে। কিন্তু সময়ের আগে পেকে যাওয়ার এই প্রক্রিয়া ২০-র প্রথম দিকেও শুরু হয়ে যেতে পারে। তাই সময়ের আগে চুল পেকে যাওয়ার পদ্ধতির গতি কমাতে এর পেছনে কারণগুলি খুঁজে বের করে তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এটা পুরোপুরি উলটো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।“
আমলকী, সরষের তেল আর হলুদের মিশ্রণ দিয়ে কী চুল সাদা হয়ে যাওয়াকে পুরোপুরি বদলে ফেলা যায়?
আমলকী, সরষের তেল আর হলুদের মিশ্রণ দিয়ে চুল সাদা হয়ে যাওয়াকে পুরোপুরি বদলে ফেলা যায় এমন কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। বয়স বেড়ে যাওয়া ও জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে চুল সাদা হয়ে যাওয়ার পেছনে যে বিষয়টি রয়েছে তা হল চুলের রঙের জন্য যে পিগমেন্ট দায়ী মেলানিন, মেলানিনের পরিমাণ কমে যাওয়াই চুল সাদা হয়ে যাওয়ার প্রাথমিক কারণ। কিছু প্রাকৃতিক উপায় ও উপাদান চুলকে ভালো রাখতে পারে ঠিকই, এর জন্য দায়ী কারণগুলির পরিবর্তন না করা গেলে কিন্তু সাদা চুল পুরোপুরি কালো করে দেওয়া সম্ভব নয়। কিছু ক্ষেত্রে নিউট্রিশনের ঘাটতির কারণে সময়ের আগে চুল পেকে গেলে এই প্রক্রিয়ার গতিকে কিছুটা কমানো যায়।
আমলকী (যাকে আমলাও বলা হয়), সরষের তেল এবং হলুদ এধরণের অবস্থায় কাজে লাগতে পারে বলে মনে করা হয়। তবে এর কার্যকারিতা প্রমাণ করার মত যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
- আমলকী (আমলা) – আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি রয়েছে যা চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস-এর বিরুদ্ধে লড়াই করে, যার কারণে সময়ের আগে চুল পেকে যায়। কিন্তু আপনার ডায়েটের অংশ হিসেবে আমলকী খাওয়া বা আমলকী দিয়ে বানানো হেয়ার মাস্ক সাদা চুল পুরোপুরি বদলে দিতে পারে না কিন্তু এই মাস্ক চুলের সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে।
- সরষের তেল – চুল ভালো রাখতে সরষের তেলের কিছু উপকারিতা রয়েছে, এতে স্কাল্প নরম থাকে ও চুলের বৃদ্ধি ভালো হয়। সরষের তেল দিয়ে স্কাল্প মালিশ করলে চুল ভালো হতে পারে তবে, সাদা চুল উলটো দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে না।
- হলুদ – হলুদের মধ্যে অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে মনে করা হয়। এটি স্কাল্প ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করতে পারে কিন্তু সাদা চুলের রঙ পুরোপুরি আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে কিনা তার কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
কিছু উপায় ও প্রসাধনী দিয়ে আপনার চুলের স্বাস্থ্য ভালো হতে পারে, তা দেখতেও ভালো হতে পারে কিন্তু তা দিয়ে সাদা চুল পুরোপুরি বদলে ফেলা যায় না। আপনি যদি আপনার চুল সাদা হয়ে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হন এবং এটি আপনার আত্ম-সম্মানকে প্রভাবিত করে, আপনি পেশাদার পরামর্শ এবং চিকিৎসার জন্য চুলের রং ব্যবহার বা ডার্মাটোলজিষ্ট বা ট্রাইকোলজিস্টের সাথে কথা বলার কথা ভাবতে পারেন। মনে রাখবেন ঘরোয়া উপায়গুলি কতটা কাজ করবে তা কিন্তু ব্যক্তি বিশেষে আলাদা আলাদা হয় এবং আপনার যাতে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য চুলের জন্য ঘরোয়া কোন উপায় ব্যবহার করার আগে সতর্ক হওয়া এবং একটি প্যাচ টেস্ট করা গুরুত্বপূর্ণ।
মানুষ বিশ্বাস করে যে বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় যেমন নাকে তেল দেওয়া চুলের সাদা হয়ে যাওয়াকে প্রভাবিত করতে পারে, টমেটো এবং কফি ব্যবহার করলে সাদা চুল কালো হয়ে যেতে পারে, লেবু এবং পেঁয়াজ চুলের সাদা হয়ে যাওয়াকে পুরোপুরি বদলে ফেলতে পারে এবং আরও অনেক কিছু। যদি আপনি সাদা চুলের ব্যাপারে কিছু করতে চান তবে একজন ডার্মাটোলজিষ্ট বা পেশাদারী চিকিৎসা পরামর্শ নিন। তারা আপনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দিতে পারবেন। মনে রাখবেন যে জেনেটিক্স, সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং লাইফস্টাইল সহ অনেকগুলি কারণ চুলের স্বাস্থ্য এবং চেহারাতে প্রতিফলিত হয়।
Disclaimer: Medical Science is an ever evolving field. We strive to keep this page updated. In case you notice any discrepancy in the content, please inform us at [email protected]. You can futher read our Correction Policy here. Never disregard professional medical advice or delay seeking medical treatment because of something you have read on or accessed through this website or it's social media channels. Read our Full Disclaimer Here for further information.