Last Updated on December 26, 2023 by Team THIP
সারমর্ম
ফেসবুক এ বহু চর্চিত একটি ভিডিওতে দেখানো হয়েছে হলুদ মেশানো জল খেলে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল।
দাবি
শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাবে বহু অনুষ অসুস্থ্য হয়ে পরে । এই হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ঘরোয়া উপায়ের কথা বলা হয়ে থাকে । এর মধ্যে একটি হলো হলুদ মেশানো জল খেলে হিমোগ্লোবিন বেড়ে ওঠে । ফেসবুক ও ইউটুবে এ হলুদ মেশানো জল বা হলুদ চা এর গুনাগুন অতিরঞ্জিত করে প্রকাশিত কিছু ভিডিও প্রচুর শেয়ার হয়েছে । তার মধ্যে একটি ভিডিও দেখা যাবে এখানে ।
সত্যানুন্ধান
হিমোগ্লোবিন কী?
হিমোগ্লোবিন (কোন কোন জায়গায় একে হেমোগ্লোবিন) বলা হয়, এটি একধরনের প্রোটিন যা লোহিত রক্তকণিকায় পাওয়া যায়, যা ফুসফুস থেকে শরীরের বাকি অংশে অক্সিজেন সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ফুস্ফুস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইডের মত, একটি বর্জ্য পদার্থকে বয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। অণু বা মলিকিউলের জন্য রক্তের রঙ লাল হয়।
হিমোগ্লোবিনের প্রাথমিক কাজ হল ফুসফুসে অক্সিজেনের সাথে মিলে অক্সিহিমোগ্লোবিন নামে একটি অণু গঠন করা। এই পদার্থটি তারপর রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়, ট্যিসু ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গগুলিতে অক্সিজেন সরবরাহ করে। বিভিন্ন মেটাবলিক প্রক্রিয়ার জন্য ট্যিসুতে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়,
সেখানে অক্সিহিমোগ্লোবিন অক্সিজেন নিঃসরণ করে, এবং এর ফলে অক্সিজেন ছাড়া হিমোগ্লোবিন কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং তা শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ফুসফুসে ফেরত নিয়ে আসে।
হিমোগ্লোবিন চারটি প্রোটিন সাব ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত, যার প্রতিটিতে একটি আয়রনের পরমাণু থাকে। অক্সিজেন অণুকে একজোট করে রাখার জন্য আয়রন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন বি১২ এবং ফোলেটের মতো অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির সাথে আয়রনের পর্যাপ্ত মাত্রা হিমোগ্লোবিন তৈরী এবং সঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয়। কম হিমোগ্লোবিনের মাত্রা রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া তৈরী করতে পারে, এটি এমন একটি অবস্থা যা শরীরের অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে অপর্যাপ্ত লোহিত রক্তকণিকা বা হিমোগ্লোবিনের ফলে তৈরী হয়।
কোন কোন কারণের জন্য হিমোগ্লোবিন কাউন্ট কম হতে পারে?
শরীরের মধ্যে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়ার বিভিন্ন রকম কারণ রয়েছেঃ
- পুষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়াঃ হিমোগ্লোবিনে আয়রন একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। খাবারে আয়রনের পরিমাণ কম হলে হিমোগ্লোবিন তৈরী কম হতে পারে, এর থেকে আয়রনের ঘাটতির কারণে অ্যানিমিয়া হয়। ভিটামিন বি১২ ও ফোলেটের ঘাটতিঃ এই ভিটামিন লোহিত রক্তকণিকার সঠিকভাবে তৈরীর জন্য অপরিহার্য। এর ঘাটতি হলে মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হতে পারে।
- দীর্ঘস্থায়ী রোগঃ কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগ, ইনফ্ল্যামেটরি বিভিন্ন সমস্যা এবং কয়েক ধরণের ক্যানসার রোগে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন এবং জীবনকালকে প্রভাবিত করতে পারে।
- জিনঘটিত বিষয়ঃ কিছু ব্যক্তির জিনঘটিত সমস্যা থাকতে পারে যা হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষণ বা হিমোগ্লোবিন অণুর গঠনকে প্রভাবিত করে, যা থেকে সিকেল সেল অ্যানিমিয়া বা থ্যালাসেমিয়ার মতো শারীরিক অবস্থা তৈরী হতে পারে।
- রক্তক্ষরণঃ আঘাত, অস্ত্রোপচার, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তপাত অথবা রজঃস্রাব বা মাসিকের কারণে উল্লেখযোগ্য রক্তক্ষরণের ফলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে পারে।
- হরমোনের পরিবর্তনঃ হরমোনের পরিবর্তন, যেমন প্রেগন্যান্সি বা গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা প্রভাবিত হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং ভ্রূণের বিকাশের জন্য অতিরিক্ত আয়রনের প্রয়োজন হতে পারে।
- বিশেষ কিছু ওষুধপত্রঃ কিছু ওষুধ, যেমন কিছু কেমোথেরাপির ওষুধ বা এমন কিছু ওষুধ যেগুলি অস্থি মজ্জাকে প্রভাবিত করে, সেগুলি লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদনকে প্রভাবিত করতে পারে এবং এর ফলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রার তারতম্য হতে পারে।
খাবার কী হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে পারে?
হ্যাঁ, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সুষম খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেসব খাবারে আয়রনের মাত্রা বেশি থাকে যেমন রেড মিট, বিনস আর সবুজ শাক-পাতা হিমোগ্লোবিন বাড়াতে কাজ করে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার আয়রন শুষে নিতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক অ্যাসিডের উৎসগুলিও রক্তকে সামগ্রিক ভাবে ভালো রাখতে সাহায্য করে। হিমোগ্লোবিনের সর্বোচ্চ মাত্রাকে বজায় রাখতে হলে সুষম খাদ্য তালিকা মেনে চলতে হবে।
হলুদ কী হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে পারে?
এর সঠিক উত্তর জানা যায় না। একটি রিভিউ পেপারে যেখানে ২৫ টি আর্টিকেলের পরীক্ষা চালানো হয় সেখানে মাত্র ৩ টিতে দাবী করা হয়েছে যে হলুদ হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিন্তু, এর স্বপক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমাণের সংখ্যা কম এবং এর থেকে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে হলুদের সরাসরি যোগের প্রমাণ খুব স্পষ্ট নয়। হলুদে থাকে কারকিউমিন, এটি একটি কার্যকরী যৌগ যা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে পরিচিত এবং এর অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য আছে, যা কার্ডিওভাসকুলার সহ সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। তা সত্ত্বেও, হলুদ যে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে এর স্বপক্ষে যথেষ্ট পরিমাণে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। আর তাছাড়া, কতটা হলুদ খাওয়া যাবে সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ অতিরিক্ত হলুদ খেলে তা থেকে রক্তাল্পতা বেড়ে যেতে পারে এবং অ্যানিমিয়া হতে পারে, কারণ এতে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমিয়ে দেওয়ার বৈশিষ্ট্যও রয়েছে।
জেনারেল ফিজিশিয়ান ডাঃ কাশ্যপ দক্ষিনী এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন, “খুব অল্প প্রমাণ রয়েছে যেখানে দেখা গেছে হলুদ হয়ত ইন্টেসটাইন বা অন্ত্রের আয়রন বেশি করে শোষণ করতে সাহায্য করে, যেমন হেমোক্রোমাটোসিস, বা হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া, সিকেল সেল রোগের ক্ষেত্রে। এককভাবে হলুদ সরাসরি কোনভাবেই হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে পারে না। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে গেলে খাবারে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১২, ফলিক অ্যাসিড এবং প্রোটিনের পরিমাণও বাড়ানো প্রয়োজন। খাবার হিসেবে আয়রনের পরিমাণ বাড়াতে বিভিন্ন ধরণের বাদাম, বীজ, ফল, গাঢ় সবুজ শাক সবজি, শুঁটি জাতীয় দানা, শুকনো ফল, মাংস ইত্যাদি সাহায্য করে।
জেনারেল ফিজিশিয়ান, ডাঃ অতুল বশিষ্ঠ বলেছেন, “চিকিৎসাক্ষেত্রে আমার মতে হিমোগ্লোবিনের মাত্রায় হলুদের প্রত্যক্ষ প্রভাবকে সমর্থন করে এমন নির্ভরযোগ্য ত্বত্ত্ব নেই। যদিও হলুদের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য প্রমাণিত হয়েছে এবং এটি অন্ত্রের মাইক্রোফ্লোরা এবং পরজীবীকে প্রভাবিত করতে পারে, হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষণে আয়রন, ফলিক অ্যাসিড এবং মিথাইলকোবালামিনের মতো প্রয়োজনীয় উপাদান জড়িত। হলুদের অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মত কিছু গুণ পরোক্ষভাবে রক্তের ক্ষয় কমাতে পারে, সম্ভাব্য হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তবুও, এটা স্পষ্ট করা দরকার যে আমি হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর প্রাথমিক সমাধান হিসাবে হলুদকে সমর্থন করছি না।”
Disclaimer: Medical Science is an ever evolving field. We strive to keep this page updated. In case you notice any discrepancy in the content, please inform us at [email protected]. You can futher read our Correction Policy here. Never disregard professional medical advice or delay seeking medical treatment because of something you have read on or accessed through this website or it's social media channels. Read our Full Disclaimer Here for further information.