Last Updated on December 26, 2023 by Team THIP
সারমর্ম
একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে যে মানুষের মুখের চামড়ায় ফেভিকল দিয়ে বানানো ফেস মাস্ক লাগালে উপকার পাওয়া যায়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি যে এই দাবী ভুল।
দাবি
অবৈজ্ঞানিক, হাস্যকর এবং শরীরের পক্ষ্যে ক্ষতিকর বেশ কিছু স্বাস্থ্য জ্ঞান ইন্টারনেটে প্রচলিত আছে । তার মধ্যে একটি হলো ফেভিকল এর ফেস মাস্ক । বাজারে বহু নামি দামি কোম্পানির ফেস মাস্ক থাকা সত্ত্বেও কিছু লোক ফেভিকলকে রূপচর্চার কাজে লাগানোর উপদেশ দেন । ফর্সা হয় হেকে শুরু করে ব্ল্যাকহেডস কমিয়ে ফেলা পর্যন্ত্য বহু ভ্রান্তিকর কার্যকারিতা এর পক্ষ্যে যোগ করা হয় । এইরকমই একটি ইউটুব পোস্ট দেখা যাবে এখানে ।
সত্যানুন্ধান
ফেভিকল কি?
ফেভিকল হচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি পিডিলাইট ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেডের তৈরী একটি বহুল প্রচলিত আঠা। এর চমৎকার জুড়ে রাখার ক্ষমতার জন্য কাঠের কাজ, নির্মাণকাজ, বিভিন্ন রকম শিল্পের কাজ এবং বাড়ির কোন জিনিস মেরামতির কাজে ব্যাপকভাবে এর ব্যবহার করা হয়। কাঠ, প্লাইউড, ল্যামিনেট, কাগজ এবং চামড়ার কাজে জোড়ার ক্ষেত্রে এটি সবার কাছে বিশেষ ভাবে পরিচিত।
মুখে ফেভিকল লাগানো কি নিরাপদ এবং কার্যকরী?
ফেভিকল বা অন্য কোন আঠা মুখে লাগানো নিরাপদ এবং তা থেকে উপকার পাওয়া যায় কিনা তা নিয়ে কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। ফেভিকল চামড়ায় লাগানোর বিশেষ করে মুখের ত্বকে লাগানোর জন্য বানানো হয়নি। ফেভিকল মুখে লাগানো নিরাপদ নয়, কার্যকরীও নয়, এর থেকে ত্বকে জ্বালা যন্ত্রণা, ইনফ্ল্যামেশন, পুড়ে যাওয়া, লোমকুপের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ত্বকে ক্ষত তৈরী হওয়ার মত সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও, ফেভিকল লাগালে মুখের ত্বকের আগে থেকে কোন সমস্যা থাকলে তা বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া, আমরা এই যুক্তির স্বপক্ষে চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত কারোর কোন সুপারিশ বা পরামর্শ পাইনি।
ডার্মাটোলজিষ্ট, ডাঃ জ্যোতি কান্নানগাথ বলেছেন, “ফেভিকল বা অন্য কোনরকম আঠা মুখে লাগানো নিরাপদ নয়। ফেভিকল হচ্ছে সিন্থেটিক রেসিন আঠা। ত্বকে এটি লাগালে অনেক রকম বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং সেই সঙ্গে শারীরিক অনেক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। মুখের ত্বক খুব পাতলা ও সংবেদনশীল। আঠার মত রাসায়নিক জিনিসের ক্ষতিকর প্রভাব মুখের ত্বক কখনোই সহ্য করতে পারে না। এ থেকেই ত্বকে জ্বালাযন্ত্রণা, কেমিকেল বার্ণ বা রাসায়নিক জিনিসের থেকে পুড়ে যাওয়া এবং অ্যালার্জি হতে পারে। এছাড়াও, ফেভিকলের সংস্পর্শে চোখের ক্ষতি ও নিঃশ্বাসের ক্ষতি হতে পারে।“ এবিষয়ে আরো অনুসন্ধান চালিয়ে আমরা দেখেছি কিছু মানুষ তাদের মেকআপে স্পেশাল এফেক্টস দেওয়ার জন্য বা প্রস্থেটিক ব্যবহারের জন্য বিশেষ কিছু আঠা ব্যবহার করেন। তবে, এই বিশেষ আঠাগুলি ত্বকে ব্যবহারে জন্য তৈরী করা হয় এবং প্রসাধনে ব্যবহারে জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত। এইধরনের জিনিস সাধারণত নিরাপদ এবং ত্বকের পক্ষে সহনশীল। এছাড়াও, এগুলি কোন ক্ষতি না করে ত্বক থেকে তুলে ফেলা যায়। তাই, যদি এই কাজের উদ্দেশ্যে আঠাগুলি ব্যবহৃত হয় তবে তা বেছে নেওয়ার আগে অবশ্যই দেখে নিতে হবে যে সেগুলি চিকিৎসাগত দিক থেকে ত্বকের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কিনা।
কনসালটেন্ট ডার্মাটোলজিষ্ট ডাঃ সৌম্য সচদেবা, এগুলির ব্যবহার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন এবং বলেছেন, “দয়া করে মুখে ফেভিকল লাগাবেন না, সোশাল মিডিয়ার খুব ভুল ট্রেন্ড প্রচার করা হচ্ছে। ত্বকে এর ফল খারাপ হতে পারে এবং এর থেকে শুষ্কতা, লাল হয়ে যাওয়া, বা ত্বকের চামড়া উঠে যেতে পারে।“ এটাই প্রথমবার নয় যে আমরা এরকম অসামঞ্জস্যপূর্ণ দাবির সম্মুখীন হয়েছি যেখানে মানুষকে তাদের মুখে কিছু অননুমোদিত পণ্য ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং দাবী করা হয়েছে এর থেকে ত্বক ভালো হবে। আমরা এর আগে দেখেছি অনেক সোশাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে মেন্সট্রুয়াল(রজঃস্রাব) মাস্ক ত্বকের জন্য নিরাপদ ও কার্যকরী নতুন স্কিনকেয়ার ট্রেন্ড, যার অর্থ হল রজঃস্রাব বা মাসিকের রক্ত দিয়ে বানানো ফেস মাস্ক ত্বকের জন্য উপকারী। প্রচলিত কিছুর বাইরে যে কোন রকম জিনিস মুখে বা ত্বকে লাগানোর আগে ডার্মাটোলিষ্ট বা চিকিৎসাবিদ্যার সঙ্গে যুক্ত কারোর পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। তারা আপনাকে এসংক্রান্ত সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন এবং বিশেষ কোন সমস্যার জন্য নিরাপদ বিকল্প উপায়গুলির সন্ধান দিতে পারবেন। আপনার ত্বক ভালো রাখা ও সুরক্ষিত রাখা আপনার অগ্রাধিকার, তাই কোন সংশয় থাকলে পেশাদারী পরামর্শ নিন।
যে কোন রকম আঠা / ফেভিকল মুখে লাগালে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি কি কি হতে পারে?
যে কোন রকম আঠা মুখে লাগালে এর থেকে যেধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে তা হলঃ
- ত্বকের জ্বালাযন্ত্রণা এবং অ্যালার্জিঃ এতে কেমিক্যাল থাকে যার ফলে ত্বকে এধরনের জিনিস লাগালে এর থেকে জ্বালাযন্ত্রণা, লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি এবং অ্যালার্জি হতে পারে। এই ধরণের প্রতিক্রিয়া মৃদু থেকে গুরুতর দুধরনের হতে পারে, সেটা নির্ভর করে প্রত্যেক মানুষের ত্বকের বিশেষ সংবেদনশীলতার ওপর।
- ত্বকের ক্ষতিঃ যে ধরণের আঠা ত্বকে ব্যবহার করার জন্য তৈরী নয় তা ব্যবহার করলে ত্বক রুক্ষ হয়ে পড়তে পারে এবং এতে ত্বকের ক্ষতি হয়। এধরনের কিছু মুখে লাগালে তা থেকে শুষ্কতা, ত্বকের খোসা উঠে যাওয়া, এমনকি রাসায়নিকে পুড়ে যাওয়ার মত ক্ষতি হতে পারে।
- তুলে ফেলা সমস্যাজনকঃ এগুলিতে শক্ত করে ধরে রাখার মত ব্যাপার থাকে। তাই, ত্বক থেকে এগুলিকে সহজে তুলে ফেলা যায় না। জোর করে তুলতে চেষ্টা করলে তা থেকে ত্বকে ব্যথা হতে পারে ও ক্ষতি হতে পারে।
সংক্রমণের সম্ভাবনাঃমুখে আঠা লাগালে তা লোমকূপগুলিকে আটকে দেয়, এগুলির মধ্যে ময়লা, ব্যাকটেরিয়া ও ঘামও আটকে যায়। এর থেকে ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধি হতে পারে এবং তা থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে।
ডাঃ পারভেজ মাথারু, এমবিবিএস, এমডি (ডার্মাটোলজি) বিষয়টি সংক্ষেপে জানিয়ে বলেছেন, “এটা সত্যিকারের একটি
নির্বোধের মত বিষয় তবে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি মানুষ কিভাবে ব্ল্যাকহেড তোলার জন্য ফেভিকলকে নিজে করো উপায় হিসেবে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। আমরা অবশ্যই একে নিয়ে খেলার চেষ্টা করেছি এবং হাত থেকে তা তুলে ফেলার মজা উপভোগ করেছি কিন্তু দয়া করে ফেভিকল মুখে লাগাবেন না।
হ্যাঁ, এটা হয়তো ত্বকের পক্ষে বিষাক্ত নয় তবে প্রত্যেকের ত্বকে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে এবং ফেভিকল লাগালে তা থেকে অ্যালার্জি বা জ্বালাযন্ত্রণা থেকে শুরু করে ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, পুঁজ বেরনো, ফোসকা বা পিগমেন্টেশন পর্যন্ত হতে পারে। এটা ত্বক থেকে তুলে ফেলার সময় আপনি হয়ত ত্বকের কোন একটি স্তরকে তুলে ফেলতে পারেন এবং এর থেকে রক্তনালীগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই আপনি যদি ভ্যাম্পায়ারের মত লাল রাগী দেখতে না হতে চান তাহলে এধরনের কৌশল থেকে দূরে থাকুন।“ তাই, বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয় নিজে-তৈরী-করো এমন মাস্ক ব্যবহার করা ঠিক নয় কারণ তারা ভালোর চেয়ে ক্ষতি বেশি করতে পারে।
Disclaimer: Medical Science is an ever evolving field. We strive to keep this page updated. In case you notice any discrepancy in the content, please inform us at [email protected]. You can futher read our Correction Policy here. Never disregard professional medical advice or delay seeking medical treatment because of something you have read on or accessed through this website or it's social media channels. Read our Full Disclaimer Here for further information.