Last Updated on December 27, 2023 by Team THIP
সারমর্ম
একটি সোশাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে যে আদায় মাসল বা পেশী ও জয়েন্ট বা গাঁটের ব্যথা সারে। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল। এমনকি যদিও গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে আদা মাসল ও জয়েন্টে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, তবে আদার কার্যকারিতা বা সবচেয়ে বেশি কতটা খাওয়া উচিৎ যা নিরাপদ সেই সম্পর্কে কোন প্রমাণের কথা বলা নেই।
দাবি
সত্যানুন্ধান
আপনার খাবারে আদার ব্যবহার কি আপনাকে জয়েন্টের ব্যথা থেকে দূরে রাখবে?
কিছু ক্ষেত্রে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে আদা খেলে মাসল ও জয়েন্টের ব্যথা কমতে পারে। যদিও, প্রতি ক্ষেত্রেই আদা খেলে মাসল ও জয়েন্টের ব্যথা সেরে যায় বলে এমন কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। প্রায়শই এটা মনে করা হয় যে কিছু খাবারে মাসল ও জয়েন্টের ব্যথা সারে। থিপ মিডিয়া এর আগে আনারস থেকে জয়েন্টের ব্যথা সারে এই দাবীর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জানিয়েছে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে শুধুমাত্র খাবারের ওপর নির্ভর করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক।
আদার বিষয়ে আসা যাক, গবেষণায় যা জানা গেছে আদা জয়েন্টের ব্যথা আটকাতে পারে। কিন্তু শরীর স্বাস্থ্যের যে কোন অবস্থায় আদা জয়েন্টের ব্যথা সারিয়ে ফেলতে পারে এমন কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
২০০০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানা গেছে খুব সামান্য সংখ্যক নমুনায় আদার রস ব্যথা কমাতে আইবুপ্রফেনের মতই কার্যকর। ২০১৬ য় প্রকাশিত অন্য এক গবেষণাপত্রে জানা গেছে আদার সাপ্লিমেন্টগুলি হাঁটুর সার্জারির পর ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
২০০১ এ প্রাকাশিত গবেষণাপত্রে জানা গেছে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসে বেশি মাত্রায় আদার রস খেলে উপকার হয়। ২০০২ সালে ইঁদুরের ওপর করা একটি প্রানী গবেষণায় জানা গেছে আদা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে জয়েন্টের ব্যথায় উপকার দেয়।
২০১০ প্রকাশিত আরো এক গবেষণায় জানা গেছে ব্যায়ামের কারণে যদি জয়েন্টে ব্যথা হয় সেক্ষেত্রে আদা খেলে উপকার পাওয়া যায়। এমনকি ২০১৫ য় প্রকাশিত গবেষণাতেও জানা গেছে হাঁটুর অস্টিওআর্থারাইটিসে আদার সাময়িক ব্যবহার কাজে লাগতে পারে।
আমাদের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ কামনা চৌহান জানিয়েছেন, “হ্যাঁ, আপনার খাবারে আদার ব্যবহার জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আমাদের গ্রহের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর মশলা হল আদা। এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ ও বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ রয়েছে যা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব উপকারী। আদার মধ্যে ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি৬ এর মতো পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা জয়েন্টের সুস্থভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। সেইসঙ্গে আদা জয়েন্টের ব্যথা কমাতেও পারে। আদার মধ্যে থাকা জিঞ্জেরল, শাগাওল এবং জিঞ্জেরন ফোলাভাব ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, এমনকি আদার মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্রি র্যাডিক্যালসের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে এবং জয়েন্টের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
কিন্তু বেশ কিছু রোগের কারণে যে ব্যথা হয় যেমন অ্যাডাল্ট স্টিলস ডিজিজ, অ্যাঙ্কাইলুজিং স্পন্ডিলাইটিস, অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস, হাড়ের ক্যান্সার, ভাঙা হাড়, বারসাইটিস, কমপ্লেক্স রিজিওনাল পেন সিন্ড্রোম, ফাইব্রোমায়ালজিয়া, গনোকক্কাল আর্থ্রাইটিস, গাউট, হাইপোথাইরয়েডিজম, জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থারাইটিস, লিউকেমিয়া, লুপাস, লাইম ডিজিজ, অস্টিওআর্থারাইটিস, অস্টিওমাইলাইটিস, পেগেট ডিজিজ অফ বোন, পলিমালজিয়া রিউম্যাটিকা, সিউডোগআউট, সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস, রিঅ্যাকটিভ আর্থ্রাইটিস, রিউম্যাটিক ফিভার, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, রিকেটস, সারকোইডোসিস, সেপটিক আর্থ্রাইটিস, মচকে যাওয়া, টেন্ডিনাইটিস ইত্যাদি, এগুলিতে আদা ব্যথা সারাতে পারে কিনা তার কোন প্রমাণ নেই।
অনেকের জন্য আর্থ্রাইটিসে আদা উপকারী হতে পারে। আদা খেলে উপসর্গ কমতে পারে ও এতে ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে পারে। তবে আদার এই ব্যবহারের আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। ডাক্তারই বলবেন আপনি যেসব ওষুধ খাচ্ছেন তার সঙ্গে আদা খাওয়া যাবে কিনা। যদিও, এখনো পর্যন্ত যেসব বৈজ্ঞানিক তথ্য মিলেছে তা থেকে মনে করা হচ্ছে কোন রাসায়নিক থেকে ব্যথা কমে তা বুঝতে আরো বেশি সংখ্যায় মানুষের ওপর এর প্রয়োগ প্রয়োজন। আমরা এও জানি না কার্যকারিতার দিক থেকে ও সর্বোচ্চ কতটা পরিমাণ আদা খাওয়া নিরাপদ। এছাড়াও, অনেক দিনের হাড়ের রোগে এর কি খারাপ প্রভাব পড়তে পারে তা পর্যবেক্ষণের জন্য আরো বেশি সংখ্যায় মানুষের ওপর এর প্রয়োগ প্রয়োজন। এছাড়াও, দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার জন্য কতটা পরিমাণ আদা খাওয়া প্রয়োজন তার কোন প্রমাণ আমরা পাইনি।
পুষ্টিবিদ প্রিয়াঙ্কা বলেছেন, “হ্যাঁ, আদায় প্রচুর পরিমাণে এমন উপাদান রয়েছে যেমন জিঞ্জারল যার প্রদাহ রোধকারী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই আদা মাসল ও জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু মাসল ও জয়েন্টের ব্যথা সারাতে শুধুমাত্র আদার ওপর ভরসা করা ঠিক নয়। আপনাকে মাসলের ব্যথার কারণ যেমন মাসলের পরিমাণ কম বা ভিটামিন D কম ইত্যাদি বিষয় আছে কিনা তা জানতে হবে।“
মাসল ও জয়েন্টের ব্যথা সারাতে ঘরোয়া উপায়ের সাহায্য নেওয়া এবং ডাক্তারের পারামর্শ না নেওয়ার কী বিপদ হতে পারে?
অনেক মানুষের কাছেই মাসল ও জয়েন্টের ব্যথা খুব কষ্ট দেয় ও এর থেকে আরো অনেক সমস্যা তৈরী হতে পারে। এটা প্রমাণিত যে, খুব বেশি মাত্রায় আদা খেলে গ্যাস্ট্রাইটিস, পেট খারাপ, ডায়রিয়া, মুখে জ্বালাভাব ও অম্বল হতে পারে। এই সমস্ত রোগ নির্ণয় বা ডায়গনোসিস ঠিক মত না করা গেলে খুব সমস্যা হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে ঘরোয়া উপায় চালিয়ে যাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
কোন খাবার বা ডায়েট কি হাড়কে পুরোপুরি ভালো রাখতে পারে?
কিছু মাত্রায় পারে। আপনার প্রত্যেকদিনের শরীরের পুষ্টির জন্য সুষম খাবার খাওয়া জরুরী। যদিও আপনার যদি শারীরিক ভাবে কোন সমস্যা থাকে, চিকিৎসা হিসেবে শুধুমাত্র কোন একটি খাবারের ওপর নির্ভর করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। এর কারণ হল খাবার কিন্তু আপনার বোন মাস বা হাড়ের ভেতরের অংশের জন্য জন্য ততটা উপযোগী নয় যতটা ওষুধ করতে পারে।
অর্থোপেডিক সার্জন, ডঃ সারাংশ গুপ্তা জানিয়েছেন, ”৩০ বছর বয়েসে পৌঁছলে আমাদের বোন মাসের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যাই। এই সময় বোন মাস যদি ঠিক মতো না থাকে তবে পরবর্তী কালে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। দুর্বল হাড় থেকে অস্টিওপোরেসিস হতে পারে। সৌভাগ্যের কথা পুষ্টি ও জীবনযাত্রার ধরণ বয়েসের সাথে সাথে হাড়কে শক্ত করতে সাহায্য করে ও তা বজায় রাখে। বোন মাস কে ঠিক রাখতে ভালো খাবার খাওয়া ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা লাইফস্টাইল বজায় রাখা খুব জরুরী। অ্যালকোহল বা কার্বোনেটেড সফট ড্রিঙ্ক এবং বেশি নুন যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা সাহায্য করতে পারে।“
Disclaimer: Medical Science is an ever evolving field. We strive to keep this page updated. In case you notice any discrepancy in the content, please inform us at [email protected]. You can futher read our Correction Policy here. Never disregard professional medical advice or delay seeking medical treatment because of something you have read on or accessed through this website or it's social media channels. Read our Full Disclaimer Here for further information.