আদা, নুন ও লেবুর মিশ্রণ কী দাঁত সাদা করতে পারে?

Last Updated on December 27, 2023 by Team THIP

দাঁত সাদা করার উদ্দেশ্য কী?

‘দাঁত সাদা করা’ হচ্ছে একজন মানুষের স্বাভাবিকভাবে দাঁত সাদা করা ও চকচকে ভাব আনার জন্য বিভিন্নরকম চিকিৎসা পদ্ধতিকে বোঝায়। এটি মূলত একটি প্রসাধনী পদ্ধতি যা কারো হাসিকে সুন্দর করার জন্য ব্লিচিং এজেন্ট এবং হাইড্রোজেন পারক্সাইডযুক্ত দাঁতের পণ্য ব্যবহার করা হয়। তবে এটা অস্বীকার করা যায় না যে এই পদ্ধতিগুলি শুধুমাত্র দাঁতের বাইরের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। পরিবেশ ও অন্যান্য কিছু বস্তুর জন্য এই বাইরের দাগগুলি আপনার দাঁতের এনামেলকে বিবর্ণ করে তোলে। ধূমপান, কফি ও কৃত্রিম কোন খাবারের রঙ থেকে এইধরণের দাগ হতে পারে।

উল্লেখ্য, দাঁতের এনামেলের ভেতরের দাগগুলোকে অভ্যন্তরীণ দাগ বলা হয়। সাধারণত, শিশুদের মাড়ি থেকে দাঁত বের হওয়ার আগে এই ধরনের দাগ মাঝে মাঝে দেখা যায়।

নুন, লেবু আর আদা মিশ্রিত পেষ্ট কি দাঁত সাদা করতে পারে?

না, সেভাবে নয়। এটি লক্ষনীয় যে পেশাদারী দাঁত সাদা করার পদ্ধতিগুলি ঘষে তুলে ফেলা, এই জন্যই বাড়িতে দাঁত সাদা করার পদ্ধতিগুলি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যদিও, এমন কোন চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি যা থেকে বলা যায়, টুথপেস্ট ছাড়াও নুন, আদা এবং লেবু দিয়ে তৈরি ঘরে বানানো পেস্ট দিয়ে ব্রাশ করলে দাঁত সাদা হয়।

লেবুর রস খুব শক্তিশালী ঘরোয়া ব্লিচিং উপাদান এবং যাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। অন্যদিকে খুব বেশি পরিমাণে লেবুর রসের ব্যবহারে দাঁতের এনামেল যা দাঁতের রোগ থেকে রক্ষা করে তা ক্ষয়ে যেতে পারে। এটা মনে রাখা দরকার আপনার দাঁতের এনামেল কিন্তু আবার তৈরী হতে পারে না। এর ফলে, নিয়মিত লেবুর রসের ব্যবহারে দাঁত সাদা করার বিষয়ে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে আদার মধ্যে পুষ্টি ও ওষধিগুণ রয়েছে। রাইজোমের এসেনশিয়াল তেলগুলির জন্য এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর ফলে, বহুগুণের এই ভেষজটি মুখের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে ও মাড়ির রোগের জন্য ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। যদিও, এটা একটি নিরাপদ বিকল্প। তবে, দাঁত সাদা করার একটি ঘরোয়া উপায় হিসাবে আদার রসের ব্যবহারের স্বপক্ষে খুব বেশি প্রমাণ নেই।

সবশেষে বলা যায়, দাঁতে প্লাক তৈরী রোধ করতে এবং মুখের ভেতরের স্বাস্থ্যবিধি ঠিক রাখতে সেই সঙ্গে মুখে আলসার হলে মুখ ধুতে ও ব্যথা উপশমকারী হিসেবে নুন বা সোডিয়াম ক্লোরাইড হল বহুমুখী চিকিৎসার একটি উপাদান যাকে সহজেই টুথপেষ্টের সঙ্গে ব্যবহার করা যায়। তবে নুনের মধ্যে যে ক্ষয় হওয়ার বৈশিষ্ট্য আছে তার জন্য বাড়িতে তৈরী পেস্ট হিসেবে এর নিয়মিত ব্যবহার ক্ষতিকারক হতে পারে।

ডাঃ পুজা ভরদ্বাজ (বিডিএস), আমাদের দাঁতের বিশেষজ্ঞকে  দাঁত সাদা করার উপায় নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি জানান আদার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারি বৈশিষ্ট্যগুলো মাড়ি ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও, নুন লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে, যার একটি অ্যাসিডিক পিএইচ আছে, যা ক্লোরাইড অ্যাটম এবং হাইড্রোনিয়াম আয়নের বিচ্ছেদ ঘটায়। এই প্রতিক্রিয়ার এধরণের পরিবর্তনের ফলে পিএইচ আরও অ্যাসিডিক হয়ে যায়, যা শেষ পর্যন্ত দাঁতের এনামেলকে ক্ষয় করতে শুরু করে। এরকম হলে দাঁত দুর্বল হয়ে যায় ও কেরিস বা পোকা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়। অনুগ্রহ করে মনে রাখুন দাঁত সাদা করার জন্য বাড়িতে তৈরি এই পেস্ট যা টুথপেস্ট, আদা, নুন এবং লেবুর মিশ্রণে বানানো হয় তা আসলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি করতে পারে বেশি কারণ যেহেতু এর কোন নির্দিষ্ট ডোজ নেই, এই উপাদানগুলি ঘষে তুলে ফেলার কাজ করে বা অ্যাসিডিক হতে পারে এবং সেগুলি তাই শেষ পর্যন্ত দাঁতের সংবেদনশীলতা বা এনামেলের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এছাড়াও, এই মিশ্রণ দিয়ে সাদা করার কোন গ্যারান্টি বা নিশ্চিত প্রমাণ নেই।

সদ্য সাদা করা দাঁতে আবার দাগ পড়া থেকে কীভাবে আটকান যায়?

দাঁত সাদা করার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পরে, একটি সুন্দর হাসি ধরে রাখতে এবং বজায় রাখতে সাহায্য করার জন্য আপনি কিছু ব্যবস্থা নিতে পারেন। এরমধ্যে বেশীর ভাগই হল মুখের ভেতরের স্বাস্থ্যবিধি ভালোভাবে মেনে চলা যেমন নিয়মিত ব্রাশ করা, ফ্লস করা এবং এমন খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলা যাতে সাদা করা দাঁত গুলোতে দাগ ধরতে পারে। এছাড়াও, কিছু খাবার যা আপনার দাঁতের ওপরের অংশকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করতে পারে এবং মুখের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতেও সাহায্য করে। প্রাকৃতিকভাবে দাঁত পরিষ্কার রাখতে নাশপাতি, আপেল, সেলারি, শসা এবং ফুলকপি খেতে পারেন। এর পাশাপাশি ধূমপান এবং তামাক চেবানো এড়িয়ে চলাই উচিৎ।

থিপ মিডিয়া টেকঃ যেহেতু দাঁত সাদা করা একটি প্রসাধনী বা কসমেটিক প্রক্রিয়া, তাই প্রাকৃতিক প্রদাহ রোধকারী আদা, ঘষে তোলার বৈশিষ্ট্যের নুন ও অম্ল ধর্মী বা অ্যাসিডিক লেবুর রস দিয়ে বানানো ঘরোয়া পেস্টের ওপর নির্ভর করা বিপজ্জনক। কারণ এগুলি খুব পরিচিত দাঁত সাদা করার জিনিস নয় এবং পেশাদার দাঁতের ডাক্তার দিয়ে করানো দাঁত সাদা করার জায়গা নিতে পারে না। এছাড়াও এই ওষুধগুলোর সঠিক মাত্রায় কাজ করার প্রমাণ না থাকায় সেগুলি প্রতিদিন ব্যবহারের ফলে দাঁতের সংবেদনশীলতা এবং এনামেল ক্ষয় হতে পারে। তাই, আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে এই দাবী অনেকাংশে ভুল।

Disclaimer: Medical Science is an ever evolving field. We strive to keep this page updated. In case you notice any discrepancy in the content, please inform us at [email protected]. You can futher read our Correction Policy here. Never disregard professional medical advice or delay seeking medical treatment because of something you have read on or accessed through this website or it's social media channels. Read our Full Disclaimer Here for further information.