সারমর্ম
একটি সোশাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে যে ফ্ল্যাক্সসিডস কনস্টিপেশনকে স্বাভাবিক উপায়ে সারিয়ে তুলতে পারে। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি যে এই দাবী অর্ধ-সত্য।

দাবি
কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশন একটি শারীরিক রোগ । ইন্টারনেটে বেশ কিছু পোস্ট এই রজার ঘরোয়া পদ্ধতি তে উপায়ের পরামর্শ দিয়ে থাকে ।
সেরকমই একটি পরামর্শ হলো ফ্লাক্সসিড খেয়ে কনস্টিপেশন ঠিক করার । এরকম একটি পোস্ট এখানে দেখা যাবে ।
সত্যানুন্ধান
ফ্ল্যাক্সসিডস কি জিনিস?
ফ্ল্যাক্সসিড একটি ফাইবার বা আঁশযুক্ত ফসল এবং আলফা-লিনোলিক অ্যাসিড ছাড়াও এটি ডায়েটারি ফাইবার এবং ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি ভাল উৎস। ফ্ল্যাক্সসিডে লিগনান নামে ফাইটোস্ট্রোজেনও থাকে। নিয়মিত ফ্ল্যাক্সসিড খেলে মানুষের খিদে কমে যায়। একটি খাবার থেকে শরীর কতটা কোলেস্টোরেল শুষে নিতে পারে তা নিয়ন্ত্রণ করতেও এটি সাহায্য করতে পারে।
খাবারের মাধ্যমে কী কনস্টিপেশন দূর করা যায়?
কিছু পরিমাণে করা যায়। কনস্টিপেশন নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করতে ডায়েট বা খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে কিন্তু এই সমস্যা সম্পূর্ণভাবে সারিয়ে তুলতে পারে না। এরকম প্রমাণ পাওয়া গেছে যেখানে একটি স্বাস্থ্যকর এবং ফাইবারযুক্ত খাবার বাওয়েল মুভমেন্টকে নিয়মিতভাবে ঠিক রাখতে পারে এবং অনেকের ক্ষেত্রে কনস্টিপেশনের উপসর্গগুলি দূর করতে পারে। ফল, শাকসবজি এবং গোটা শস্যের মতো খাবার খাওয়া এবং প্রচুর জল খাওয়ার মাধ্যমে স্টুল বা মল নরম থাকে ও বাওয়েল মুভমেন্টও নিয়মিতভাবে ঠিক থাকে।
তবে, এটা মনে রাখা জরুরী যে কনস্টিপেশনের বিভিন্ন অন্তর্নিহিত কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে কিছু শারীরিক অবস্থা, ওষুধ বা লাইফস্টাইলের মত বিষয়। কিছু ক্ষেত্রে, দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর কনস্টিপেশন পুরোপুরি সারিয়ে তোলার জন্য শুধুমাত্র খাবারের পরিবর্তন যথেষ্ট নাও হতে পারে। সঠিক সমস্যা নির্ণয়ের জন্য স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত একজন পেশাদারের সাথে পরামর্শ করার এবং আপনার নির্দিষ্ট পরিস্থিতির জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা উচিৎ।
ফ্ল্যাক্সসিডস কী কনস্টিপেশন স্বাভাবিক উপায়ে সারিয়ে তুলতে পারে?
কিছু ক্ষেত্রে সম্ভব। ফ্লাক্সসিডসে ফাইবার রয়েছে, যে থেকে কনস্টিপেশনের সমস্যার আরাম হতে পারে। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিনের খাবারে একে রাখা যেতে পারে। তবে, এই ধরণের অবস্থায় ফ্ল্যাক্সসিডসের কার্যকারিতা নিয়ে খুব কম সংখ্যক গবেষণা রয়েছে। এছাড়াও, যেসব প্রমাণ পাওয়া গেছে তা নিশ্চিত করে না যে ব্যায়ামের অভাব, ওপিওডস, নিয়মিত কিছু ওষুধের প্রভাব, ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম, ল্যাক্সেটিভের অপব্যবহার এবং জীবনে বা রুটিনে পরিবর্তনের কারণে যে কনস্টিপেশনের সমস্যা হয় তা থেকে শুধুমাত্র ফ্ল্যাক্সসিডই উপকার করে।
ডাঃ শরদ মালহোত্রা, দিল্লির দ্বারকার আকাশ হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি হেপাটোলজি এবং থেরাপিউটিক এন্ডোস্কোপির সিনিয়র কনসালটেন্ট এবং এইচওডি এবিষয়ে জানিয়েছেন, “ইনটেস্টাইন বা অন্ত্রে খাবারের চলাচল বিভিন্ন কারণের দ্বারা প্রভাবিত হয়, যার মধ্যে রয়েছে খাবারের ধরন, জল খাওয়া, ডায়াবেটিসের মতো রোগ এবং দেশীয় ওষুধ সহ কিছু ওষুধের প্রভাব। সমাধানযোগ্য সমস্যাগুলোকে খুঁজে বের করা ও তার চিকিৎসা করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। লাইফস্টাইলকে ভালো করা যেমন সঠিক খাবার খাওয়া, বায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। একটা নির্দিষ্ট সময়েই পেট পরিষ্কার করতে হবে এরকম ভুল ধারণা ও ল্যাক্সেটিভের অপব্যবহার স্বাস্থ্যের পক্ষের ভালো নাও হতে পারে। প্রতিটি মানুষের পরিস্থিতি আলাদা আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত কারণ এর কোনও সর্বজনীন সমাধান নেই। কিছু মানুষ এসব ব্যবহারের পর ক্র্যাম্প অনুভব করেন। আপনার শারীরিক সুস্থতা ও হজম ভালো রাখার ওপর নজর দিন।“
ডাঃ মালহোত্রা আরো জানান, “নির্দিষ্ট কিছু গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যার জন্য বেশ কিছু কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকারের উপায় রয়েছে। তবুও, এটা স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে এই সমস্যার কোন সর্বজনীন প্রতিকার নেই। তাই, ব্যবহারের আগে প্রতিকারের উপায়গুলির মূল্যায়ন করা এবং বুঝে নেওয়া জরুরী।
ঘরোয়া প্রতিকারের উপায়ের মাধ্যমে কনস্টিপেশন সারানোর চেষ্টা করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ না নেওয়ার বিপদ কী হতে পারে?
যদিও ঘরোয়া উপায়গুলি থেকে হালকা কনস্টিপেশনের ক্ষেত্রে সাহায্য হতে পারে, তবে ডাক্তারী পরামর্শ না নিয়ে শুধুমাত্র তাদের উপর নির্ভর করায় কিছু সম্ভাব্য বিপদ রয়েছে। এগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
১। সমস্যা নির্ণয়ে দেরি হওয়া –
কন্সটিপেশন হয়তো এমন কোন উপসর্গ যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিশেষ কোন শারীরিক সমস্যা যার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন। শুধুমাত্র ঘরোয়া উপায়ের ওপর নির্ভর করে আপনি শরীরের ভেতরের কোন বিশেষ সমস্যা যার চিকিৎসা প্রয়োজন তা নির্ণয়ে দেরি করতে বা নির্ণয় না করে সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারেন।
২। গুরুতর সমস্যাকে আড়াল করা –
ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী অথবা ক্রমাগত কনস্টিপেশন কখনো কখনো শরীরের ভেতরের আরো গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে, যেমন বাওয়েল অবস্ট্রাকশন, কোলরেক্টাল ক্যানসার বা স্নায়বিক রোগ। ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করা এই অবস্থাগুলিকে আড়াল করতে পারে, যার সময় মতো রোগ নির্ণয় এবং তা সারিয়ে তুলতে উপযুক্ত চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
৩। কার্যকারিতার অভাব –
কনস্টিপেশনের সমস্ত ক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায়গুলি কার্যকর নাও হতে পারে, বিশেষ করে শরীরের ভেতরে যদি এমন সমস্যা থাকে যার চিকিৎসার বিশেষ প্রয়োজন। শুধুমাত্র ঘরোয়া উপায়ের উপর নির্ভর করে সঠিক চিকিৎসা পেতে দেরি করা অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং আরও জটিলতা তৈরী করতে পারে।
৪। অনিচ্ছাকৃত পার্শপ্রতিক্রিয়া বা সাইডএফেক্টস – কিছু ঘরোয়া উপায় বা দোকান থেকে কেনা ল্যাক্সেটিভের সাইডেফেক্টস থাকতে পারে বা আপনি যা ওষুধ খান তার সঙ্গে যোগ থাকতে পারে। পেশাদার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া, আপনি এর সম্ভাব্য ঝুঁকি বা সঠিক ডোজ সম্পর্কে
সচেতন নাও থাকতে পারেন, এতে আপনার শরীরের ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
৫। উপসর্গ বেড়ে যাওয়া –
কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই কনস্টিপেশনের চিকিৎসার চেষ্টা করা অসাবধানতায় অবস্থার অবনতি ঘটাতে পারে। ল্যাক্সেটিভ বা এনিমার অনুপযুক্ত বা অতিরিক্ত ব্যবহার, উদাহরণস্বরূপ, এগুলির ওপর নির্ভরতা, ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া, ডিহাইড্রেশন বা কোলনের ক্ষতি হতে পারে।
Disclaimer: Medical Science is an ever evolving field. We strive to keep this page updated. In case you notice any discrepancy in the content, please inform us at [email protected]. You can futher read our Correction Policy here. Never disregard professional medical advice or delay seeking medical treatment because of something you have read on or accessed through this website or it's social media channels. Read our Full Disclaimer Here for further information.