একটি সোশাল মিডিয়া পোষ্টে দাবি করা হয়েছে যে হেয়ার ডাই ক্যান্সারের কারণ। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জানাচ্ছি এই দাবিটি অর্ধসত্য। এই ব্যাপারে বেশ কিছু পরস্পর বিরোধী রিসার্চ আছে এবং এখনো এই ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই ।

দাবি
চুলে রং করলে তা থেকে ক্যান্সার হতে পারে – এই নিয়ে চিন্তাজনক দাবি ইন্টারনেটের বহু জায়গায় প্রকাশিত আছে । একটি ইউটুব পোস্ট আরো এক ধাপ এগিয়ে দাবি করে – “বছরে ৬ বারের অধিক চুল রং করলে ক্যান্সার হতে পারে!” সেই পোস্ট টি দেখা যাবে এখানে ।
সত্যানুন্ধান
কীভাবে প্রসাধনী নিয়ন্ত্রিত হয়?
প্রসাধন সামগ্রীকে বেশ কিছু নিয়মকানুনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। ইউএসএ-তে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) হেয়ার ডাই সহ প্রসাধন সামগ্রী কতটা নিরাপদ তা পরীক্ষা করে এবং যদি দেখা যায় কোন প্রসাধন নিয়ম ভঙ্গ করেছে তাহলে সেই কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ভারতে, সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অরগানাইজেশন (সিডিএসসিও) ১৯৪০ এর ওষুধ ও প্রসাধনী আইন ও ২০২০-র প্রসাধনী আইন অনুসারে এই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সিডিএসসিও হল প্রসাধন শিল্পের প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল (ভারত) কেন্দ্রীয় লাইসেন্সিং অথরিটি আমদানি বা ইমপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেয় এবং প্রসাধন সামগ্রীর আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে।
হেয়ার ডাই কি ক্যান্সারের কারণ হতে পারে?
না, এবিষয়ে কোন চূড়ান্ত গবেষণাভিত্তিক প্রমাণ নেই। বর্তমানে যে গবেষণার ফলাফল রয়েছে তা পরস্পর বিরোধী।
১৯৯৩ তে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর ক্যান্সার রিসার্চ (IARC) এই সিদ্ধান্তে পৌঁছয় যে ব্যক্তিগত ব্যবহারের হেয়ার ডাইএর মধ্যে ক্যানসার হওয়ার লক্ষণ বা কার্সিনোজেনিসিটি পরীক্ষার জন্য প্রমাণগুলি যথেষ্ট ছিল না।
আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে তারা ব্যক্তিগত ব্যবহারের হেয়ার ডাই এবং ক্যানসারের ঝুঁকির মধ্যে কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাননি তবে গবেষকরা জানিয়েছেন “ বহু দিন ধরে(২০ বছর) হেয়ার ডাই ব্যবহার করেছেন এমন অনেকের মধ্যে ওভারিয়ান ক্যানসারের বিশেষভাবে বেড়েছে তা লক্ষ্য করা গেছে, তবে এই ফলাফল খুব কম সংখ্যক কেসের ওপর ভিত্তি করে পাওয়া গেছে।
আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি জানিয়েছে, ”এনটিপি (ন্যাশনাল টক্সিকোলজি প্রোগ্রাম) হেয়ার ডাই-এর সংস্পর্শে ক্যানসারের সম্ভাবনাকে তালিকাভুক্ত করেনি। যদিও এতে হেয়ার ডাই এ থাকা কিছু কেমিক্যালের কথা বলা হয়েছে “যেগুলিকে মানুষের ক্ষেত্রে কার্সিনোজেন হিসেবে চিহ্নিত করা যুক্তিসঙ্গত।“হার্ভার্ড হেলথ জানিয়েছে, ”হেয়ার স্টাইলিস্টদের হেয়ার ডাই-নিয়ে কাজ করার পেশাগত দিকটিকে সম্ভবত ক্যানসারের কারণ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।
তবে, এটি অস্পষ্ট রয়ে গেছে যে স্থায়ী চুলের রং এর ব্যক্তিগত ব্যবহার ক্যানসার বা ক্যানসার-সম্পর্কিত মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায় কিনা।“ বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল চূড়ান্ত নয়। এগুলিতে আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ”পরস্পরবিরোধী ফলাফলের জন্য গবেষণাগুলির ত্রুটির উল্লেখ করে এর কারণ হিসেবে কম সংখ্যক মানুষদের নিয়ে গবেষণা, কম সময় ধরে গবেষণা, ব্যবহারের (পেশাগত বা ব্যক্তিগত) শ্রেণীবিভাগ সঠিক নয় অথবা হেয়ার ডাই-এর ধরণ (স্থায়ী বনাম অস্থায়ী) এবং স্থায়ী হেয়ার ডাই ব্যবহারের বাইরে ক্যানসার-নির্দিষ্ট ঝুঁকির কারণগুলির অসম্পূর্ণ হিসাব-নিকাশের কথা বলা হয়েছে।“
কনসালটেন্ট ডার্মাটোলজিষ্ট ডাঃ জ্যোতি কান্নানগাথ এ বিষয়ে আরো জানিয়েছেন, “হেয়ার ডাইগুলিতে প্রায় ৫,০০০ এরও বেশি বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে কয়েকটিকে প্রাণীদের ক্ষেত্রে কার্সিনোজেনিক (ক্যানসার সৃষ্টিকারী) বলে জানা গেছে। আগেকার হেয়ার ডাইগুলির ফর্মুলায় অ্যারোমাটিক আম্যাইন সহ যে সমস্ত কেমিকেল পাওয়া যায় সেগুলি প্রানীদের ক্ষেত্রে ক্যানসার সৃষ্টিকারী। ১৯৭০ এর মধ্যবর্তী সময়ে যদিও প্রস্তুতকারকরা ডাইগুলিতে এই কেমিকেলগুলি সরিয়ে ফেলে কিছু উপাদানের পরিবর্তন করে। কিন্তু এখনও হেয়ার ডাই গুলিতে ব্যবহৃত বেশ কিছু কেমিকেল ক্যানসারের কারণ হতে পারে কিনা তা জানা যায়নি।
যদিও কিছু গবেষণায় হেয়ার ডাই এর ব্যক্তিগত ব্যবহারকে নির্দিষ্ট ক্যানসারের ঝুঁকির সাথে যুক্ত করা হয়েছে, অন্যান্য গবেষণায় তা করা হয়নি। স্তন ও ব্লাডার ক্যানসারের গবেষণাতেও পরস্পর বিরোধী ফল পাওয়া গেছে। অন্যান্য ক্যানসারের ঝুঁকির সাথে হেয়ার ডাই ব্যবহারের সম্পর্ক নিয়ে তুলনামূলকভাবে কয়েকটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। আমরা শেষে বলতে পারি যে হেয়ার ডাই এর ব্যক্তিগত ব্যবহার মানুষের জন্য এর কার্সিনোজেনিসিটি বা ক্যানসার নির্দিষ্টকারী হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যায় না। আরো বলা যায়, যারা ব্যবহার করেন তাদের থেকে হেয়ার ড্রেসাররা যারা এই পণ্যগুলি সংস্পর্ষে অনেক বেশী থাকেন তাদের ঝুঁকি বেশী।“ পরিশেষে বলা যায়, বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল এখনো সম্পূর্ণ নয়। ক্যানসারের ঝুঁকি ব্যবহারের সময়কাল এবং নির্দিষ্ট জেনেটিক পলিমারফিজম দ্বারা প্রভাবিত হয় বলে মনে করা হয়। প্রত্যেকেই যারা হেয়ার ডাই ব্যবহার করেন তাদের সবার ক্যনসার হয় না। কিছু ক্ষেত্রে এরকম দেখা গেছে কিন্তু সেখানে সময়, সময়কাল, ব্যবহারের মধ্যেকার ব্যবধান ও কি ধরণের হেয়ার ডাই ব্যবহার করা হয়েছে তা বিবেচনা করা প্রয়োজন। এর বংশগত দিক থেকে সংবেদনশীলতা মূল্যায়ন করতে জোরালো ভাবে জিন এবং পরিবেশের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টি অবশ্যই গবেষণায় রাখা উচিত। সুতরাং, চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে আসার জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে।
Disclaimer: Medical Science is an ever evolving field. We strive to keep this page updated. In case you notice any discrepancy in the content, please inform us at [email protected]. You can futher read our Correction Policy here. Never disregard professional medical advice or delay seeking medical treatment because of something you have read on or accessed through this website or it's social media channels. Read our Full Disclaimer Here for further information.